দেশব্যাপী বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতা ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ র্যালি ও সমাবেশ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা। এদিকে, দলের ডাকা তিনদিনের অবরোধ কর্মসূচি সমর্থনসহ কয়েকটি দাবিতে মুখে কালো কাপড় বেধে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী শিক্ষকরা।
বুধবার (১ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় পাল্টাপাল্টি এ কর্মসূচি পালন করেন তারা।
জানা যায়, জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফেরাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যানারে আজ সকাল সাড়ে ১০টায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন বিএনপিপন্থী শিক্ষকরা। একই সময় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের ব্যানারে র্যালি করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা। র্যালিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের সামনে থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে। পরে শহীদ বুদ্ধিজীবী চত্বরের সামনে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন তারা।
জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফেরামের কর্মসূচিতে গত ২৮ অক্টোবর ঢাকার শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশে ক্ষমতাসীনদের নৃশংস হামলা, শিল্প কারখানার শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের আন্দোলনে হামলার প্রতিবাদ জানান তারা। এছাড়া বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের সহস্রাধিক নেতাকর্মী গ্রেপ্তার, আহত, নিহত, বাড়ি বাড়ি তল্লাশি, হয়রানি ও নির্যাতনের প্রতিবাদ জানিয়ে ১৫ মিনিট নিরবতা পালন করেন তারা।
পরে ফেরামের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এফ নজরুল ইসলাম বলেন, বিএনপি ঘোষিত মহাসমাবেশে অতর্কিত হামলা করেছে সরকার। ২০০৮ সালে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া একটা ঘোষণা দিয়েছিলেন, একটা মূলমন্ত্র দিয়েছিলেন যে, 'দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও'। তখন আমাদের দলের অনেকেই এই মন্ত্রের অর্থ বুঝতে পারেনি। কিন্তু এখন ২০২৩ সালে এসে সেটার মর্মার্থ বোঝা যাচ্ছে। আমি সবসময় বলি এদেশের শিক্ষাব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস করেছে এই ফ্যাসিবাদী সরকার। এদেশের মানুষ যেভাবে প্রতিবাদ করছে, এরকম আরও প্রতিবাদ করতে হবে, আরও রক্ত দিতে হবে। এই সরকারের পদত্যাগ করাতেই হবে।
এ সময় ফেরামের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মাসুদুল হাসান খান মুক্তা বলেন, শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশে আওয়ামী তাণ্ডব চালানো হয়েছে। সেই সমাবেশে বহু মানুষ হতাহত এবং অনেকেই আহত হয়েছে। এতেও সরকার ক্ষান্ত হয়নি। বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালিয়ে নির্যাতন কায়েম রেখেছে। বিএনপি যে কয়টা সমাবেশ হয়েছে সবগুলো শান্তিপূর্ণ ছিল। কিন্তু বর্তমান সরকার আমলে সমাবেশগুলো পণ্ড করার জন্য গাড়ি বন্ধ করে দিয়েছে। তারা আতঙ্কিত। এজন্য তারা সেদিন মহাসমাবেশে হামলা করেছে। আজকে আমরা এখানে দাঁড়িয়েছি শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার আদায়ের আন্দোলনে ক্ষমতাসীনের হামলা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং হরতালের আন্দোলনে আমাদের কর্মীরা নিহত হলো। এ রাষ্ট্রকে পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করার যে চেষ্টা এসবের বিরুদ্ধে আমরা প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
অবস্থান কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন যোগ দেয়। এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী শিক্ষক অধ্যাপক সায়েদুর রহমান পান্নু, অধ্যাপক ফজলুল হক, অধ্যাপক সাহেদ জামান, অধ্যাপক মতিয়ার রহমান, অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম, অধ্যাপক নুরুল হক মোল্লা, অধ্যাপক হীরা সোবহান প্রমুখসহ প্রায় শতাধিক শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের র্যালি শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সমাপনী বক্তব্য দেন আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের স্টিয়ারিং কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত সরকার সারাদেশে যে সহিংসতা ও নৈরাজ্য চালাচ্ছে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতেই আমাদের এই কর্মসূচি। সামনের দিনে তাদের নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে আমাদের আরও কর্মসূচি চলমান থাকবে।
এ সময় কর্মসূচিতে সাবেক উপ উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক দুলাল চন্দ্র বিশ্বাস, আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক হাসিবুল আলম প্রধান, সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌস, রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক লায়লা আরজুমান বানু, গণিত বিভাগের অধ্যাপক লুৎফর রহমানসহ শতাধিক শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন