রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে ছাত্রশিবির-সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের পরিচিতি সভায় বিতরণের জন্য আনা প্রায় ২০০ প্যাকেট খাবার ফেরত পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
সোমবার (১৩ অক্টোবর) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মন্নুজান হল ও খালেদা জিয়া হলে আয়োজিত প্রোজেকশন মিটিং (পরিচিতি সভা) উপলক্ষে এসব খাবার আনা হয়েছিল। পরে নির্বাচন কমিশন হলে গিয়ে খাবার ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেয়। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
এদিকে পরিচিতি সভায় বাধা দেওয়ার অভিযোগ এনে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে মৌখিক অভিযোগ জানিয়েছে ছাত্রশিবির-সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা। এ সময় তারা রাত সাড়ে ৮টা থেকে প্রায় ৪০ মিনিট নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও কমিশন সূত্রে জানা যায়, রাকসু নির্বাচনের আচরণবিধি অনুযায়ী প্রজেকশন সভায় খাবার বিতরণ অনৈতিক বলে অভিযোগ করেছিল ছাত্রদল-মনোনীত প্যানেল। সোমবার সন্ধ্যায় খালেদা জিয়া হলে শিবির-সমর্থিত প্যানেল পরিচিতি সভার আয়োজন করে। তারা শিক্ষার্থীদের বসার জন্য বাইরে থেকে চেয়ার ভাড়া নেন, কিন্তু হল প্রশাসন নিজস্ব চেয়ার ব্যবহারের নির্দেশ দেয়।
রাত পৌনে ৮টার দিকে সভায় উপস্থিত শিক্ষার্থীদের জন্য টেস্টি ট্রিট রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার আনা হয়। এ সময় নির্বাচন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মোস্তফা কামাল আকন্দসহ অন্যান্য সদস্যরা হলে গিয়ে খাবার প্রবেশে বাধা দেন এবং সেগুলো ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেন। প্রায় পাঁচ বস্তায় আনা দুই শতাধিক প্যাকেট খাবার পরে ফেরত পাঠানো হয়।
এ ঘটনার পর ছাত্রশিবির-সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী ও নেতারা কমিশনের কাছে মৌখিক অভিযোগ দেন। তারা অভিযোগ করেন, কমিশন ও হল প্রশাসন তাদের প্রতি অসহযোগিতা করছে।
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদ ফয়সাল বাবু সাংবাদিকদের বলেন, ‘ছাত্রশিবির-মনোনীত প্যানেল এখন পর্যন্ত কোনো আচরণবিধি ভঙ্গ করেনি। কিন্তু অন্য প্যানেল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নিয়ম ভঙ্গ করলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আজ আমাদের সভায় চেয়ার ঢুকতে দেওয়া হয়নি, অতিথিদের জন্য আনা খাবারও বিতরণে বাধা দেওয়া হয়েছে। আচরণবিধিতে কোথাও খাবার নিষিদ্ধ বলা নেই। এভাবে পক্ষপাতমূলক আচরণ চললে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।’
খাবার ফেরত পাঠানোর বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. এফ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সব হলে পরিদর্শনে বের হয়েছিলাম। খালেদা জিয়া হলের গেটে দেখি একজন খাবারের প্যাকেট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। জানতে চাইলে সে জানায়, সম্মিলিত ছাত্রজোটের সভার জন্য খাবার এনেছে। তখন আমি তাকে বলি—এভাবে খাবার বিতরণ করা যাবে না। এরপর খাবারগুলো ফেরত পাঠাতে বলা হয়।’
তিনি বলেন, ‘রাকসু নির্বাচনে বেশ কয়েকজন প্রার্থী ছোটোখাটো আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন, তবে লিখিত অভিযোগ না থাকায় ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। যেসব অভিযোগ আনুষ্ঠানিকভাবে এসেছে, সেগুলো যাচাই করে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করা হয়েছে। আমরা স্পষ্টভাবে জানাতে চাই—এখন থেকে কোনো প্রার্থী প্রচারণায় খাবার পরিবেশন করতে পারবেন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থীরা হয়তো এভাবে খাবার দেওয়ার সামর্থ্য রাখে না, কিন্তু জোটবদ্ধ প্রার্থীরা পারে। এতে প্রতিযোগিতায় বৈষম্য তৈরি হয়। আমরা চাই সবাই সমান সুযোগে নির্বাচনে অংশ নিক এবং আচরণবিধির মধ্যে থাকুক।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার জানান, নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে কমিশনের সদস্যরা নিয়মিত হলে পরিদর্শন করছেন। প্রার্থীরা নিয়মবহির্ভূত উপহার দিচ্ছে কি না বা কোনো ধরনের চাপ বা হুমকি দেওয়া হচ্ছে কি না, তাও তারা খতিয়ে দেখছেন।
মন্তব্য করুন