লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন খানের বিরুদ্ধে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। তিনি পৌর মেয়র, পৌর কাউন্সিলর, ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন দেওয়ান বাচ্চুর (মোটরসাইকেল) পক্ষে কাজ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে সংসদ সদস্যের বরাত দিয়ে রফিক নামের তার পিএস এলজিইডির কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) প্রকল্পের বরাদ্দের লোভ দেখিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে ওই প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
এ ছাড়া নির্বাচনকালীন এলাকায় সংসদ সদস্যদের উপস্থিত থাকা নিয়ে বিধিনিষেধ থাকলেও আনোয়ার খান তা মানতে নারাজ। আগামী সপ্তাহে তিনি নিজ মালিকাধীন আনোয়ার খান ডায়াগনস্টিক হাসপাতাল উদ্বোধন করতে তিন দিনের জন্য নির্বাচনী এলাকায় আসবেন। এরইমধ্যে অভিযোগ উঠেছে, তিনি মোটরসাইকেলের প্রার্থীর পক্ষে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে বসে নির্বাচনী কাজ সমাধা করতে এলাকায় আসবেন।
বৃহস্পতিবার (৯ মে) রাতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ইমতিয়াজ আরাফাত এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ ৭টি দপ্তরে লিখিত অভিযোগ পাঠিয়েছেন। এর মধ্যে জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার, রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাও রয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, এমপি আনোয়ার খান নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করে পৌর মেয়র, কাউন্সিলর, ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের দেওয়ার বাচ্চুর ভোট করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। সম্প্রতি সংসদ সদস্য এলজিইডির কাবিটা প্রকল্পের ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছেন। ওই বরাদ্দের লোভ দেখিয়ে তিনি তার পিএস রফিককে দিয়ে জনপ্রতিনিধিদের মোবাইলফোন ও হোয়াটসঅ্যাপে কল করে বাচ্চুর পক্ষে ভোট করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আচরণ বিধিমালায় ২০১৬ অনুযায়ী সংসদ সদস্য যদি নির্বাচনী এলাকার ভোটার হন তাহলে শুধু ভোট দিতেই ভোট কেন্দ্রে যেতে পারবেন। কিন্তু সংসদ সদস্য আনোয়ার খান তা অমান্য করে তিন দিনের জন্য ঢাকা থেকে রামগঞ্জে আসছেন মোটরসাইকেলের প্রার্থীর পক্ষে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বসে নির্বাচনী সমাধা করার জন্য। যদি তিনি কারণ দেখিয়েছেন তার নিজ নামে আনোয়ার খান ডায়াগনস্টিক হাসপাতাল উদ্বোধনের। কিন্তু তার মূল লক্ষ্য জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বসে দেওয়ান বাচ্চুর পক্ষে নির্বাচনী কাজ সমাধা করা।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক ইউপি চেয়ারম্যান, পৌর কাউন্সিলরসহ ১০ জন প্রতিনিধি জানায়, মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের আগেই সংসদ সদস্য আনোয়ার খান জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। সেখানে অনেকেই যাননি। যারা গিয়েছেন তাদের দেওয়ান বাচ্চুর পক্ষে ভোট করার নির্দেশ দিয়েছেন। সম্প্রতি তার পিএস রফিককে দিয়েও হোয়াটসঅ্যাপে কল করে বাচ্চুর পক্ষে ভোট করার জন্য নির্দেশ দেন। বাচ্চু পক্ষে ভোট করলে কাবিটা প্রকল্পের বরাদ্দ দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে।
এমপি আনোয়ার খানের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) মো. রফিক বলেন, আমি কোনো জনপ্রতিনিধিকে কল দিইনি। অভিযোগটি সত্য নয়।
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন খানকে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা স্বপন কুমার ভৌমিক বলেন, এমপির বিরুদ্ধে আচরণবিধি ভঙ্গের লিখিত কোনো অভিযোগ আমার কাছে পোঁছাইনি। লিখিত অভিযোগটি পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন