গ্রামের একটি বাড়ির বিশাল এক উঠান। চারপাশে শত-শত নারী-পুরুষ দাঁড়িয়ে। মাঝখানে একজন লোক। তার হাতে বড় একটি বাঁশ। সেই বাঁশে লাগানো লাল কাপড়। মাঝে মাঝে ঝুলছে লম্বা চুল। মৃদু হাওয়ায় উড়ছে ও দুলছে চুলগুলো।
বোঝার উপায় নেই, সেখানে ঠিক কী হচ্ছে? এরই মধ্যে বেজে উঠল ঢাকঢোল পেটানোর শব্দ। একদল লোক তালে তালে পেটাচ্ছেন এসব বাদ্যযন্ত্র। এর সঙ্গে বেজে উঠলে বাঁশির সুরের মূর্ছনা। আর ঝুনঝুনি বাজানোর শব্দ।
এসব বাদ্য-বাজনার সুর ও তালের মধ্যেই লাঠি নিয়ে হাজির কয়েকজন। একে অপরকে লাঠি দিয়ে করছেন আঘাতের চেষ্টা। মাঝেমধ্যে একজন আরেকজনের ওপর আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণ করে চলেছেন। এসব গভীর মনোযোগ দিয়ে তা দেখছেন অসংখ্য নারী-পুরুষ ও শিশু-কিশোররা।
একের পর এক আক্রমণে ভেঙে যাচ্ছে লাঠি। তবুও থামছেই না আক্রমণ। কখনও কখনও লাঠির আঘাত দেখে আঁতকে উঠছেন উপস্থিত লোকজন। কিন্তু না, এটি কোনো যুদ্ধ বা মারামারি নয়। এটি সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর উপজেলার কুনকুনিয়ার গ্রাম বাঙলার, ঐতিহ্যবাহী মাদার মেলার দৃশ্য। যা দেখতে ভিড় করেছেন দূরদূরান্ত থেকে আসা লোকজন।
ঐতিহ্যবাহী এ খেলা প্রতিবছর আয়োজনের কথা জানান আয়োজকরা। আয়োজকদের একজন বলেন, মাদার মেলায়ে খেলার মাধ্যমে অনেকেই বিনোদন পেয়ে থাকে। ঈদের আনন্দের চেয়ে বেশি আনন্দ করে এখানকার মানুষ। শুধু কুনকুনিয়া গ্রাম নয় আশপাশের অনেক এলাকা থেকে মানুষ এসে এ খেলা উপভোগ করেন।
আর খেলোয়াররা বলছেন, এ খেলা দেখানোর জন্য সারা বছর মুখিয়ে থাকেন তারা। মানুষকে বিনোদন দিতে পারলেই তাদের আনন্দ।
প্রায় ৩০০ বছর ধরে চলা এ মাদার মেলা ও লাঠি খেলা প্রতিবছর আয়োজনের দাবি এলাকাবাসীর।
মন্তব্য করুন