সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এ যুগে পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ, তথ্যের আদান-প্রদান বেড়েছে। এতে যোগাযোগ যেমন সহজতর হয়েছে, তেমনি বেড়েছে ব্যক্তিগত তথ্য, ছবি ও ভিডিওর অপব্যবহার। ফলে বাড়ছে ব্ল্যাকমেইলিংসহ নানারকম হয়রানিও।
বিশেষ করে সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিচ্ছেদ ঘটলে ফেক আইডি খুলে বিভিন্ন গ্রুপ আর ইউটিউবে ছড়িয়ে পড়ছে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও। অপমানে, লজ্জায় অনেকেই মনে করেন আত্মহননই তার মুক্তির একমাত্র পথ, কেননা প্রতিকার চাওয়া তো দূরের কথা অনেক সময় লোকলজ্জার ভয়ে তা প্রকাশও মুশকিল হয়ে পড়ে। এমন ভুক্তভোগী আমাদের আশপাশের অনেকেই।
হালের আতঙ্ক এ ধরনের সাইবার অপরাধের শিকার হতে পারেন যে কেউ। এ অবস্থায় করণীয় কী? ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) এ ধরনের সমস্যার করণীয় সম্পর্কে জানিয়েছে। আপনিও জেনে নিন।
ফেসবুক বা ই-মেইল অ্যাকাউন্ট হ্যাক হওয়া, ফেক আইডি খুলে আপত্তিকর ছবি/ভিডিও শেয়ার, উগ্রধর্মীয়-সন্ত্রাসবাদী লেখা ও ছবি শেয়ার, অন্যকে ফাঁসানোর উদ্দেশ্যে বিকৃত তথ্য ও ছবি ব্যবহার, হুমকি দিয়ে টাকা আদায়, অনলাইনে প্রশ্নফাঁস ইত্যাদি।
প্রাথমিকভাবে অভিযোগ করতে পারেন নিকটস্থ থানায়। অথবা ই-মেইলে অভিযোগ জানাতে পারেন [email protected] এই ঠিকানায়।
যদি পরিচয় গোপন রেখে অভিযোগ করতে চান তাহলে ‘Google Play Store’ থেকে ডাউনলোড করুন ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ডিভিশন এর ‘Hello CT’ অ্যাপ্লিকেশন (অ্যাপ)। এই অ্যাপের সাহায্যে পাঠাতে পারবেন আপনার ব্যক্তিগত তথ্য ও অভিযোগ। যা সম্পূর্ণ নিরাপদ ও অপ্রকাশিত থাকবে। সরাসরি কথা বলার প্রয়োজন হলে চলে আসতে পারেন ‘৩৬, শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলী স্মরণী, রমনা, ঢাকা’ ঠিকানার ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ডিভিশনের সাইবার ক্রাইম ইউনিট কার্যালয়ে। কথা বলতে পারেন দায়িত্বরত কর্মকর্তার সঙ্গে।
পুলিশের পরামর্শ অনুযায়ী সাইবার ক্রাইমের ঘটনার শিকার হলে দ্রুত অভিযোগ করা উচিত। অভিযোগের ক্ষেত্রে কিছু তথ্য ও প্রমাণ সঙ্গে রাখা প্রয়োজন। সাইবার ক্রাইমের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আলামতের স্ক্রিনশট, লিংক, অডিও/ভিডিও ফাইল অথবা সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র। স্ত্রিনশট সংগ্রহের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যেন অ্যাড্রেসবারের ইউআরএলটি দেখা যায়। এ ছাড়া পুলিশের ‘Hello CT’ অ্যাপ ও ই-মেইলের মাধ্যমে অভিযোগ জানাতে চাইলে এসব তথ্যপ্রমাণাদি অ্যাটাচ করে আপলোড করা যাবে। সরাসরি দেখা করে অভিযোগ জানানোর ক্ষেত্রে সফটকপি দেওয়া যেতে পারে। পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে সাইবার ক্রাইম ইউনিটের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের সঙ্গেও।
১. অপরিচিত কারো ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট গ্রহণ না করা। ২. ফেসবুকে নিজের ব্যক্তিগত তথ্য সবার জন্য উন্মুক্ত না রাখা। ৩. ফেসবুক প্রোফাইলের প্রাইভেসি সেটিংস চেক করুন। অন্য কারও পোস্টে আপনাকে ট্যাগ করার অপশন উন্মুক্ত না রাখা। ৪. প্ররোচিত হয়ে উস্কানিমূলক ছবি/ভিডিও শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন। ৫. সন্দেহজনক কোনো লিংকে ক্লিক করবেন না। ৬. লগ-ইন আইডি ও পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করুন এবং প্রতিবার ব্যবহার শেষে লগ-আউট করুন। ৭. সন্দেহজনক কোনো ই-মেইল বা মেসেজের উত্তর দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। ৮. পরিচিতজনের বিপদের কথা জানিয়ে ই-মেইল অথবা মেসেজ এলে যাচাই করুন এবং যোগাযোগের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন। ৯. বিপুল পরিমাণ অর্থ লটারিতে জিতেছেন—এমন ই-মেইল বা মেসেজের উত্তর দেবেন না। এসব তথ্যসম্বলিত মেইল অনুসন্ধানে ভুয়া বলে প্রমাণিত হয়েছে।
মন্তব্য করুন