জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হলের কক্ষ না ছাড়া এবং কক্ষে ধূমপান ও উচ্চস্বরে গান বাজানোর প্রতিবাদ করায় কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী এবং সিনিয়র কর্তৃক জুনিয়রকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার বিচার চেয়ে হল প্রাধ্যক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।
গত রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্মিত শেখ রাসেল হলের ৮১৬ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। পরে মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) হল প্রাধ্যক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী।
ভুক্তভোগী মো. মাহিবি রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (৫০তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী। অভিযুক্তরা হলেন- কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের প্রিতম সাহা ও প্রকাশ মিত্র, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের মাহবুব রহমান উৎসব ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের মির্জা তৌফিক রায়হান এবং পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের মুশফিকুর রহমান পরশ। তারা সবাই শেখ রাসেল হলে অবস্থান করেন। এদের মধ্যে, প্রিতম ও প্রকাশ ভুক্তভোগী মাহিবির রুমমেট এবং পরশ ও উৎসব ছাত্রলীগ কর্মী।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, হলের ৮১৬ নম্বর কক্ষে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ৫০তম ব্যাচের দুজন ও সিএসই বিভাগের ৫০তম ব্যাচের দুজনকে বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে হল চালু হওয়ার পর সিএসই বিভাগের ১৫ থেকে ২০ জন গিয়ে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের দুজনকে অন্য কক্ষে যেতে বলেন। তখন তারা অন্য কক্ষে যেতে অস্বীকৃতি জানান। পরে সিএসই বিভাগের দুজনকে অন্য কক্ষে পাঠিয়ে একই বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের প্রিতম সাহা ও প্রকাশ মিত্র ৮১৬ নম্বর কক্ষে ওঠেন। এরপর থেকে প্রিতম ও প্রকাশ নিয়মিত কক্ষে ধূমপান করেন। পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের দুজনকে কক্ষছাড়া করতে অন্য কক্ষের বন্ধুদের ডেকে এনে কার্ড খেলেন, রাতভর সাউন্ডবক্সে গান বাজান ও মাদক সেবন করেন।
এতে আরও বলা হয়, গত সোমবার রাতে ইউটিউবে ভিডিও দেখছিলেন মাহিবি। এ সময় প্রিতম সাহা তাকে হেডফোন ব্যবহার করতে বললেও পূর্ব ক্ষোভের ফলে তিনি কথা শোনেননি। তখন প্রিতম সাহা অভিযুক্ত অন্য তিনজনকে কক্ষে ডেকে নিয়ে আসেন। কক্ষে গিয়ে মাহিবিকে থাপ্পড় মারেন মুশফিকুর রহমান পরশ। পরে উৎসব গালিগালাজ করে তাকে আরো দুটি থাপ্পড় মারের। এছাড়া কোথাও অভিযোগ করলে অবস্থা আরও খারাপ হবে বলে হুমকি দেন। এমনকি তারা হলের প্রাধ্যক্ষকে গালিগালাজ করেন।
ভুক্তভোগী মো. মাহিবি রহমান বলেন, আমাদের পরীক্ষা ও অ্যাসাইনমেন্ট থাকলেও তারা ধূমপান ও উচ্চস্বরে গান বাজায়। আমরা প্রতিবাদ করলেও কর্ণপাত করে না। তাদের খারাপ ব্যবহার ও হুমকির জন্য আমরা সবসময় মানসিক যন্ত্রণায় থাকি। আমাদের পরীক্ষার আগের দিন তারা ইচ্ছাকৃতভাবে বন্ধুবান্ধবকে ডেকে এনে সাউন্ডবক্সে গান বাজায় ও বিরক্ত করে। তাই সেদিন আমাকে ভিডিও বন্ধ করতে বললেও আমি শুনিনি। ফলে তারা অন্য বন্ধুদের ডেকে এনে আমাকে মারধর করে।
তবে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে তৌফিক রায়হান বলেন, গতকাল রাতে প্রিতম যখন জানায় যে রুমমেট জুনিয়র তার কথা শুনছে না, তখন আমরা তার রুমে যাই। একরুমে থাকতে গেলে উভয়পক্ষকে কিছুটা সহনশীল হতে হবে এভাবে বুঝিয়ে বলি। মারধরের তো প্রশ্নই আসে না। অথচ আজ অভিযোগপত্রে মারধরের উল্লেখ দেখে খুবই অবাক হয়েছি।
আরেক অভিযুক্ত প্রিতম সাহা বলেন, মাহিবি জুনিয়র হওয়া সত্ত্বেও তার আচরণে যথেষ্ট সমস্যা ছিল। আমরা রুমে ধূমপান করি সত্য, তবে কোনোধরনের মাদক সেবন করি না। তাকে জোরে ভিডিও ছাড়তে নিষেধ করেছি। সে না শোনায় আমার বন্ধুরা তাকে উচ্চস্বরে ধমক দিয়েছে। মারধরের ঘটনা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
এ বিষয়ে হলের প্রাধ্যক্ষ তাজউদ্দিন শিকদার বলেন, আমি একটি লিখিত অভিযোগপত্র পেয়েছি। আমি হলে ওয়ার্ডেন ও অন্য কর্মকর্তাদের বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। মারধরের ঘটনা ঘটলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন