‘আমার বাবা ভিক্ষুক ছিলেন, মা রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। সংসারে অভাব থাকায় আমাকে ছোটবেলায় এতিমখানায় দিয়ে দেন বাবা-মা। পরে বাবা মারা গেলে মা অন্যত্র বিয়ে করে চলে যান। আমি বড় হয়েছি এতিমখানায়। আমি এতিম, পুলিশের চাকরি পাব স্বপ্নেও ভাবিনি।’
এভাবেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন কুড়িগ্রামে পুলিশের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে নিয়োগ পাওয়া মো. হাসানুর রহমান।
বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) কুড়িগ্রামের পুলিশ সুপার ও টিআরসি নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণদের নাম ঘোষণা করেন।
পুলিশ লাইন্স মাল্টিপারপাস ড্রিলশেডে আনুষ্ঠানিকভাবে টিআরসি নিয়োগে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের নাম ও ফলাফল ঘোষণা করা হয়। পরে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের ফুলেল শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানায়।
হাসানুর রহমান বলেন, ‘সরকারি চাকরি কে না পেতে চায়। সেই সোনার হরিণটি পেয়েছি। আমার যে পুলিশে চাকরি হবে স্বপ্নেও ভাবিনি। আমি ও আমার বোন এতিমখানায় বড় হয়েছি। আজ যদি আমার ভিক্ষুক বাবা বেঁচে থাকতেন, কতই না খুশি হতেন।’
হাসানুর রহমান নাগেশ্বরীর সুখাতি বোর্ড ঘর এলাকার মৃত মোজাম্মেল হকের ছেলে। তিনি নাগেশ্বরী পৌর শহরের গোলাপ খাঁ শিশু শোধন কেন্দ্রে (এতিমখানা) বড় হয়েছেন। স্থানীয় স্কুল থেকে মাধ্যমিক, নাগেশ্বরী সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছেন।
শুধু হাসানুর রহমানই নন, কুড়িগ্রামে আরও ৫১ জন নারী-পুরুষের চাকরি হয়েছে কনস্টেবল পদে। শতভাগ মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়ায় প্রার্থী ও অভিভাবকরা আবেগপ্রবণ হয়ে অনুভূতি ব্যক্ত করেন।
কুড়িগ্রাম পুলিশ সুপার (এসপি) আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম উত্তীর্ণদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। এ সময় তিনি সততা, নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্ব সঙ্গে দেশসেবার মনোভাব নিয়ে পুলিশ বাহিনীতে কাজ করার প্রেরণা প্রদান করেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নীলফামারীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, আরআরএফ রংপুরের সহকারী পুলিশ সুপার মো. মতিউর রহমান প্রমুখ।
চূড়ান্তভাবে পুরুষ সাধারণ ২৬ জন, নারী পাঁচজন, মুক্তিযোদ্ধা কোঠায় পুরুষ ১৩ জন, নারী দুইজন, পুলিশ পোষ্য কোঠায় পুরুষ চারজন, নারী একজন এবং এতিম কোঠায় পুরুষ একজনসহ ৫২ জনকে মনোনীত করে টিআরসি নিয়োগ বোর্ড।
মন্তব্য করুন