মহাধুমধামে দিনাজপুরে হয়ে গেল দুই জোড়া বট ও পাকুড় গাছের বিয়ে। এই দুই বিয়েতে বর-কনে দুই পক্ষের মিলে অতিথি ছিল প্রায় ৫ হাজার। এ ছাড়া হাজারো দর্শনার্থীর পদচারণায় মুখরিত ছিল বিয়ের স্থল।
বুধবার (১৩ মার্চ) একটি বট ও পাকুড় গাছের বিয়ে হয়েছে শহরের রাজবাড়ী প্রাঙ্গণে হিরা বাগান এলাকায় এবং অপর বট ও পাকুড় গাছের বিয়ে হয়েছে সদর উপজেলার ৫নং শশরা ইউনিয়নের দাসাপাড়া গ্রামে।
দাসাপাড়া গ্রামের বিয়েটিতে অতিথিদের নিমন্ত্রণপত্র দিয়ে আমন্ত্রণ জানানো হয়। দুই বিয়েতেই অতিথি আপ্যায়নে ছিল নিরামিষ খাবার।
বট আর পাকুড় গাছের বিয়েতে ছিল জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন। বিয়ে ব্যাপক সাজসজ্জা ও আলপনা এঁকে তৈরি করা হয় ছাদনাতলা ও মাড়োয়া। বিয়ে পড়ান ৪ জন করে ৮ জন পুরোহিত।
শহরের রাজবাড়ীর হিরা বাগান এলাকায় বিয়ের আয়োজকরা জানান, বুধবার দুপুরে গায়েহলুদের আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। দিনাজপুরের সদরের রাজবাড়ী হিরাবাগান পুকুর পাড়া এলাকার বর বেশে পাকুড়গাছ, বাবা শ্রী জগদিস দেবনাথ ও মা পুতুল দেবনাথ। দিনাজপুরের সদরের হিরাবাগান পুকুর পাড়া এলাকায় কনে সেজে কুমারী বটগাছ, বাবা কালু মহন্ত ও মা আলপনা মহন্ত।
ছেলের বাবা শ্রী জগদিস দেবনাথ ও মা পুতুল দেবনাথ বলেন, তাদের কোন ছেলেসন্তান নেই। তারা চার কন্যার জনক-জননী। তাই তারা পুণ্যের আশায় ছেলে বেসে পাকুড় গাছকে বিয়ে দিয়ে ঋণ পরিশোধ করেছেন।
অন্যদিকে মেয়ের বাবা কালু মহন্ত ও মা আলপনা মহন্ত জানান, তাদের কোনো কন্যাসন্তান নেই। তাদের দুই ছেলে। তাই তারা বট গাছকে মেয়ে সেবে বিয়ে দিয়ে দুনিয়াতে মেয়ে বিয়ের দায় পরিশোধ করছেন।
পুরোহিত বিজয় শ্রী নারায়ণ চন্দ্র ঝাঁ জানান, লোকাচার মেনে সনাতন রীতি অনুযায়ী ছেলেমেয়েদের যেভাবে বিয়ে হয় সেভাবেই বট-পাকুড়ের বিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটিকে বিয়ে বললেও আসলে এটি হলো বট-পাকুরড়কে এক সঙ্গে স্থাপন করা। কারণ বট-পাকুড় কোনো সময় এক সঙ্গে জন্মায় না। তাই তাদের বিয়ে দেওয়া হয়।
একই রীতিতে সদর উপজেলার ৫ নং শশরা ইউনিয়নের দাসাপাড়া গ্রামে বট ও পাকুড় গাছের বিয়ে হয়েছে। সেখানে পাকুড়ে গাছের অর্থাৎ ছেলের বাবা ছিলেন দয়াল চন্দ্র রায় ও বট গাছের অর্থাৎ মেয়ের বাবা ছিলেন প্রভাত চন্দ্র রায়। এই বিয়েতে প্রধান পুরোহিত ছিলেন জয়ন্ত ব্যানার্জি।
এদিকে জাঁকজমকপূর্ণ ব্যাতিক্রম এ বিয়ে দুটি দেখার জন্য আশপাশের লোকজনসহ হাজারো মানুষ ভিড় জমায়।
আয়োজকরা জানান, হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের অমঙ্গল থেকে রক্ষা করার বিশ্বাস থেকে বট পাকুড়ের বিয়ে। অর্থাৎ অশ্বত্থ বৃক্ষ বটেশ্বরী-পাকুড়েশ্বর প্রতিষ্ঠা করা।
মন্তব্য করুন