তামাবিল মহাসড়কে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর পাত্র সম্প্রদায়ের ৬ জন নিহতের ঘটনায় তামাবিল মহাসড়কে ঘন ঘন সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে এবং নিরাপদ মহাসড়ক বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবিতে তামাবিল মহাসড়কে শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হয়।
মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) সকাল ১০টার দিকে সিলেট তামাবিল মহাসড়কের বৃহত্তর জৈন্তার প্রবেশদ্বার জৈন্তাগেট ঘাটেরচটি এলাকায় ৬নং চিকনাগোল ইউনিয়নের সর্বস্তরের জনগণ ও যুব, ছাত্রসংগঠনের নেতৃত্বে এই অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হয়।
এ সময় সোমবার (১৮ মার্চ) দরবস্ত এলাকায় ৬ জনের মর্মান্তিক মৃত্যুসহ গত ৫ মার্চ আলুবাগানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম লিয়াকত আলির ছেলেসহ তিন বন্ধু এবং ১৯ জানুয়ারি চারজন ছাত্রলীগের কর্মীসহ ঘন ঘন সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পরও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
এ সময় সাধারণ জনগণ মহাসড়কে অবস্থান নেয়। অনেককে আবার প্রতীকী কাফনের কাপড় পরেও প্রতিবাদ করতে দেখা যায়। এ সময় উপস্থিত জনতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এত এত মৃত্যুর পরও দুর্ঘটনা বন্ধে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেই। তারা অনতিবিলম্বে বেপরোয়া ডিআই পিকআপসহ সকল যান চলাচল স্বাভাবিক করতে সড়ক মনিটরিংয়ের আহ্বান জানান। সেই সঙ্গে তামাবিল মহাসড়কে অসংখ্য স্থানে গর্ত ও খানাখন্দ দ্রুত সময়ে সংস্কার, মেয়াদোত্তীর্ণ ফিটনেসবিহীন যান চলাচল রোধ ও অদক্ষ চালকদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ায় আহ্বান জানাতে থাকেন।
এ সময় শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচি পালনকালে ঘাটেরচটি এলাকায় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা এসে অবরোধকারীদের সঙ্গে সহমর্মিতা প্রকাশ করেন। অবরোধ চলাকালে তামাবিল মহাসড়কের দুপাশে সহস্রাধিক যানবাহন আটকা পড়ে।
পরে অবরোধকারীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এক আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় আলোচনায় অংশ নেন সিলেট জেলা পুলিশের অ্যাডিশনাল পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) রফিক আহমেদ, জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল আহমদ, সহকারী পুলিশ সুপার (গোয়াইনঘাট সার্কেল) শাহিদুর রহমান, জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাজেদুল ইসলাম, জৈন্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম লিয়াকত আলি, জৈন্তাপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম (পিপিএম), চিকনাগোল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান চৌধুরী, জেলা ট্রাক চালক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুস সালাম, চিকনাগোল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাত চৌধুরী, উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেনসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।
এ সময় উপস্থিত জনতা নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়নের বিভিন্ন দিক ও তাদের দাবিসমূহ তুলে ধরেন। পরে প্রশাসনের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের সব দাবি সম্মিলিতভাবে বাস্তবায়ন ও সাধারণ যাত্রীদের দুর্যোগের কথা বিবেচনা করে অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহারের আহ্বান জানালে দীর্ঘ চার ঘণ্টা পর তা প্রত্যাহার করা হয়।
পরে জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল আহমদ উপস্থিত জনতার সামনে এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। বক্তব্যে তিনি নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়নসহ সব দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনকারীদের ধন্যবাদ জানান এবং ২০ মার্চ সকল দাবি বাস্তবায়ন, নিরাপদ সড়ক, বেপরোয়া যানবাহন রোধ ও সড়ক দুর্ঘটনায় অকালমৃত্যু ঠেকাতে এক জরুরি সভায় অংশগ্রহণ করার অনুরোধ জানান। সভাটি তারাবির নামাজ পরে চিকনাগুল ইউনিয়ন পরিষদ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
এদিকে সোমবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে নিহত চারজনের ও ঘণ্টাখানেক পর আরও দুজনের শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়। নিহত সকলের পরিবারকে জনপ্রতি ২০ হাজার টাকা করে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়ার আশ্বাস প্রদান করা হয়েছে। এ দিকে গতকাল প্রত্যেক নিহত পরিবারকে নগত ১০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ জয়নাল আবেদীন ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী কমিউনিটি নেতা রোটারিয়ান আব্দুল গফফার চৌধুরী খসরু।
মন্তব্য করুন