ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট ভারি বৃষ্টিতে ডুবে আছে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার নিচু এলাকা। জলাবদ্ধতার কারণে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন স্থানীয়রা।
কলকারখানার ক্যামিক্যালের বিষাক্ত ও দুর্গন্ধ পানি এখানে বৃষ্টির পানির সাথে মিশে একাকার হয়ে গেছে। যার কারণে দুর্ভোগের শিকার হয়েছে মানুষ। দীর্ঘদিনের এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান চান ভুক্তভোগীরা।
সড়ক কিংবা বসতঘর কোথাও হাঁটু পানি আবার কোথাও কোমর পানিতে থই থই। যেই সড়কে চলার কথা গাড়ি ও রিকশা সেই সড়কের একমাত্র ভরসা এখন নৌকা। ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে তলিয়ে গেছে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার লালপুর, পৌষা পুকুর, টাগারপাড়, ইসদাইর ও চানমারীসহ ৯টি এলাকা। অনেক বাড়িঘর ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। বেকায়দায় পড়েছেন প্রায় তিন লাখ বাসিন্দা। কেমিক্যালযুক্ত ময়লা ও দুর্গন্ধ পানি মাড়িয়ে চলাচল করছে মানুষ। এদের মধ্যে শিশু, নারী ও বৃদ্ধদের বেশি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে পারছে না। ওইসব এলাকায় যাতায়াতের এখন অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে নৌকা আর ভ্যানগাড়ি।
এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায়, পর্যাপ্ত ড্রেন না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায় রাস্তাঘাট বাড়িঘর। এর মধ্যে আবার দেখা যাচ্ছে, অসচেতন বাসিন্দারা প্লাস্টিক করে বসতবাড়ির ময়লা ড্রেনে ফেলছেন। যার কারণে পানি নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। বেশি অসুবিধায় পড়ে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। শ্রমিক ঘোষিত এলাকা হওয়ায় সঠিক সময়ে কর্মস্থলে যেতে সেইসঙ্গে শ্রমিকরাও বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। এসব এলাকার অনেক বাসিন্দা ভোগান্তি থেকে বাঁচতে অন্যত্র চলে গেছেন।
ফতুল্লার লালপুর এলাকার গৃহিণী মাকছুদা আলী বলেন, আমরা যে জনগণ এখানে আছি এত দুর্ভোগ বলার মত না। চেয়ারম্যান মেম্বাররা আসে বড় বড় কথা বলে আশ্বাস দেয়। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। এক বছর দুই বছর না অনেক বছর ধরে আমরা এই জলাবদ্ধতায় ভুগতেছি। রুমের ভিতর এত পানি তার মধ্যে আবার বিষাক্ত ময়লা পানি। পায়ে ঘা হয়ে গেছে। খাবারের পানিতেও এত দুর্গন্ধ যা খাওয়া যাচ্ছে না। মানে থাকার মতো যোগ্য না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের আকুল আবেদন তিনি যেন এই এলাকাগুলোর দিকে একটু নজর দেন। কারণ এত কষ্ট মানুষ করতে পারে না। কষ্টেরও একটা শেষ আছে।
টাগারপাড় এলাকার নারী বাসিন্দা সালমা জানান, স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীরা তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে পারে না। অনেক সমস্যা হচ্ছে তাদের। ব্যবসায় বাণিজ্যেরও সমস্যা এবং বেশি সমস্যা হচ্ছে বিশুদ্ধ পানির। মানুষের যাতায়াতেও অনেক সমস্যা হচ্ছে।
জলাবদ্ধতা নিরসনে পাম্প বসানো হয়েছে বলে জানান স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফাইজুল ইসলাম।
তিনি আরও জানান, নির্বাচনে আমার এলাকার বাসিন্দাদের একটাই দাবি ছিল জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত করা। আমি চেয়ারম্যান হওয়ার পর বর্ষার আগে নিচু এলাকার ড্রেনগুলো পরিষ্কারের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। এবার ঘূর্ণিঝড়ে এলাকাগুলোতে পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। সবার কাছে অনুরোধ থাকবে আপনারা নির্দিষ্ট স্থানে বাসাবাড়ির ময়লা ফেলবেন। ইতোমধ্যে জলাবদ্ধতা নিরসনে পাম্প বসানো হয়েছে, পানি কমতে শুরু করেছে। পানি পুরোপুরি কমলে এখানে স্থায়ীভাবে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করব।
পানিবন্দি এলাকা পরিদর্শন করে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একে এম শামীম ওসমান জানান, সমস্যা সমাধানে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও জানান, এখানকার স্থানীয় মানুষের কিছু ব্যর্থতা আছে। সেটি হলো রাস্তা উঁচু, জায়গাটা নিচু। সে কারণে প্রায় তিন লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছেন। গতবার জেলা পরিষদের সহায়তায় তিনটি পাম্প বসিয়েছিলাম। এখানে একটা ট্রান্সফর্মার ছিল, সেটি খুলে নিয়ে যাওয়ায় এবার পানি জমে গেছে। বাথরুমের ময়লা পানি জমে বাড়িঘর তো রয়েছে, বাদ যায়নি মসজিদ-মন্দিরেও। আপাতত আমি নিজে ট্রান্সফর্মার কিনে দিব। সেটা দিয়ে পাম্প চালানো হবে।
তিনি আরও বলেন, এর জন্য এলজিআরডিতে আমরা প্রজেক্ট দিয়েছি। আমাদের এলজিইডি মন্ত্রী যিনি আছেন আমি ওনার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলব। আমার বিশ্বাস, এই সমস্যার সমাধানে ওনারা এগিয়ে আসবেন। আগামী কয়েক দিনে পানি নেমে যাবে এবং দ্রুত এর সমাধান হবে ইনশাল্লাহ।
মন্তব্য করুন