দক্ষিণ-পূর্ব স্পেনের একটি শহরের ক্রীড়া সেন্টারে প্রকাশ্যে ধর্মীয় জমায়েত নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। ধারণা করা হচ্ছে, মূলত এখানে বসবাসকারী মুসলিম সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করেই এই নিয়ম আরোপ করা হয়েছে। স্পেনের বামপন্থি কেন্দ্রীয় সরকার এই নিষেধাজ্ঞার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং জাতিসংঘের একজন বিশেষ প্রতিনিধিও এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। খবর আল জাজিরার।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত শুক্রবার স্পেনের অভিবাসনমন্ত্রী এরমা সাইজ বলেন, সম্প্রতি জুমিল্লার রক্ষণশীল স্থানীয় সরকার যে নতুন বিধিনিষেধ অনুমোদন করেছে তা অত্যন্ত লজ্জাজনক। তিনি স্থানীয় নেতাদের ‘নির্দেশনা তুলে নেওয়ার জন্য’ আহ্বান জানিয়ে, বাসিন্দাদের কাছে ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
নতুন নিয়মটি অনুমোদন দিয়েছেন শহরটির মধ্য-ডানপন্থি পপুলার পার্টির মেয়র। পূর্বে মুসলিম সম্প্রদায় ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার মতো ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে ক্রীড়া সেন্টারগুলো ব্যবহার করতেন, কিন্তু এখন থেকে সেখানে ধর্মীয় জমায়েত করা যাবে না বলে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে নতুন সিদ্ধান্তে।
নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাবনা এসেছে কট্টর ডানপন্থি ভক্স পার্টির পক্ষ থেকে। নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার আগে সংশোধনী পাস করা হয়েছে। মার্সিয়া অঞ্চলের ভক্স পার্টির এক শাখা সামাজিক মাধ্যমে বলেছে, ‘স্পেন খ্রিস্টান শিকড়ের দেশ এবং সবসময় তাই থাকবে।’
শহরের মেয়র সেভ গঞ্জালেস সংবাদমাধ্যম ‘এল পাইস’-কে জানান, কোনো এক সম্প্রদায়কে বিশেষভাবে টার্গেট করা হয়নি, বরং স্থানীয় সংস্কৃতির পরিচয় রক্ষার চেষ্টা চলছে।
স্পেনের ইসলামিক কমিউনিটি ইউনিয়নের সেক্রেটারি মোহাম্মদ এল গাইদৌনি বলেন, এই নিষেধাজ্ঞা প্রাতিষ্ঠানিক ইসলামোফোবিয়ার মতো এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষ যে ধর্মীয় জমায়েতগুলো শহরের নিজস্ব পরিচয়ের সঙ্গে মিলছে না বলেছে, তা অগ্রহণযোগ্য।
তিনি আরও জানান, এই নিষেধাজ্ঞা স্পেনের ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষার সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের সঙ্গে সংঘর্ষিক।
জাতিসংঘের ইসলামোফোবিয়া মোকাবিলায় বিশেষ দূত মিগুয়েল মোরাটিনোস বলেছেন, তিনি জুমিল্লা সিটি কাউন্সিলের সিদ্ধান্তে গভীর মর্মাহত এবং স্পেনের কিছু অঞ্চলে বেড়ে ওঠা জেনোফোবিক ও ইসলামোফোবিক মনোভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন।
গতকাল এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্ত ‘মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রে সুরক্ষিত চিন্তা, বিবেক ও ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকারকে ক্ষুণ্ন করে।’ তিনি আরও বলেন, এক সম্প্রদায়কে আলাদা করে বা অসমানভাবে প্রভাবিত করা সামাজিক সংহতির জন্য বড় হুমকি এবং সবার শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের অধিকারকে নষ্ট করে।
নতুন এই নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী, শহরের ক্রীড়া সেন্টারগুলো শুধু খেলাধুলার জন্য এবং স্থানীয় সরকারের আয়োজনে ব্যবহৃত হবে। কাউন্সিলের অনুমতি ছাড়া সেখানে কোনো সাংস্কৃতিক, সামাজিক বা ধর্মীয় অনুষ্ঠান করার অনুমতি নেই।
মন্তব্য করুন