শেরপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৮ মে ২০২৪, ০৪:৫৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

গারো পাহাড়ে সাম্মাম চাষে সফল আনোয়ার

নিজের ক্ষেত তোলা সাম্মাম হাতে কৃষি উদ্যোক্তা মো. আনোয়ার হোসেন। ছবি : কালবেলা
নিজের ক্ষেত তোলা সাম্মাম হাতে কৃষি উদ্যোক্তা মো. আনোয়ার হোসেন। ছবি : কালবেলা

মরুভূমির ফল সাম্মাম। সুস্বাদু ও মিষ্টি জাতের এ ফল মূলত মরুভূমিতে বেশি চাষ হয়। দেশে কয়েক বছর আগে থেকে সাম্মামের আবাদ শুরু হলেও শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার গারো পাহাড়ে গত বছর প্রথমবারের মতো চাষ করেছেন তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা মো. আনোয়ার হোসেন। গারো পাহাড়ে এ ফল চাষ করে লাভবানও হয়েছেন তিনি।

শনিবার (১৮ মে) আনোয়ারের সাম্মাম ফল বাগান ঘুরে দেখা গেছে, এলাকায় নতুন জাতের এ ফলের চাষ হওয়ায় আনোয়ারের বাগান দেখতে আসছেন আশপাশের এলাকার কৃষকরা। তার কাছ থেকে সাম্মাম চাষের পরামর্শও নিচ্ছেন অনেক কৃষক।

১০ শতাংশ জমিতে ইস্পাহানি রকি জাতের সাম্মাম মালচিং পদ্ধতিতে চাষ করেছেন তিনি। মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে ফল এসেছে। মাচায় ফুলে-ফলে ভরপুর সাম্মাম। বিভিন্ন আকারের আধাপাকা ও পাকা শতাধিক ফল ঝুলছে। সবুজ থেকে হলুদ বর্ণ ধারণ করছে বেশকিছু ফল। গাছের গোড়ার অংশের মাটি মালচিং পেপার দিয়ে ঢাকা। একজন সহকর্মী নিয়ে আনোয়ার গাছ থেকে ফল ছিঁড়ছেন আর বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মানুষ ফলগুলো কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

কৃষি উদ্যোক্তা মো. আনোয়ার হোসেন কালবেলাকে বলেন, একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি ছেড়ে কয়েক বছর আগে বাড়িতে এসে বাবার সঙ্গে সবজি চাষ শুরু করি। সবজির পাশাপাশি নতুন কিছু একটা চাষ করার চেষ্টায় ইউটিউব থেকে সাম্মাম ফল সম্পর্কে জানি। উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তা নিয়ে শুরু করি পরীক্ষামূলক চাষ। তিনি বলেন, এ ফল চাষে প্রথমবারেই সফল হয়েছি। গত ফেব্রুয়ারিতে ১০ শতাংশ জমিতে বীজ রোপণ করি। মাত্র এক মাসের মধ্যে গাছে ফুল আসতে শুরু করে। গত এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহে ফল পাকতে শুরু করে। অর্থাৎ মাত্র তিন মাসের মধ্যে এ ফল খাওয়া ও বাজারজাত করা যায়। ফলনও ভালো হয়েছে।

আনোয়ার আরও বলেন, এ পর্যন্ত খরচ করেছি মাত্র ২৮ হাজার টাকা। ইতোমধ্যেই আমি ৮৫ হাজার টাকার ফল বিক্রি করেছি। বাগানে যে পরিমাণে ফল আসছে, তাতে সব মিলিয়ে লাখ টাকার ফল বিক্রি করতে পারব বলে আশা করছি।

স্থানীয় পাইকারি ফল ব্যবসায়ী রহুল আমিন বলেন, এ ফল ৩০০/৪০০ টাকা কেজিতে খুরচা বিক্রি করা সম্ভব। আমরা ২০০ টাকা দরে বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকারি কিনি। তবে বাইরের জেলা থেকে ফল কিনলে আমাদের খরচ বেশি হয়। এ ফলগুলো আমাদের জেলায় বেশি বেশি উৎপন্ন হলে আমাদেরও লাভ হবে, গ্রাহকদেরও লাভ হবে।

নালিতাবাড়ি থেকে সাম্মাম ক্ষেত দেখতে আশা কৃষক হুরমুজ আলী বলেন, আমি কয়েকজনের কাছে শুনলাম ফলটি খুব মিষ্টি ও রসালো এবং খেতেও সুস্বাদু। তাই নিজেই দেখতে ও ফল নিতে আসলাম। দুই বছর ধরে আনোয়ার যেহেতু লাভবান হয়েছে তাই আমিও সামনের বছর চাষ করব।

ঝিনাইগাতী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন দিলদার বলেন, আমাদের দেশে ফলটি সাম্মাম হিসেবে পরিচিতি। অনেকে এটাকে রকমেলন বা হানিডিউ মেলনও বলে। সাম্মাম বা রকমেলন জাতীয় ফলগুলো জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। পানি আটকে থাকলে গাছের গোড়া পচে গাছ মারা যায়। তাই এগুলো মরুভূমিতেই আবাদ হয়।

তিনি বলেন, আমাদের গারো পাহাড়ের মাটির একটি বিশেষ গুণ রয়েছে, তা হলো পানি আটকে থাকে না। তাই এখানে সাম্মাম বা রকমেলন ফল চাষ হচ্ছে। তবে অনেক কৃষক এখন বিদেশি এ ফল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। আনোয়ার একজন তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা। তিনি পরীক্ষামূলকভাবে সাম্মাম ফল চাষ করে সফল হয়েছেন।

এ কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে তার বাগান নিরাপদ রাখতে সবধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। আনোয়ারের এ ফল চাষ দেখে আশপাশের অনেকেই সাম্মাম চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। এ ফলের চাষ করে লোকসানের ভয় নেই। সাম্মাম চাষে কউ আগ্রহী হলে কৃষি অধিদপ্তর থেকে সার্বিক সহযোগিতা দেওয়া হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সাংবাদিকদের প্রতি সহিংসতা বাড়ছে : এমএসএফ

২ ঘণ্টায় লিখা হয় ‘তোমার ব্যথায় আমি’ 

এখন থেকে এক ঠিকানায় মিলবে সব নাগরিক সেবা 

পদ্মা সেতুর ইলেট্রনিক টোল সংগ্রহ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হলো নগদ

আইইউবিএটি-তে চীনা ভাষা কোর্সের উদ্বোধন

সাকিবের বিরল রেকর্ডে ভাগ বসিয়ে মিরাজের ইতিহাস

প্লাস্টিকের গৃহসামগ্রী ব্যবহার, বছরে প্রাণহানি সাড়ে ৩ লাখ

মে দিবস উপলক্ষে তারেক রহমানের বাণী 

আধুনিক বিমানবাহিনী গড়ে তোলার লক্ষ্য সরকারের : প্রধান উপদেষ্টা

মিরাজ ঝড়ে চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়ে বধ টাইগারদের  

১০

বিএনপি নেতাকর্মীদের আরও ধৈর্য ধরতে হবে : এ্যানি

১১

প্রাইজবন্ড ড্র, এবার পুরস্কার বিজয়ী যারা

১২

পরবর্তী পোপ হিসেবে নিজেকেই দেখতে চান ট্রাম্প!

১৩

‘বাংলাদেশ-মিয়ানমার একমত হলে করিডোর চালু করতে পারে জাতিসংঘ’

১৪

গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্র্যাজুয়েশন ডে উদযাপন

১৫

ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি ও বিএসআরএম যৌথভাবে উদ্বোধন করল বিএসআরএম স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিং

১৬

নোয়াখালীতে হত্যা মামলায় বিএডিসির গুদামরক্ষক গ্রেপ্তার

১৭

যুদ্ধজাহাজে পারমাণবিক অস্ত্র স্থাপনের নির্দেশ কিমের

১৮

চিন্ময় দাসের জামিন স্থগিত

১৯

সর্বোচ্চ সতর্কতা পাকিস্তানের সব বিমানবন্দরে, কী হতে চলেছে

২০
X