রাজধানীর পৃথক চার থানার মামলায় বিএনপি-জামায়াতের ৫৯ নেতাকর্মীর বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন আদালত। সোমবার (১১ ডিসেম্বর) ঢাকার পৃথক তিনটি মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এ রায় ঘোষণা করেন। তবে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ৪৯ জনের বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত।
রাজধানীর তেজগাঁও থানায় করা নাশকতা ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগের মামলায় যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরবসহ ১০ জনের পৃথক দুই ধারায় তিন বছরের সাজা সাজা দেন। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসানের আদালত এ রায় ঘোষণা করেন। এ মামলার সাজা প্রাপ্ত অপর আসামিরা হলেন- সাবেক কাউন্সিলর আনোয়ারুজ্জামান, লুৎফর রহমান, শাহীন ওরফে গান্ডু শাহীন, তরিকুল ইসলাম ওরফে ঝন্টু, আমিনুল ইসলাম জাকির, গোলাম কিবরিয়া শিমুল, বিল্লাল হোসেন, শহিদুল ইসলাম ও জাকির হোসেন। আসামিদের মধ্যে সাইফুল আলম নীরব ও আনোয়ার রায় ঘোষণার সময় আদালতে হাজির ছিলেন। রায় শেষে সাজা পরোয়ানা দিয়ে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। এ ছাড়া পলাতক ৮ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। ২০১৩ সালের ২৬ মার্চ কাওরান বাজারের ওয়াসা ভবন এলাকায় ট্যাক্সিতে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী গাড়ির চালক বাবুল তেজগাঁও থানায় মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করে তেজগাঁও থানার উপ-পরিদর্শক মাহবুবুর রহমান ২০১৪ সালের ১৪ আগস্ট আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
রাজধানীর পল্টন থানার নাশকতার মামলায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম মজনু ও জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদসহ ১০ জনের আড়াই বছরের সাজা দিয়েছেন আদালত। সোমবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মইনুল ইসলাম এ রায় ঘোষণা করেন। তবে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ৪৫ আসামিকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত। সাজাপ্রাপ্ত উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন- স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূইয়া জুয়েল ও যুবদল নেতা খন্দকার এনামুল হক এনাম।
২০১২ সালের ১ ডিসেম্বর বিএনপি জামায়াতের নেতাকর্মীরা মিছিল বের করলে পুলিশ বাধা দেয়। এসময় তারা পুলিশের ওপর চড়াও হয়ে ইটপাটকেল ও ককটেল নিক্ষেপ করে। এ ছাড়াও ঘটনাস্থলে থাকা গাড়ি ভাঙচুর করে বলেও মামলায় অভিযোগ করা হয়।
হরতাল অবরোধের সমর্থনে বিএনপির নেতাকর্মীরা গুলশান এলাকায় বেআইনিভাবে জনতাবদ্ধ হন। তারা জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির লক্ষ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। ২০১৮ সালের ২৩ অক্টোবর পুলিশ বাদী হয়ে গুলশান থানায় মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে ২০১৯ সালের ১ এপ্রিল ১১ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় পুলিশ। এ মামলায় মামলায় বিএনপির আরও ১১ নেতাকর্মীর পৃথক তিন ধারায় সাড়ে চার বছরের সাজা দিয়েছেন আদালত। রায়ে দণ্ডবিধির ১৪৩ ধারায় ৬ মাস, ১৪৭ ও ৪২৭ ধারায় দুই বছর করে চার বছরের সাজা দেন। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসানের আদালত এ রায় ঘোষণা করেন। আসামিদের মামুন ও ওয়াসিম কারাগারে আটক রয়েছেন। তবে অপর নয় আসামি পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
কামরাঙ্গীরচর থানার মামলায় বিএনপির ১২ নেতাকর্মীর বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন আদালত। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরীর আদালত এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে এক আসামির এক বছর, ছয়জনের দুই বছর এবং অপর পাঁচ জনের দেড় বছরের সাজা দিয়েছেন আদালত। সাজা প্রাপ্ত উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন- মো. মনির হোসেন, মো. রাসেল, আবুল কালাম ও মো. কবির হোসেন।
কামরাঙ্গীরচর থানার আরেক মামলায় মামলায় বিএনপির ১৬ নেতাকর্মীর বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন আদালত। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরী এ রায় ঘোষণা করেন। এদের মধ্যে সাত জনের ৩৫৩ ধারায় দুই বছরের সশ্রম সাজা এবং পেনাল কোডের ৪৩৫/১৪৯ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে তিন বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন আদালত। অপর নয় জনকে ৩৫৩ ধারায় এক বছর এবং ৪৩৫/১৪৯ ধারায় দুই বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও তিন হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে এক মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন আদালত। তবে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় চার জনকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন।
মন্তব্য করুন