শিক্ষা ও গবেষণায় নানামুখী সুনাম থাকলেও মাদকের অবাধ সরবরাহ ভোগাচ্ছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়কে (খুবি)। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক মাদক সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সম্পৃক্ত থাকায় ক্যাম্পাস এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় অবস্থান করে মাদক সেবন ও নির্বিঘ্নে ব্যবসা করে আসছে চক্রটি।
গোয়েন্দা তথ্যের আলোকে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ইসলামনগর রোডের (হলরোড) মনিরের বিল্ডিং (হোয়াইট হাউস বলে পরিচিত), শাহ শিরিন সড়কের চারতলা বাসাসহ আরও বেশ কয়েকটি বাসায় নিয়মিত বা নির্দিষ্ট বিরতিতে বসে মাদকের আসর। বিশেষ করে বৃহস্পতিবার রাতে জমে ওঠে এ আড্ডা। যেটি মাদকসেবীদের কাছে ‘মহান বিশ্যুদবার’ নামে পরিচিত। এসব আসরে মাদক সরবরাহকারীরা যেমন থাকেন তেমনি অংশ নেন খুবির সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, খুলনা শহরের চেয়ে খালিশপুর, পার্শ্ববর্তী জেলা বাগেরহাট এবং যশোরে তুলনামূলক কম দামে পাওয়ায় সেসব জায়গা থেকে মাদকদ্রব্য নিয়ে আসে চক্রটি। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা হওয়ায় শহরের অন্য যে কোনো জায়গা থেকে পুলিশি ঝামেলা কম থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকা মাদক ব্যবসায়ীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।
এ ছাড়াও ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় বসেও মাদক সেবনের প্রমাণ রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে আবাসিক হলের রুমেও মাদকসেবনের দায়ে সিট বাতিলসহ বিভিন্ন শাস্তি হয়েছে শিক্ষার্থীদের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, মাদকসেবীরা ক্যাম্পাসে থাকতে জুনিয়রদের মধ্যে তাদের একটি বলয় তৈরি করেন। যাতে ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে যাওয়ার পরও এসব জুনিয়রের মাধ্যমে সহজে মাদক পেয়ে যান। এটি একটি শক্ত চেইন এবং এই ধারা যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য তারা সদা তৎপর।
বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, অবাধ সরবরাহ থাকায় অনেক নবীন শিক্ষার্থীরাও দ্রুত মিশে যাচ্ছে মাদকের সঙ্গে। নেশার সঙ্গে জড়িয়ে অনেক সম্ভাবনাময় তরুণ হয়ে যাচ্ছে পথভ্রষ্ট। যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। এদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
সম্প্রতি এদের কার্যক্রমে অতিষ্ঠ হয়ে খুলনা মহানগর পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। তারা বলছেন, বহিরাগত কিছু যুবক-যুবতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে মাঠসহ বিভিন্ন জায়গায় মাদক সেবন ও অসামাজিক কার্যক্রমে লিপ্ত। তাদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের চলাফেরা এবং আচরণ সন্দেহজনক। কিন্তু আত্মমর্যাদা ও নিজেদের মানসম্মানের ভয়ে অভিযোগ করতে পারছেন না।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ক্যাম্পাস সংলগ্ন এলাকায় মাদক সরবরাহকারীদের মধ্যে শিপার, জয় ও মুন্নার নাম বহুল পরিচিত। এ ছাড়াও লম্বা গোঁফ দ্বারা মুখ ঢাকা এবং দাড়িওয়ালা ছদ্মবেশী এক মাদক কারবারি রয়েছেন। যিনি ‘সোহাগ দাদা’ বলে পরিচিত।
অভিযোগের বিষয়ে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান সর্বদা চলমান। অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা ওই এলাকা থেকে ইতোমধ্যে পাঁচজনকে আটক করেছি এবং আমাদের অভিযান আরও জোরদার করা হবে। এই চক্রের সঙ্গে জড়িত কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক পরিচালক প্রফেসর মো. শরীফ হাসান লিমন বলেন, বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক মাদকাসক্তি খুবই কমন, আমরাও এর বাইরে না। ক্যাম্পাসেও বেশ কয়েকবার বহিরাগত ও আমাদের শিক্ষার্থীদের আটক করেছি। তবে মাদক সরবরাহের সঙ্গেও শিক্ষার্থীদের জড়িত থাকার ব্যাপারে শুনেছি এবং কিছু নামও আমার কাছে রয়েছে কিন্তু এদের কখনো হাতেনাতে ধরতে পারিনি। বিভিন্ন মাদক সেবন অবস্থায় যাদের পেয়েছি তাদের সবাইকে শাস্তির আওতায় নিয়ে এসেছি। মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে, কারও বিরুদ্ধে প্রমাণ পেলেই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মন্তব্য করুন