

নেত্রকোনায় চাঁদার দাবিতে সাজিদা আক্তার নামে এক গৃহবধূকে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় কয়েকজনের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী সাজিদা আক্তার জেলা সদরের মেদনি ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর গ্রামের শামীম মিয়ার স্ত্রী। শামীম মিয়া দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবে থাকেন।
এ ঘটনায় ওই গৃহবধূ বাদী হয়ে ৮ জনের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে আদালতে মামলা করেছেন।
অভিযুক্তরা হলেন– সেকান্দার আলী (৫০), তার ভাই রুক্কু মিয়া (৫৫), সেকান্দরের ছেলে উজ্জ্বল মিয়া (২৮), রুক্কু মিয়ার ছেলে তরিকুল ইসলাম (২৭) ও মোমেন মিয়া (৩৫), একই পরিবারের আলম মিয়া (৪০), পিয়াস (২৮) এবং হিমেল মিয়া (২২)।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নেত্রকোনা মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ওয়াসিম কুমার দাস বলেন, প্রাথমিক তদন্তে মারধর ও বাড়িঘর ভাঙার সত্যতা পাওয়া গেছে। আহত সাজিদা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিলেন সেই কাগজটা সংগ্রহ করে দিতে বলেছি। তদন্ত চলমান। বিস্তারিত তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়া হবে। পরে এ বিষয়ে আদালত সিদ্ধান্ত দেবেন।
এর আগে গত ৩০ অক্টোবর চাঁদা না পেয়ে সাজিদাকে মারধর করে বাড়িতে হামলা ও লুটপাট করে স্থানীয় প্রভাবশালী সেকান্দর ও তার পরিবারের লোকজন।
পরে ২ নভেম্বর এ ঘটনায় সাজিদা বাদী হয়ে সেকান্দরসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। সম্প্রতি সাজিদাকে পেটানোর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
ভিডিওতে দেখা যায়, ঘরের সামনের উঁচু জায়গা থেকে সাজিদাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে পেটাচ্ছেন সেকান্দর ও তার লোকজন। একপর্যায়ে উঁচু জায়গা থেকে সাজিদাকে খালে ফেলে দিয়ে সেখানে গিয়েও মারধর করতে দেখা গেছে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ভুক্তভোগী গৃহবধূ তার শাশুড়িসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে প্রায় ৩০ বছর ধরে নিশ্চিন্তপুর এলাকায় সরকারি বেড়িবাঁধের পাশে অস্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। তার স্বামী সৌদি আরব প্রবাসী।
অভিযোগে বলা হয়, সেকান্দর আলী ও তার পরিবারের লোকজন দীর্ঘদিন ধরে ওই গৃহবধূর কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। চাঁদা না দেওয়ায় বেড়িবাঁধের ওপর থেকে ঘরবাড়ি সরিয়ে চলে যেতে বলেন। এতে আপত্তি জানালে গত ৩০ অক্টোবর সকালে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দলবদ্ধভাবে গৃহবধূর ঘর ও দোকানে হামলা চালায় সেকান্দরসহ তার লোকজন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, হামলার সময় সেকান্দর আলী গৃহবধূকে হত্যার উদ্দেশে লোহার রড দিয়ে আঘাত করলে তার ডান হাতে গুরুতর জখম হয়।
এ সময় গৃহবধূর চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এলে হামলাকারীরা অস্ত্র প্রদর্শন করে ভয়ভীতি দেখিয়ে স্থান ত্যাগ করে এবং মামলা করলে হত্যার হুমকিও দেয়।
ভুক্তভোগী সাজিদা আক্তার বলেন, আমাদের নিজস্ব কোনো জায়গাজমি নেই। আমরা দীর্ঘ বছর ধরে এই বেড়িবাঁধের পাশে ঘর বানিয়ে বসবাস করছি। আমাদের মতো আরও অনেক পরিবার এভাবে ঘর বানিয়ে বসবাস করছে। সেকান্দর ও তার পরিবারের লোকজন আমাদের এখান থেকে তুলে দিতে চাইছে। তারা বলছে- দুই লাখ টাকা চাঁদা দিতে হবে, না হলে এখানে থাকা যাবে না। আমার স্বামী বিদেশে থাকার কারণে তারা আমাকে অসহায় পেয়ে পিটিয়ে বাড়িঘরে থাকা টাকা-স্বর্ণ সব লুটপাট করেছে।
অভিযুক্ত আলম মিয়া বলেন, আমি একটি কলেজে শিক্ষকতা করি। বছরে একদিনও বাড়িতে যাই না। এ ঘটনায় আমাকে আসামি করাটা দুঃখজনক। তবে জেনেছি, বেড়িবাঁধের জায়গাটা যেটাতে এখন সাজিদারা বসবাস করছেন, সেটা আমাদের চাচাদের থেকেই পানি উন্নয়ন বোর্ড একোয়ার করেছিল। সাজিদাদের টিনের ঘর করে থাকতে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন তারা বেশি জায়গা দখল করে নিচ্ছে। এতে বাধা দেওয়ায় একটু হাতাহাতি হয়েছে। তবে চাঁদা দাবির বিষয়টি মিথ্যা। স্থানীয়ভাবে বসে এটা শেষ করতে পারলে ভালো হতো।
অপর অভিযুক্ত উজ্জ্বল মিয়া বলেন, চাঁদা দাবির বিষয়টি মিথ্যা। সাজিদারা ধীরে ধীরে বাড়িঘর বাড়িয়ে বেশি জায়গা দখল করে নিচ্ছিল। বাড়ি পাকা করে স্থায়ী করছিল। সরকার ওই জায়গা আমাদের থেকেই নিয়েছিল। তাই তাদের বাধা দেওয়া হয়েছিল, যেন আর জায়গা দখল না করে। সাজিদা দা নিয়ে আমার বাবা-চাচার ওপর হামলা চালায়।
মন্তব্য করুন