হানিফ উল্লাহ আকাশ, নেত্রকোনা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৪ মার্চ ২০২৪, ০৩:০৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

নেত্রকোনায় চাল কুমড়ার বাম্পার ফলন

নেত্রকোনায় এবার চাল কুমড়ার বাম্পার ফলন। ছবি : কালবেলা
নেত্রকোনায় এবার চাল কুমড়ার বাম্পার ফলন। ছবি : কালবেলা

নেত্রকোনায় এবার চাল কুমড়ার বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকের চোখে মুখে হাসির ঝিলিক দেখা দিয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, নেত্রকোনায় নানাবিদ কারণে শত শত হেক্টর জমি অনাবাদী বা পড়া থাকত। ‘এক ইঞ্চি জমিও পতিত রাখা যাবে না’, প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণা, কৃষি বিভাগের নানা রকম প্রচার-প্রচারণা, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনী, যান্ত্রিকীকরণ, প্রণোদনা, কৃষি খাতে বিপ্লব এবং সময়ে চাহিদা পূরণে কৃষকরা অনাবাদী পতিত জমি চাষাবাদে ক্রমেই উৎসাহিত হয়ে উঠছে।

গত কয়েক বছরের প্রচেষ্টায় নেত্রকোনার ২ হাজার ৯৫৫ হেক্টর অনাবাদি জমি চাষাবাদের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। চলতি রবি মৌসুমে নেত্রকোনা জেলায় ২ শত ৬৫ হেক্টর জমিতে চাল কুমড়ার আবাদ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় জেলায় এ বছর চাল কুমড়ার বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারমূল্য ভালো পাওয়ায় চাষিরাও বেশ খুশি। কীটনাশকমুক্ত এই চাল কুমড়া স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে প্রতিদিন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে।

স্থানীয় কৃষি বিভাগ আশা করছে, জেলায় এ বছর আনুমানিক সাড়ে ৬ হাজার টন চাল কুমড়া উৎপাদিত হবে। যার আনুমানিক বাজারমূল্য ২৬ কোটি টাকা।

সরেজমিনে নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার হীরাকান্দা, হাতিমঞ্জি, রহিমপুর, চান্দুয়াইল, বাদাম তৈল, পালপাড়া, ধোপাপাড়া, চণ্ডিগড়, বেলতলী কোনাপাড়া, বারহাট্টা উপজেলার ধলপুর, সিংধাসহ ৩০টি গ্রামে এবার রবি শস্যের বাম্পার ফলন হয়েছে। ধান চাষের চেয়ে শাকসবজির চাষ বেশি লাভজনক হওয়ায় অনেকেই তাদের জমিতে চাল কুমড়া, লাউ, টমেটো, ফুল কফি, বাঁধা কফি ও ডাটাসহ বিভিন্ন জাতের শাকসবজির চাষ করেছেন।

কৃষি বিভাগ জানায়, প্রতি হেক্টর জমিতে ২৫ থেকে ২৬ টন চাল কুমড়া উৎপাদিত হচ্ছে। কৃষকরা জানায়, প্রতি ১০ শতক বা এক কাঠা জমিতে ৫০ থেকে ৬০ মন চাল কুমড়া উৎপাদিত হচ্ছে। স্থানীয় পাইকারদের কাছে প্রতিটি চাল কুমড়া গড়ে ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে এক কাঠা জমি থেকে কৃষকের আয় হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা।

কলমাকান্দা উপজেলার ভারতীয় সীমান্তবর্তী নরল্লাপাড়া গ্রামের কৃষক শফিকুল আলম জুঁই বলেন, এক সময় এ সমস্ত সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকায় শত শত একর জমি অনাবাদি, পতিত কিংবা পড়া অবস্থায় পড়ে থাকত। ফলে এলাকার মানুষের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার অভাব লেগে থাকত। এলাকার হত-দরিদ্র কেটে খাওয়া নিন্ম আয়ের মানুষ একটু সচ্ছল স্বাভাবিক জীবন ধারনের জন্য নিজ এলাকা ছেড়ে কাজের সন্ধানে রাজধানী ঢাকা, গাজীপুর, নরসিংদী, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় চলে যেত। আবার অনেকেই কাজ না পেয়ে সীমান্তে চোরাকারবারসহ নানা অপরাধমূলক কাজে জড়িত থাকত। বর্তমানে অনাবাদী, পতিত বা পড়া জমিগুলো চাষাবাদের আওতায় আসায় ধানসহ নানা ধরনের শাকসবজির আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষকরা বাড়ির আঙিনায় বা আবাদি, অনাবাদি জমিতে লাউ, শসা, বেগুন, জিঙ্গে, কফি, টমেটো, চাল কুমড়াসহ নানা ধরনের রবিশষ্য আবাদ করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন।

তিনি বলেন, গত বার দেড় একর জমিতে চাল কুমড়া, মিষ্টি কুমড়া ও ফুল কপির আবাদ করে ৯ লাখ টাকা আয় করেছিলাম। এবার আড়াই একর জমিতে চাল কুমড়া, টমেটো, বেগুন ও বাদাম চাষ করেছি। গতকাল পর্যন্ত ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকার চাল কুমড়া, টমেটো, বেগুন বিক্রি করেছি। আশা করছি, এ বছর ২০ লাখ টাকা আয় হবে।

রংছাতি ইউনিয়নের কালিহালা গ্রামের কৃষক সায়েদুর রহমান জানান, আমি ৫ কাটা জমি বর্গা নিয়ে কুমড়া চাষ করেছি। এই পর্যন্ত ৩০ হাজার টাকার কুমড়া বিক্রি করেছি।

বারহাট্টা উপজেলার ধলপুর গ্রামের কৃষক আব্দুর রহিম জানান, আমার অনেক জমি পতিত বা পড়া থাকত। এই বছর ৩০ কাটা জমিতে চাল কুমড়া করছি। ভালো ফলন হয়েছে।

নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বসত বাড়ির আশপাশের জমি এবং অনাবাদি, পতিত কিংবা পড়া জমিতে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজির আবাদ বাড়াতে কৃষি বিভাগ স্থানীয় কৃষকদের নানা ধরনের পরামর্শ, প্রণোদনা, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ও প্রদর্শনী স্থাপনের মাধ্যমে কৃষকদের ব্যাপক উদ্বুদ্ধকরণ করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, পতিত জমিতে ভালো শাকসবজি উৎপাদিত হওয়ায় কৃষকরা দিন দিন শাকসবজি আবাদে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। ফলশ্রুতিতে নেত্রকোয় ২ হাজার ৯ শত ৫৫ হেক্টর অনাবাদি জমি চাষাবাদের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আবুধাবিতে বাংলাদেশের বোলিং তোপে চাপে আফগানিস্তান

বিএনপি সরকারে এলে জিডিপির ৫ শতাংশ শিক্ষায় ব্যয় করবে : শামা ওবায়েদ

সবচেয়ে শক্তিশালী পারমাণবিক মিসাইল উন্মোচন করল উত্তর কোরিয়া

বাগদান সারলেন তানজীব সারোয়ার

ইলিশ শিকারে গিয়ে জেলেদের সংঘর্ষ, জেলের মরদেহ উদ্ধার

নির্বাচনে কত সেনা মোতায়েন থাকবে, জানালেন মেজর হাকিমুজ্জামান

শিক্ষক-কর্মচারীদের উৎসব ভাতার দাবিতে সাতক্ষীরায় বিক্ষোভ

বিতর্কে জড়ালেন অনীত পাড্ডা

জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান পেছাল 

জাতপাত বিলোপ জোটের আত্মপ্রকাশ

১০

সমাবেশের অনুমতি ছিল না, জানালেন জাপা মহাসচিব

১১

চাকসুতে শিবির সমর্থিত প্যানেলের বিরুদ্ধে ফের আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ

১২

যে শহরে ২ ঘণ্টার বেশি ফোন ব্যবহার মানা

১৩

বিপিএলে দেখা যেতে পারে নোয়াখালী দল

১৪

‘শিশুদের নোবেল’ পুরস্কারে জন্য মনোনীত রাজশাহীর মুনাজিয়া

১৫

তরুণ প্রজন্মই আগামীর বাংলাদেশ : শরীফ উদ্দিন জুয়েল

১৬

ঘর আর নেই, তবু ঘরে ফিরছে গাজাবাসী

১৭

বাসায় বানিয়ে ফেলুন চকোলেট-কফির মজাদার মোকা কেক

১৮

লালবাগ কেল্লায় গ্রুপ মেডিটেশন ও ইয়োগার আয়োজন

১৯

ট্রফি না দেওয়ায় নকভির চাকরি খেতে চায় বিসিসিআই

২০
X