ড. ইউনূস প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে খোলা চিঠি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার ওপর বিশ্বনেতাদের অযাচিত হস্তক্ষেপ বলে অভিহিত করে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।
গত ২৮ আগস্ট বেশ কয়েকজন নোবেল বিজয়ী, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের সম্মানিত সদস্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একটি খোলা চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে তারা বাংলাদেশের শ্রম আইনে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে চলমান মামলা স্থগিত করতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান।
ওই চিঠি নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন ঢাবির শিক্ষক নেতারা। সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত এক প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৪(৪) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাংলাদেশের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণরূপে স্বাধীনভাবে বিচারকার্য পরিচালনা করে থাকে। কাজেই এ ধরনের চিঠি দেওয়ার মাধ্যমে তারা অনৈতিক, বেআইনি ও অসাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার ওপর হস্তক্ষেপ করেছেন বলে আমরা মনে করি।’
এতে আরও বলা হয়, ‘আরও উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষণীয়, চিঠিতে স্বাক্ষরকারী ব্যক্তিবর্গ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের স্বার্থরক্ষায় আগ্রহী হলেও শ্রমিকদের মানবাধিকার ও আইনি সুরক্ষার বিষয়ে সম্পূর্ণভাবে নিশ্চুপ থেকেছেন। এ ধরনের বিবৃতি আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এবং বাংলাদেশের আইনে শ্রমিকদের প্রদত্ত অধিকারসংক্রান্ত বিধানাবলির সম্পূর্ণ পরিপন্থি।’
শিক্ষক নেতারা বলেন, শ্রম আইন ২০০৬-এর ধারা ২৩৪ অনুযায়ী গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে শ্রমিক কর্মচারী কল্যাণ তহবিল গঠন না করা এবং ধারা ৪ (৭) ও ৪(৮) অনুযায়ী শ্রমিকদের চাকরিতে স্থায়ী না করার অভিযোগ করেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরাই। অধিকন্তু অন্য একটি মামলায় বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
‘আমাদের জানা মতে, খোলা চিঠিতে যেসব সম্মানিত ব্যক্তিত্বের নাম রয়েছে, তাদের দেশেও শ্রমিকদের অধিকার ও রাষ্ট্রীয় বিধি-বিধানকে সর্বোচ্চ সম্মান ও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। তা ছাড়া একই চিঠিতে বাংলাদেশের গণতন্ত্র এবং নির্বাচনসংক্রান্ত বিষয়ে যে ধরনের মন্তব্য করা হয়েছে, তা স্বাধীন সার্বভৌম একটি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সরাসরি হস্তক্ষেপের শামিল। মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশের জনগণ এ ধরনের অবমাননাকর, অযাচিত ও বেআইনি হস্তক্ষেপ কোনোভাবেই মেনে নেবে না’- যোগ করেন শিক্ষক নেতারা।
তারা বলেন, ‘এ ধরনের বিবৃতির পেছনে গোপন কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিহিত রয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।আমরা সংশ্লিষ্ট সবাইকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা এবং শ্রমিকদের অধিকারের বিষয়ে সম্মান প্রদর্শনের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’
মন্তব্য করুন