জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসি একটি সংক্ষিপ্ত রায়ের ভিত্তিতে কার্যকর করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন আইনজীবী শিশির মনির। আপিল বিভাগের কাছে তিনি এ তথ্য তুলে ধরেন।
মঙ্গলবার (০৬ মে) সকালে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ৭ বিচারপতির বেঞ্চে শুনানি চলাকালে এ কথা বলেন তিনি।
উপমহাদেশে এমন নজির নেই উল্লেখ করে আইনজীবী শিশির মনির বলেছেন, জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসি ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর এক সংক্ষিপ্ত রায়ের ভিত্তিতে কার্যকর করা হয়েছিল। কারণ তখন সামনে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ছিল। নির্বাচনের আগে ফাঁসি দিতে হবে- এই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থেকেই তড়িঘড়ি করে তা করা হয়।
তিনি আরও বলেন, রিভিউ আবেদন খারিজের পর কেন তা খারিজ হলো, সে বিষয়টি রায়ে উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক হলেও সংক্ষিপ্ত রায়ে তা লেখা হয়নি। সাধারণত সংক্ষিপ্ত রায় দেওয়া হয় আসামিকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়ার সময়, কিন্তু এখানে তা উল্টোভাবে ব্যবহৃত হয়েছে।
এর আগে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি আজহারুল ইসলামের রিভিউ মঞ্জুর করে আপিলের অনুমতি দিয়ে (লিভ গ্রান্ট করে) ২২ এপ্রিল শুনানির দিন ধার্য করেন আপিল বিভাগ। সেই সঙ্গে সপ্তাহের মধ্যে আবেদনকারীদের আপিলের সারসংক্ষেপ জমা দিতে বলা হয়। তারপরের দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রসিকিউশন পক্ষকে সারসংক্ষেপ জমা দিতে বলেন আদালত।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রংপুর অঞ্চলে গণহত্যা-হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ, আটক, নির্যাতন ও গুরুতর জখম এবং বাড়িঘরে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের মতো ৯ ধরনের ৬টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছিল জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারের বিরুদ্ধে।
২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায়ে ২ নম্বর, ৩ নম্বর এবং ৪ নম্বর অভিযোগে ফাঁসির দণ্ডাদেশ পান আজহারুল ইসলাম। এ ছাড়া ৫ নম্বর অভিযোগে অপহরণ, নির্যাতন, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অমানবিক অপরাধের দায়ে ২৫ বছর ও ৬ নম্বর অভিযোগে নির্যাতনের দায়ে ৫ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।
ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলে শুনানির পর ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় ঘোষণা করেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ। আপিল বিভাগের রায়ে ২, ৩, ৪ (সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে) ও ৬ নম্বর অভিযোগের দণ্ড বহাল রাখা হয়।
আর ৫ নম্বর অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেওয়া হয়। ওই দিন আদালতে আসামিপক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী (প্রয়াত) খন্দকার মাহবুব হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন (প্রয়াত) অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
২০২০ সালের ১৫ মার্চ আপিল বিভাগের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়। ওই রায়ের রিভিউ চেয়ে ২০২০ সালের ১৯ জুলাই আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট আবেদন করেছিলেন এটিএম আজহারুল ইসলাম। ২৩ পৃষ্ঠার পুনর্বিবেচনার এ আবেদনে মোট ১৪টি যুক্তি উপস্থাপন করা হয়। ওই পুনর্বিবেচনার আবেদনের শুনানি শেষে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে এটিএম আজহারুল ইসলামকে আপিলের অনুমতি দিয়েছেন।
মন্তব্য করুন