বিশ্ববিদ্যালয়ের আপগ্রেডেশন নীতিমালা ভঙ্গ করে শিক্ষকদের আপগ্রেডেশন বন্ধের অভিযোগ উঠেছে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি) প্রশাসনের বিরুদ্ধে।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক মো. মইনুল ইসলাম, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রভাষক মো. ইব্রাহীম শেখ, আইন বিভাগের প্রভাষক মো. হুমায়ুন কবিরের আপগ্রেডেশন শর্ত পূরণ হলেও নিয়মের তোয়াক্কা না করে বন্ধ করা হয়েছে তাদের আপগ্রেডেশন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আপগ্রেডেশন নীতিমালার দ্বিতীয় সংশোধনী ২০১৬ সালের ২৭ আগস্ট অনুষ্ঠিত ২০তম রিজেন্ট বোর্ডের সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে উন্নীত হওয়ার যোগ্যতা অনুযায়ী ‘প্রার্থীর কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়/ইনস্টিটিউট থেকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মাস্টার্স/সমমানের ডিগ্রি থাকতে হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে অন্তত দুই বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এ ছাড়া প্রার্থীর স্বীকৃত জার্নালে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দুটি প্রকাশনা থাকতে হবে। একটি প্রকাশনা থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে অন্তত দুই বছর ছয় মাসের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।’
এ ছাড়াও সাধারণ নীতিমালা অনুযায়ী ‘অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে (অনার্স/ মাস্টার্স) শিক্ষাদান/স্বীকৃত গবেষণা প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০ শতাংশ গবেষণা প্রতিষ্ঠানে গবেষক হিসেবে কর্মরতদের ক্ষেত্রে ৭৫ শতাংশ ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ পূর্ব অভিজ্ঞতা হিসেবে বিবেচনা করা হবে। কিন্তু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা গণ্য করা হবে।’
তবে নীতিমালার অনুযায়ী সকল শর্ত পূরণ হয়ে আপগ্রেডেশন বোর্ড অনুষ্ঠিত হলেও বাতিল করা হয়েছে উক্ত তিন শিক্ষকের আপগ্রেডেশন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র হতে জানা যায়, উক্ত শিক্ষকদের আপগ্রেডেশন বোর্ড হয় যথাক্রমে ২১ জুন, ১ মার্চ ও ২০ জুন অনুষ্ঠিত হয়।
এ ছাড়া আরও জানা যায়, দুই এর অধিক জার্নালসহ আপগ্রেডেশন বোর্ডের পূর্বে মইনুল ইসলামের দুই বছর ১০ মাস, মো. ইব্রাহিম শেখের দুই বছর ১১ মাস ও মো. হুমায়ুন কবিরের ছয় বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে। তবে আপগ্রেডেশন নীতি মালায় ‘নিজস্ব’ কিংবা ‘এই’ প্রতিষ্ঠানে সরাসরি অভিজ্ঞতার বিষয়ে কোথাও উল্লেখ না থাকলেও রিজেন্ট বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক জানানো হয় উক্ত তিন শিক্ষকের চাকরিকাল বিবেচনায় এনে বাছাই বোর্ডে সহকারী অধ্যাপক পদে উন্নীতের সুপারিশ করলেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই বছর পূর্ণ না হওয়ায় রিজেন্ট বোর্ড কর্তৃক আপগ্রেডেশন অনুমোদন হয়নি।
ভুক্তভোগী শিক্ষক মো. মইনুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় যেই আইন আছে, যেই নীতিমালা আছে, সেই অনুযায়ী অবশ্যই আমাদের আপগ্রেডেশন প্রাপ্য। আমাদের বিভাগ থেকে প্ল্যানিং করা হয়েছিল, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদেরকে আপগ্রেডেশন বোর্ড থেকে ভাইভা নেওয়া হয়েছিল আমরা সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি। আমরা অন্যায় ও অবিচারের শিকার হয়েছি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অসংখ্যবার গিয়েছি, আমরা ন্যায়বিচার পাইনি, আমরা বঞ্চিত হয়েছি।
এ বিষয়ে রিজেন্ট বোর্ডের চেয়ারম্যান বশেমুরবিপ্রবি ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. একিউএম মাহবুব বলেন, রিজেন্ট বোর্ড কিছু প্রমোশন আটকে দিয়েছে। সবাই কি প্রমোশন পাবে নাকি। যেই আইন আগে ছিল, সেটি (সাবেক উপাচার্য) নাসিরউদ্দিনের আমলের আইন। রিজেন্ট বোর্ড নাসিরউদ্দিনের আমলের আইন মানতে চাচ্ছে না। গত রিজেন্ট বোর্ড যেটি পাস করছে শিক্ষকরা সেটি রিভিউ করতে বলেছে। রিজেন্ট বোর্ড খেপে গেছে, ছয় মাস হলো না শিক্ষকরা রিভিউ করতে বলছে এটি রিভিউ কোনোদিনও হবে না। রিজেন্ট বোর্ড যেটি মনে করে সেটির যৌক্তিক কারণ আছে, চ্যান্সেলরও সেটি মানতে পারে।
উল্লেখ্য বশেমুরবিপ্রবি আইন, ২০০১ এর ৩২(১) নম্বর ধারা অনুযায়ী রিজেন্ট বোর্ডের এ সংক্রান্ত এখতিয়ার নির্দিষ্ট করা রয়েছে, ‘বাছাই বোর্ডের সুপারিশের সহিত রিজেন্ট বোর্ড একমত না হইলে বিষয়টি চ্যান্সেলরের নিকট প্রেরণ করিতে হইবে এবং এই ব্যাপারে তাহার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হইবে।’
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ আপগ্রেডেশন-সংক্রান্ত উক্ত ইস্যুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান আইন ভঙ্গ করা হয়েছে এবং যথাযথভাবে আইনের অনুসরণ করা হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
মন্তব্য করুন