মশা নিধনের জন্য কীটনাশক সরবরাহে সিঙ্গাপুরের একটি কোম্পানির নাম ব্যবহার করে জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগে করা মামলায় মার্শাল এগ্রোভেট কেমিক্যাল ইন্ডস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলীসহ তিনজনের রিমান্ড ও জামিন উভয় নামঞ্জুর করেছেন আদালত।
সোমবার (৯ অক্টোবর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলামের আদালত শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। এ মামলার অপর দুই আসামি হলেন- একই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আলাউদ্দিন ও নির্বাহী পরিচালক মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ।
এদিন আসামিদের পক্ষে রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আসামিপক্ষ আবেদন করেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিন ও রিমান্ড আবেদনটি নামঞ্জুর করেন।
এর আগে গত ২৪ আগস্ট উচ্চ আদালত থেকে ছয় সপ্তাহের জামিন পান আসামিরা। এরপর গত ৬ অক্টোবর ছয় সপ্তাহের জামিন শেষ হওয়ায় আসামিরা উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ঢাকার সিএমএম আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রেজাউল করিম চৌধুরীর আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। গত ৭ অক্টোবর ডিবি পুলিশের পরিদর্শক কাজী শরীফুল ইসলাম জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন। এরপর আদালত তাদের উপস্থিতিতে ৯ অক্টোবর রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করেন।
গত ২১ আগস্ট মশা নিধনের কীটনাশক সরবরাহে জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগ তুলে মার্শাল এগ্রোভেট কেমিক্যাল ইন্ডস্ট্রিজ লিমিটেডের এই তিন কমকর্তাসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সহকারী ভাণ্ডার ও ক্রয় কর্মকর্তা মো. রাহাত আল ফয়সাল। মামলার অপর আসামি হলেন- চীনা নাগরিক লি কিউইয়াং।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ডেঙ্গু মশক নিধন কাজে ব্যবহারের জন্য পাঁচ হাজার কেজি কীটনাশক সরবরাহ কাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে মার্শাল এগ্রোভেট কেমিক্যাল ইন্ডস্ট্রিজ লিমিটেড দরপত্র দাখিল করলে কোম্পানির দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত হয়। দরপত্রের চুক্তি মোতাবেক উল্লিখিত কীটনাশক সিঙ্গাপুর থেকে আমদানি করে সরবরাহ করবে এবং যাতে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত গ্যারান্টি থাকবে। এরপর আসামিরা সিঙ্গাপুর হতে আমদানিকৃত বলে সে দেশীয় কোম্পানি বেস্ট কেমিক্যাল কোম্পানি লিমিটেডের নামসংবলিত ও তাদের মোড়ক ব্যবহার করে উল্লিখিত কীটনাশক গত ১ আগস্ট ঢাকা উত্তর সিটি করপোশনের ক্রয় ভাণ্ডারে সরবরাহ করে। সরবরাহের পর গত ৩ আগস্ট প্রজেক্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র এবং স্থানীয় সরকারমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে আসামিরা চীনা নাগরিক লি কিউইয়াংকে সিঙ্গাপুরের কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থাপন করেন। পরবর্তীতে অনুষ্ঠানটির সংবাদ গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত হলে সংবাদটি ওই বেস্ট কেমিক্যাল কোম্পানির দৃষ্টিগোচর হয়। গত ১৪ আগস্ট তারা তাদের ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে পোস্ট করে জানায়, তারা বাংলাদেশের কোনো প্রতিষ্ঠানকে উল্লিখিত কীটনাশক সরবরাহ করেনি। পোস্টটি প্রকাশিত হওয়ার পর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে তাদের সাথে যোগাযোগ করলে গত ১৭ আগস্ট সিঙ্গাপুরের কোম্পানিটি আসামিগণের প্রতারণার বিষয়টি লিখিতভাবে অবহিত করেন।
মন্তব্য করুন