ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ খাদ্যগুদামে সরকার নির্ধারিত মূল্যে উপজেলার প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে ধান না নিয়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধান কেনার অভিযোগ উঠেছে। এতে বঞ্চিত হচ্ছেন লটারিতে বিজয়ী কৃষকরা।
সোমবার (২৪ জুন) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে দেখা গেছে মোবারকগঞ্জ চিনিকলের পেছনের একটি নির্জন স্থানে জঙ্গলের মধ্যে থাকা একটি ট্রাক থেকে খাদ্য অধিদপ্তরের স্টিকার লাগানো বস্তা নামানো হয়।
জানা যায়, ওই ট্রাকে ৪৫০ বস্তা ধান নড়াইল থেকে আনা হয়েছে। সেখান থেকে ট্রলিতে করে কালীগঞ্জ উপজেলা খাদ্যগুদামে প্রবেশ করানো হয়। এ সময় জঙ্গলের মধ্যে প্রায় ৪০০টি খাদ্য অধিদপ্তরের স্টিকার লাগানো বস্তা পড়ে থাকতে দেখা গেছে। ট্রাকে আনা ওই ধান আরিফুজ্জামান সুমন নামের এক ব্যক্তি কালীগঞ্জ খাদ্যগুদামে পাঠানোর জন্য আনে। আর সেই ধান লটারিতে বিজয়ী কৃষকের নামে প্রবেশ হচ্ছে খাদ্যগুদামে।
কালীগঞ্জ খাদ্যগুদাম সূত্রে জানা গেছে, বোরো মৌসুমে লটারিতে বিজয়ী ৫৫৮ জন কৃষকের কাছ থেকে ১৬৭৫ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিজন কৃষক সর্বোচ্চ ৩ টন ধান গুদামে দিতে পারবেন। সরকার এ বছর ১২৮০ টাকা মণপ্রতি ধান ক্রয় করছে। এখন পর্যন্ত ৫০ ভাগ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে।
জানা যায়, ৮ সদস্যবিশিষ্ট উপজেলা ধান ক্রয় কমিটির সভাপতি কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সদস্য সচিব উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক।
গুদামের একটি সূত্র জানায়, প্রতি বছরই এই ধান প্রকৃত কৃষকের কাছ থেকে না কিনে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাইরে থেকে ক্রয় করে খাদ্যগুদামে প্রবেশ করানো হয়। এর সঙ্গে অসাধু কিছু কর্মকর্তা জড়িত আছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই প্রক্রিয়ায় ধান কেনা হয় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কিন্তু বিল হয় কৃষকের নামে। যে বিল প্রদান করা হয় অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে।
এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাঈমুল ইসলাম প্রথমে বিষয়টি অস্বীকার করেন। এরপর তিনি জানান, কিছু ধান গুদামে ঢুকেছিল সেগুলো ফেরত দেওয়া হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, খাদ্য অধিদপ্তরের এই বস্তা বাইরে কিনতে পাওয়া যায়। জঙ্গলে পাওয়া বস্তা গুদাম থেকে দেওয়া হয়নি।
কালীগঞ্জ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মাহদী হাসান শিহাব জানান, সকালে বিষয়টি তিনি শুনেছেন। এভাবে ধান ক্রয় করার কোনো সুযোগ নেই। সোমবার সকালে যে ধান গুদামে ঢুকেছে এই ধানের কোনো বিল দেওয়া হবে না।
ধান ক্রয় কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইশরাত জাহান গণমাধ্যমকে জানান, বিষয়টি শুনে তিনি খাদ্যগুদামে গিয়েছিলেন এবং প্রকৃত লটারিতে বিজয়ী কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয় করার নির্দেশ দিয়েছেন। সকালে গুদামে প্রবেশ করা ধানগুলো ফেরত দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
মন্তব্য করুন