মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে গোপীনাথপুর ইউনিয়নের নয়াবাজার থেকে ডেগিরচর পর্যন্ত ২ কিলোমিটার রাস্তা পাকাকরণের দেড় বছরের কাজ চার বছরে অর্ধেকও শেষ হয়নি। প্রায় ৩ বছরের অধিক সময় ধরে রাস্তার কাজ বন্ধ থাকায় এলাকাবাসীর দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।
কাজের শুরুতে মাটি খুঁড়ে বাক্স করে নামেমাত্র কিছু বালু ফেলে রাখা হয়। এখন সামান্য বৃষ্টি হলেই যানবাহন তো দূরের কথা, মানুষ পায়ে হেঁটেই চলাচল করতে পারে না।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত ২০২০/২১ অর্থবছরে জিডিবি-৩ প্রকল্পের আওতায় বাহাদুরপুর সড়কের নয়াবাজার থেকে ডেগিরচর পর্যন্ত ২ কিলোমিটার রাস্তার পিচ ঢালাইয়ের জন্য ২০২০ সালে দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে ১ কোটি ৭৯ লাখ ২৫ হাজার ২৮১ টাকা দরে মেসার্স সেলিম এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজটি পায়। ২০২১ সালের মার্চ মাসে রাস্তাটির কাজ শুরু করে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। কিন্তু তিন বছরে শুধুমাত্র রাস্তা খুঁড়ে বাক্স করে কিছু কিছু স্থানে বালু ফেলে রাখা হয়েছে। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে রাস্তাটির কাজ বন্ধ রাখা হয়।
এলাকাবাসীরা অভিযোগ করেন, রাস্তাটি প্রায় তিন বছর আগে মাটি খুঁড়ে রাখায় এ রাস্তা দিয়ে কোনো যানবাহনই চলাচল করতে পারছে না। একটু বৃষ্টি হলেই কোথাও কোথাও পানি জমে কাদার সৃষ্টি হয়। এতে করে মানুষের পায়ে হাঁটাই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। বর্তমানে এ রাস্তা দিয়ে কৃষিপণ্যসহ কোনো মালামালই আনা নেওয়া করা যায় না। ফলে এ এলাকার কৃষকরা কৃষিপণ্য নিয়ে পড়েছেন চরম বিপাকে। কেউ অসুস্থ হলে জরুরিভাবে তাকে হাসপাতালে নেওয়া নিয়েও পড়তে হয় বিপদে। এ ছাড়াও একটু বৃষ্টি হলেই এ রাস্তা দিয়ে দুটি বিদ্যালয়ের প্রায় ৫ শতাধিক শিক্ষার্থীদেরও চলাচল করতে অনেক অসুবিধা হয়।
ইজিবাইক চালক রোমান বলেন, এই রাস্তাটি দীর্ঘ কয়েক বছর যাবত খুঁড়ে ফেলে রাখছে। আমরা মালামাল নিয়ে গাড়ি চালাতে পারি না। গতকাল ১০-১২ মণ ভুট্টা নিয়ে আমার গাড়ি উলটে যায়। একটু বৃষ্টি হলেই আমরা যাতায়াত করতে পারি না। অনেক ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়।
ডেগিরচর গ্রামের বাসিন্দা আরজু প্রামাণিক জানান, আমাদের এই রাস্তাটা অনেক জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে। কিন্তু চার বছর ধরে রাস্তাটি এভাবে পড়ে আছে। কাজ বন্ধ করে রাখছে। এ রাস্তা দিয়ে কৃষকরা কৃষিপণ্য নিয়ে হাটে বাজারে যেতে পারে না। একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তার বিভিন্ন স্থানে পানি জমে য়ায়। তখন গাড়ি তো দূরের কথা পায়ে হেঁটেই চলাচল করা যায়। আমাদের এই রাস্তার বেহাল দশা দেখারও কেউ নেই।
ইউপি সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান মো. মোজাফফর হোসেন কালবেলাকে জানান, তিন বছরের বেশি সময় ধরে রাস্তাটি খুঁড়ে কাজ বন্ধ রয়েছে। রাস্তা খুঁড়ে রাখায় একটু বৃষ্টি হলেই মানুষের চলাচল করতে সমস্যা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, ভ্যান, রিকশা কিংবা নসিমনে এই এলাকার কৃষিপণ্যও হাট বাজার নেওয়া যায় না। রাস্তাটি নিয়ে এই এলাকার জনগণ খুব ভোগান্তিতে আছে। রাস্তাটি এখন এলাকার জনগণের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২/৩ দিন আগে যেখানে যেখানে জলাবদ্ধতা হয়, সেখানে নিজে কিছু বালু ফেলে দিয়েছি। রাস্তাটি যে কেন এভাবে পড়ে তাই বুঝলাম না। এটা একটা জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপজেলা প্রকৌশলী মাজহারুল হক আকন্দ কালবেলাকে জানান, আগের টেন্ডার বাতিল করা হয়েছে। নতুন করে বাজেটও করা হয়েছে। এখন অনুমোদন পেলেই জেলা থেকে টেন্ডার দেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন