ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে বাইপাস সড়কের কাজ বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে বিষয়টি সুরাহা না হলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সড়কের কাজ শেষ হবে না বলে জানিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ঘটনাটি কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলায়। অভিযোগ, উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তোফায়েল আহমেদ তুহিনের নেতৃত্বে রয়েছেন।
জানা যায়, জেলা সদরের বিন্নাটি এলাকা থেকে পাকুন্দিয়া হয়ে গাজীপুরের কাপাসিয়ার টোক বাজার পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ২২ কিলোমিটার সড়কের সংস্কারকাজ শুরু হয় ২০২০ সালের জুলাই মাসে। দুই দফায় সময় বাড়িয়ে যেটা শেষ হওয়ার কথা এ বছরের জুন মাসে। সড়কটি সংস্কারের জন্য মোট বরাদ্দ ১৬২ কোটি টাকা, আর জমি অধিগ্রহণের জন্য বরাদ্দ ৫৫০ কোটি টাকা। এ সড়কের মধ্যে পাকুন্দিয়া বাজারের পাশ দিয়ে দুই কিলোমিটার বাইপাস সড়ক নতুন করে নির্মাণ করা হচ্ছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দাবি, সাড়ে ২২ কিলোমিটার এ সড়কের ১৮ ফুট থেকে ৩২ ফুট প্রসস্তকরণের কাজ প্রায় ৭০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। তবে তাদের সমস্যা হচ্ছে বাইপাস সড়কের কাজটি করতে গিয়ে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে প্রায় দুই মাস বালু সংকটের জন্য বাইপাস সড়কের কাজ বন্ধ ছিল। তবে সাত দিন হলো বালু সংকট কেটে যাওয়ায় নতুন সড়ক ভরাটের কাজ চলছিল। কিন্তু রোববার (১৭ মার্চ) স্থানীয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে বাধা দেওয়ায় এখন কাজ বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি সড়ক ও জনপথ বিভাগকে মৌখিকভাবে জানিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এদিকে আবহাওয়ার পরিস্থিতিও ভালো নয়। মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) বিকেলে সামান্য বৃষ্টি হয়েছে। তাই কাজটি দ্রুত শেষ না করতে পারলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এ কাজ সম্পন্ন হওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীনে ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড (এনডিএ) কাজটি করলেও পাকুন্দিয়া বাইপাস সড়কের কাজটি সাব ঠিকাদার হিসেবে দেখভাল করছেন স্থানীয় মারিয়া কনস্ট্রাকশনের ঠিকাদার জমিরুল ইসলাম।
জমিরুল বলেন, রোববার বেলা আড়াইটার দিকে পাকুন্দিয়া মহিলা কলেজের পেছনে বাইপাস সড়কে বালু ফেলার কাজ চলাকালে হঠাৎ করে পাকুন্দিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তোফায়েল আহমেদসহ ছাত্রলীগের চার-পাঁচজন নেতা-কর্মী গিয়ে সড়কের কাজে বাধা দেন। তাঁরা হুমকি দিয়ে বলেন, ওপরের নির্দেশে কাজ বন্ধ থাকবে। যদি নির্দেশ অমান্য করা হয়, তাহলে বালু টানার ট্রাক্টর জ্বালিয়ে দেওয়া হবে। ছাত্রলীগের নেতারা ওপরের নির্দেশে কাজ বন্ধ রাখার কথা বললেও তাঁরা কোনো চাঁদা বা টাকা দাবি করেননি বলে জানান সাব ঠিকাদার জমিরুল। হুমকির পর থেকে সড়কের কাজ বন্ধ রেখেছেন তিনি। পাকুন্দিয়া বাজারের শুরুতে মৌসুমী সিনেমা হল থেকে পাকুন্দিয়া বাজারের শেষ মাথা গরুর হাটের পরের বরাটিয়া মোড়ের আগ পর্যন্ত দুই কিলোমিটার বাইপাস সড়কের বালু ভরাটের প্রায় ৯০০ মিটার পর্যন্ত কাজ হয়েছিল। ছাত্রলীগের নেতারা বাধা না দিলে বাকি কাজ দ্রুত শেষ হয়ে যেত।
মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এনডিএর প্রকৌশলী আবদুল হাকিম বলেন, ২০২০ সালের জুলাইয়ে শুরু হওয়া কাজটির এরই মধ্যে দুবার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এখন পাকুন্দিয়া অংশের বাইপাস অংশ নিয়ে নতুন করে ঝামেলা তৈরি হয়েছে। যদি একবার ভারী বর্ষণ হয়, তাহলে কাজ জুন মাসের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করা যাবে কি না, এ নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। সাড়ে ২২ কিলোমিটার সড়কের ৭০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
অভিযোগের ব্যাপারে মুঠোফোনে তোফায়েল আহমেদ তুহিন বলেন, আমি কেন যাব কাজ বন্ধ করতে। আমি তো বিষয়টা বুঝতেছি না। এইটা তো আমার দায়িত্ব না রে ভাই। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হচ্ছে। আমি তো এইগুলো কাজে যাব না।
এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগ কিশোরগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী রিতেশ বড়ুয়া বলেন, খোঁজখবর নিয়ে দ্রুত কাজ চালু করার ব্যবস্থা নেবেন।
মন্তব্য করুন