কালবেলায় সংবাদ প্রকাশের পর গ্রেপ্তার করা হয়েছে জাহাঙ্গীর বিশ্ববিদ্যাল (জাবি) ঘিরে অপরাধ সাম্রাজ্য তৈরি করা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মাসুদ রানাকে। একই সঙ্গে ফারুক ও গালকাটা মমিন নামে মাসুদ রানার আরও ২ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সোমবার রাতে সাভারের পানদোয়া এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। আশুলিয়া থানার এসআই নুর আলম মিয়া তাদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি কালবেলাকে নিশ্চিত করেছেন।
এসআই নুর আলম মিয়া বলেন, জুবায়ের আহমেদ সৌরভ নামে পানদোয়া এলাকার ভুক্তভোগী ছাত্রলীগ নেতার করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের বিরুদ্ধে আদালত থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। ওই গ্রেপ্তারি পরোয়ানার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এর আগে গত ২২ মে দৈনিক কালবেলায় ‘জাবি ঘিরে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার অপরাধ সাম্রাজ্য’ শীর্ষক একটি সংবাদ প্রকাশ করা হয়। সংবাদে ঐতিহ্যবাহী জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় ঘিরে স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা মাসুদের নানান অপকর্মের ফিরিস্তি তুলে ধরা হয়। যারমধ্যে রয়েছে জমি দখল, মারধর ও মাদক কারবার, যানবাহন থেকে চাঁদাবাজি, অটোরিকশায় চাঁদাবাজি, স্থাপনা নির্মাণে কমিশন নেয়া ইত্যাদি। এছাড়াও জাহাঙ্গীর বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদকের প্রধান সরবরাহকারী এই মাসুদ রানা। কালবেলায় সংবাদ প্রকাশের পরই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। যারপ্রেক্ষিতে গত সোমবার রাতে তাকে পানদোয়া এলাকায় থেকে ২ সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করা হয়।
মাসুদের গ্রেপ্তারে এলাকায় স্বস্তি, মাসুদ রানার গ্রেপ্তার পানদোয়া এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের স্বস্তি ফিরে এসেছে। এতদিন ভয়ে কেউ মুখ না খুললেও এখন মুখ খুলতে শুরু করেছেন অনেকেই। জানতে চাইলে পাথালিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের আহমেদ সৌরভ কলাবেলাকে বলেন, মাসুদের মাদক ব্যবসায় বাধা দিলে সে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি প্রদান করে এবং প্রকাশ্যে জনসম্মুখে নাজেহাল করে। যার পরিপ্রেক্ষিতে আমি আদালতে মামলা করলে আদালত আমার অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে মাসুদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি করে। এরপর মাসুদকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে আদালতের রায়ের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন ঘটান আশুলিয়া থানা পুলিশ। মাসুদের গ্রেপ্তারে এলাকায় স্বস্তি ফিরেছে। আমি নিজেও আনন্দিত তবে আবার জামিনে বের হয়ে এসে তার সাঙ্গ-পাঙ্গ নিয়ে যদি আমার উপর হামলা চালায় সে আতঙ্কেও রয়েছি। সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের নিকট আমার দাবি কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী মাসুদসহ তার সাঙ্গোপাঙ্গদের বিরুদ্ধে আইনগত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক। মাসুদ গংরা গোটা এলাকা মাদকে ভরিয়ে দিয়েছে। ফলে যুব সমাজ এসব মাদক সেবন করে ধীরে ধীরে ধ্বংসের পথে ধাবিত হচ্ছে। যুব সমাজকে নিশ্চিত ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে হলে এখনই মাসুদের বিরুদ্ধে প্রশাসনসহ সবাইকে সোচ্চার হওয়া জরুরি।
পাথালিয়া ইউনিয়নের পাঁচ নং ওয়ার্ড মেম্বার মোজাফফর হোসেন কালবেলাকে বলেন, মাসুদের গ্রেপ্তারে স্থানীয়রা খুশি হয়েছেন। তার মদক সিন্ডিকেট রয়েছে। সে এলাকায় সঙ্ঘবদ্ধভাবে মাদকের ব্যাবসা পরিচালনা করে। তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
দূরপাল্লার পরিবহন মাস্টার আশরাফ কালবেলাকে বলেন, মাসুদ আমার কাছ থেকে প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা নেয়। আমি ছাড়াও সে প্রতিমাসে অনেকের কাছ থেকেই চাঁদা নিয়ে থাকে। তার গ্রেপ্তারে আমরা খুশি হয়েছি। এমন চাঁদাবাজদের বিচারের আওতায় আনা সময়ের দাবি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পানদোয়া এলাকার এক রিকশাওয়ালা কালবেলাকে বলেন, মাসুদের লোকদের অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ। বিভিন্ন সময় মাদক ডেলিভারির জন্য আমাদেরকে জোর করে নিয়ে যায়। কথা না শুনলে আমাদেরকে মারধরও করে। শুনলাম সে নাকি গ্রেপ্তার হয়েছে। তার গ্রেপ্তারারে আমরা খুব খুশি হয়েছি। তার গ্রেপ্তারের খুশি হয়ে সকাল থেকে কয়েকজনকে দেখেছি মিষ্টি বিতরণ করতে। মিষ্টি আমিও পাইছি।
পাথালিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পারভেজ দেওয়ান কালবেলাকে বলেন, শুনেছি মাসুদ গ্রেপ্তার হয়েছে। দুষি যেই হোক না কেনো তার শাস্তি হওয়া উচিৎ। প্রধানমন্ত্রী যেখানে মাদক মুক্ত বাংলাদেশ ঘোষণা করেছে সেখানে যদি কেউ মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে তাকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা উচিত।
স্থানীয়রা বলেন, মাসুদসহ সকল মাধক কারবারি জমি দখলকারী এবং সমাজের ত্রাস সৃষ্টিকারীদের আইনের আওতায় আনা হোক। মাসুদের মত মাদক ব্যবসায়ীরা সমাজের যুব সমাজকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিচ্ছে সুতরাং সকল মাদক কারবারিদের আইনের আওতায় এনে সমাজ তথা যুব সমাজকে রক্ষা করতে সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসার।
মন্তব্য করুন