লালমনিরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০১:২৭ পিএম
আপডেট : ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:০৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

রেখা ট্র্যাজেডি হার মানাবে হৃদয়বিদারক সিনেমাকেও

জাতীয় পরিচয়পত্র হাতে রেখা খাতুন। ছবি : কালবেলা
জাতীয় পরিচয়পত্র হাতে রেখা খাতুন। ছবি : কালবেলা

লালমনিরহাটের দরিদ্র পরিবারের মেয়ে রেখা খাতুন। পরিবারের অভাব-অনটনের মধ্যে মাত্র ১৪ বছর বয়সে বিয়ে হয়েছিল স্থানীয় দিনমজুর কোরবান আলীর সঙ্গে। স্বামীকে নিয়ে বসবাস করতেন লালমনিরহাট শহরের খোঁচবাড়ি এলাকায়। কিন্তু বিয়ের কয়েকদিন পরেই রেখাকে কুপ্রস্তাব দেয় স্বামীর বড় ভাই। সেই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ২৪ বছর কারাগারে থাকতে হয়েছে রেখাকে।

দীর্ঘ কারাভোগের পর জেল থেকে বের হয়ে রেখা দেখেন, মা-বাবাসহ পরিবারের ২৫ সদস্য মারা গেছেন। যাদের কোনো খবরই পাননি মেয়েটি। হারিয়ে গেছে রেখে যাওয়া বাড়িঘর। এমনকি স্বামীও আরেক মেয়েকে বিয়ে করে নিরুদ্দেশ হয়েছেন।

কারাগার থেকে বের হয়ে এখন তার কাছে পৃথিবীটাই যেন বড় কারাগার হয়ে দেখা দিয়েছে। অথচ তিনি জানেনই না, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ কী, আর তাকে কেন ২৪ বছর কারাগারে থাকতে হয়েছে। হৃদয়বিদারক সিনেমাকেও হার মানানো এমন ট্র্যাজেডি ঘটে গেছে লালমনিরহাটের রেখা খাতুন নামে এক নারীর জীবনে।

রেখার দাবি, বিয়ের কিছুদিন পর স্বামীর বড় ভাই তাকে কুপ্রস্তাব দেন। কিন্তু সেই প্রস্তাবে রাজি হননি তিনি। এর কয়েকদিন পর ২০০০ সালের ৫ নভেম্বর পুলিশ হঠাৎ তাকে গ্রেপ্তার করে। কেন গ্রেপ্তার করা হয়েছে, কী তার অপরাধ—এসব কিছু জানেন না রেখা। পরে জানতে পারেন, কোনো এক ধর্ষণ মামলায় তিনি ধর্ষণে সহযোগিতা করেছেন বলে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

অতিদরিদ্র পরিবারের মেয়ে রেখা। তাই মামলা চালানো বা আদালতে খোঁজখবর নেওয়ার লোক হয়নি। কেউ কোনো দিন তার জামিনের আবেদনও করেনি। তার পক্ষে কোনো দিন কোনো আইনজীবীও কথা বলেননি। এভাবে চলতে চলতে ২০০৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি মামলার রায় হয়ে যায়। রায়ে ২৪ বছরের কারাদণ্ড হয় রেখার। একই সঙ্গে ১ লাখ টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও ৩ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

কিছুদিন হলো সেই ২৪ বছরের কারাদণ্ড শেষ হয়েছে। কিন্তু ১ লাখ টাকা দিতে না পারলে জেল খাটতে হবে আরও এক বছর। এই খবর জানতে পেরে জরিমানার এক লাখ টাকা পরিশোধ করেন লালমনিরহাট-৩ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমানের স্ত্রী কবি ও সমাজসেবী ফেরদৌসী বেগম বিউটিসহ আরও কয়েকজন। অবশেষে গত ৯ এপ্রিল কারাগার থেকে মুক্তি মিলেছে রেখার।

কিন্তু কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি আটকে গেছেন পৃথিবী নামক কারাগারে। দীর্ঘ ২৪ বছরের মা, বাবাসহ পরিবারের ২৫ সদস্যকে হারিয়ে ফেলেছেন। তারা কেউ আর পৃথিবীতে নেই। তবে পরিবারের ২৫ সদস্যের মৃত্যুর কোনো খবরই জানতেন না রেখা। এখন কী করবেন, কোথায় যাবেন—সেসব প্রশ্নেরও উত্তর নেই রেখার কাছে।

শুধু পরিবারের সদস্য নয়, হারিয়েছেন বসতভিটাও। নদীতে বিলীন হয়ে গেছে ঘরবাড়ি। আর যে স্বামীর ঘরে সংসার শুরু করে জীবনের এই পরিণতি সেই স্বামীও বেমালুম ভুলে গেছেন রেখাকে। অন্য মেয়েকে বিয়ে করে এলাকা ছেড়ে দিয়েছেন স্বামী।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

শ্রমিকদের স্বার্থে পাঁচ দফা বাস্তবায়নের আহ্বান শেখ বাবলুর

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের কর্মীদের নিয়োগবিধি বাস্তবায়নের দাবি

তারাগঞ্জের কালেক্টরেট বামনদিঘি ইকোপার্ক

ইরাকের সরকার গঠনে বিদেশি হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে সতর্ক করল যুক্তরাষ্ট্র

লেবাননে ইসরায়েলি ড্রোন হামলা

আগামী সপ্তাহের মধ্যে ইউক্রেনকে শান্তি পরিকল্পনা মানতে হবে: ট্রাম্প

ভেড়ামারায় দুর্বৃত্তের গুলিতে গরু ব্যবসায়ী নিহত

রুয়েট প্রাক্তন ছাত্রদল অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি তুষার, সম্পাদক হাবীব

ভূমিকম্পে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে ৪১ জন আহত

ক্যারিয়ার শেষে কত উইকেট চান জানালেন তাইজুল

১০

 ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করতে রাজউকের তাৎক্ষণিক পরিদর্শন

১১

মেসিকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে যা বললেন ফ্লিক

১২

গৌহাটি টেস্টের আগে ভারত শিবিরে দুঃসংবাদ

১৩

শনিবার বিদ্যুৎ থাকবে না যেসব এলাকায়

১৪

এই প্রজন্মে অন্ধ আনুগত্য, ভাই পলিটিক্স চলবে না : শিবির সভাপতি

১৫

নাটকীয় জয়ের পরও নিজের ভুলে হতবাক আকবর

১৬

স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান : প্রধান উপদেষ্টা

১৭

নিউমার্কেট এলাকায় শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ 

১৮

ভূমিকম্পে ছেলের পর এবার চিকিৎসাধীন বাবার মৃত্যু

১৯

তারেক রহমানের জন্মদিনে ৫ হাজার মানুষকে উপহার দিলেন যুবদল নেতা

২০
X