

৪১তম বিসিএসে উত্তীর্ণ ১৯৩ জন নন-ক্যাডার প্রার্থীকে সহকারী সমাজসেবা অফিসার হিসেবে নিয়োগ দিতে আজ রায় প্রদান করেছেন হাইকোর্ট। বাংলাদেশ কর্ম কমিশনকে রায়ের কপি হাতে পাওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে ওই ১৯৩ নন-ক্যাডার প্রার্থীকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এ বিষয়ে করা রিটের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকার ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সরোয়ারের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় প্রদান করেন।
আদালতে রিটকারীদের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব। তাকে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট বায়েজীদ হোসাইন, অ্যাডভোকেট নাঈম সরদার, ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষার ও অ্যাডভোকেট লোকমান হাকিম।
গত বছরের ১৯ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব ৪১তম বিসিএসে উত্তীর্ণ নন-ক্যাডার প্রার্থী সানজানা কবীর ঈশা, মো. তারেকুর রহমানসহ ১৯০ জনের পক্ষে সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি করেন। পরে আরও তিনজন ওই রিট মামলায় আবেদনকারী হিসেবে সংযুক্ত হন।
এরও আগে গত বছরের ১৪ মার্চ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান, কমিশনের সচিব এবং পিএসসির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে আবেদনকারীদের নিয়োগের সুপারিশ করতে ইমেইলে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশে অপেক্ষমাণ প্রার্থীদের নন-ক্যাডার দ্বিতীয় শ্রেণির পদ ‘সহকারী সমাজসেবা অফিসার’ পদে সুপারিশের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হয়। কিন্তু লিগ্যাল নোটিশ পাওয়ার পরও কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় এই রিট করা হয়। গত বছরের ২০ মার্চ মহামান্য হাইকোর্ট ওই রিট মামলার প্রাথমিক শুনানি নিয়ে রুল প্রদান করেন। সেই রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে আজ হাইকোর্ট এই রায় প্রদান করেন।
রিটে বলা হয়েছে, ৪১তম বিসিএস পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর প্রকাশিত হয়। ওই বিসিএসে সর্বমোট ১২ হাজার ৩৪১ জন পরীক্ষার্থী প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী শূন্যপদে ক্যাডার সার্ভিসে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পদস্বল্পতার কারণে ৯ হাজার ৮২১ জন প্রার্থীকে ক্যাডার পদের সুপারিশ করা সম্ভব হয়নি। প্রিলিমিনারি, লিখিত, মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কিন্তু পদস্বল্পতার কারণে বঞ্চিত এসব নন-ক্যাডার প্রার্থীকে পিএসসি সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে চাহিদার ভিত্তিতে সুপারিশ করে থাকে।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ২০২৩ সালের ২৫ জুন ৪১তম বিসিএস নন-ক্যাডার থেকে ‘সহকারী সমাজসেবা অফিসার’ (১০তম গ্রেড) এর ১৯৫টি পদে সুপারিশের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে জানায়। পরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পদগুলোতে সুপারিশ করতে বাংলাদেশ কর্ম কমিশনকে অনুরোধ জানায়। কিন্তু পিএসসি ওই পদে ৪১তম বিসিএস নন-ক্যাডার থেকে সুপারিশ করেনি। অথচ সহকারী সমাজসেবা অফিসার পদে সুপারিশ পেতে নোটিশদাতাদের প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা বিদ্যমান ছিল। কিন্তু পদগুলোতে তাদের সুপারিশ করা হয়নি।
এতে আরও বলা হয়েছে, সমাজসেবা অধিদপ্তর (গেজেটেড এবং নন-গেজেটেড কর্মকর্তা) নিয়োগ বিধিমালা ২০১৩, (সংশোধিত বিধিমালা, ২০২০) মতে, উক্ত সহকারী সমাজসেবা অফিসার পদে নিয়োগ পেতে হলে একজন প্রার্থীকে নির্দিষ্ট শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি কোনো স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান থেকে কম্পিউটার চালনায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হতে হবে।
রিট আবেদনকারীদের প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি বিধিতে উল্লিখিত কম্পিউটার চালনায় প্রশিক্ষণ থাকা সত্ত্বেও পিএসসি তাদের ওই পদে আবেদনেরই কোনো সুযোগ দেয়নি। ফলে সুপারিশ করেনি, যা আইনের দৃষ্টিতে অন্যায় এবং ন্যায়বিচারবহির্ভূত। অথচ বিধি পাস হওয়ার আরও পরে ২০২২ সালের ২৯ মার্চ, ৩৮তম বিসিএস নন-ক্যাডার প্রার্থীদের ওই পদে সাধারণভাবে সুপারিশ ও নিয়োগ দেওয়া হয়। এর দ্বারা রিট আবেদনকারীদের প্রতি চরম বৈষম্য করা হয়।
রিটে আরও বলা হয়েছে, ‘নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ (বিশেষ) বিধিমালা ২০১০, সংশোধিত ‘বিধিমালা ২০১৪’ অনুযায়ী ৪১তম বিসিএস নন-ক্যাডার সুপারিশের জন্য অপেক্ষমাণ প্রার্থীরা ওসব পদে সুপারিশ ও নিয়োগ পেতে আইনিভাবে উপযুক্ত।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব বলেন, আজ হাইকোর্ট ৪১তম বিসিএস নন-ক্যাডার অপেক্ষমাণ প্রার্থীদের মধ্য থেকে ১৯৩ জনকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘সহকারী সমাজসেবা অফিসার’ পদে নিয়োগের সুপারিশ করতে রায় দিয়েছেন। আশা করছি ৩ নম্বর বিবাদী তথা বাংলাদেশ কর্ম কমিশন ওই রায়ের কপি প্রাপ্তির ৬০ দিনের মধ্যেই আবেদনকারীদের উক্ত সহকারী সমাজসেবা অফিসার পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করবেন এবং আবেদনকারী চাকরি প্রার্থীরা ন্যায়বিচার পাবেন।
মন্তব্য করুন