নওগাঁয় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সাজ্জাদ হোসেন নামের এক ঠিকাদারকে কুপিয়ে জখম করেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত মোশাররফ হোসেন শান্তকে গ্রেপ্তার করেছে সদর থানা পুলিশ।
সোমবার (১৫ এপ্রিল) দুপুর আড়াইটার দিকে শহরের বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
অভিযুক্ত মোশারফ হোসেন শান্ত শহরের চকগোবিন্দ এলাকার আক্কাস আলীর ছেলে। পরে সজীব নামের আরও একজনকে গ্রেপ্তার করেছে থানা পুলিশ।
এর আগে রোববার (১৪ এপ্রিল) রাত ১০টার দিকে বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় প্রকাশ্য অস্ত্রের মহড়াসহ পল্লী বিদ্যুতের ঠিকাদার সাজ্জাদ হোসেনকে কুপিয়ে জখম করার অভিযোগ উঠে মোশারফ হোসেন শান্ত ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় পরের দিন সোমবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরের দিকে ভুক্তভোগী সাজ্জাদ বাদী হয়ে ৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১০-১২ জনকে আসামি করে নওগাঁ সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে থানার ওসি জাহিদুল হক কালবেলাকে বলেন, ভুক্তভোগীর মামলা দায়েরের পর প্রধান আসামি শান্তসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের পরপরই তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। অন্যান্য আসামিদেরও গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।
এদিকে রোববার রাতেই শান্তর প্রকাশ্য অস্ত্রের মহড়াসহ ঠিকাদারকে কুপিয়ে জখমের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে।
ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিওতে দেখা যায়, শান্ত ১০-১২ জনকে সঙ্গে নিয়ে ধারালো অস্ত্র হাতে ঠিকাদার সাজ্জাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। একপর্যায়ে ধারাল হাঁসুয়া দিয়ে সাজ্জাদের মাথায় কোপ দেয় শান্ত। ওই মুহূর্তে গুরুতর জখম বাবাকে বাঁচাতে ছুটে যান সাজ্জাদের ছেলে হৃদয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে হৃদয়কেও মারপিট করে শান্তর অনুসারীরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, বাসস্ট্যান্ডে এক দোকানিকে রাতে আকস্মিক কল দিয়ে হাত পা ভেঙে ফেলার হুমকি দেয় শান্ত। এর কিছুক্ষণ পর ওই দোকানে গিয়ে তাকে মারপিট শুরু করে শান্ত ও তার অনুসারীরা। পুরো এ ঘটনাটির প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন ঠিকাদার সাজ্জাদ। ওই মুহূর্তে বাধা দিতে গেলে সাজ্জাদের ওপর চড়াও হয় শান্ত ও তার অনুসারীরা। এরপর সেখান থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে তারা শুরু করে অস্ত্রের মহড়া। হামলা করা হয় সাজ্জাদ ও তার ছেলের ওপর।
ঠিকাদার সাজ্জাদ বলেন, নববর্ষের দিন স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে ঘোরাঘুরি শেষে বাড়িতে ফিরছিলাম। ফেরার পথে স্ত্রীকে পাঠিয়ে দিয়ে ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে বাসস্ট্যান্ডে নেমে যাই। অন্যায়ের প্রতিবাদ করার কারণে এবং এর আগে শান্ত আমার কাছে চাঁদা চেয়েছিল। এই দুই ঘটনার জেরে পথরোধ করে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। শান্তর সঙ্গে থাকা ১০-১২ জনের প্রত্যেকের হাতেই ধারালো অস্ত্র ছিল। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা আমার শরীরে বিভিন্ন স্থানে কোপাতে থাকে।
তিনি আরও বলেন, আমাকে বাঁচাতে এলে আমার ছেলেকেও তারা বেদম মারপিট করেছে। অনেক আকুতি করেও লাভ হয়নি। স্থানীয় ক্ষমতাসীনদের ঘনিষ্ঠজন হওয়ায় শান্ত কাউকেই তোয়াক্কা করে না। তাই অনেকে শান্তর বেপরোয়া চলাফেরা দেখেও নীরব। এ ঘটনায় থানায় মামলা করলে আমাকে হত্যা করবে বলে হুমকি দিয়েছিল শান্ত বাহিনীর সন্ত্রাসীরা। এরপরেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মামলা করেছি। আমি ন্যায়বিচার চাই।
মন্তব্য করুন