মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে স্কুলপড়ুয়া শিশুরা মোবাইল গেম ও কার্টুনে আসক্ত হয়ে পড়েছে। উপজেলার বিভিন্ন প্রাথমিক স্কুলগুলো পর্যবেক্ষণে গেলে এমন চিত্র দেখা গেছে। বিশেষ করে শিশুশ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা এখন মোবাইল নিয়ে বসে থাকে। তবে শিশুশ্রেণির ছেলেমেয়েদের থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্রছাত্রীরা অ্যানড্রয়েড ফোন দিয়ে এসব গেমে আসক্ত হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার রানীবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বারান্দায় শিশুশ্রেণির তিনজন শিক্ষার্থীকে মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়।
আলাপকালে কয়েকজন অভিভাবক বলেন, ‘এখন শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবই নিয়ে ব্যস্ত থাকার কথা। বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাক্ষেত্রে ডিজিটাল ও তথ্যপ্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে। অথচ তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে শিক্ষার্থীরা জড়িয়ে পড়ছে গেমসের নেশায়। উঠতি বয়সের তরুণ প্রজন্ম প্রতিনিয়ত অ্যানড্রয়েড ফোন দিয়ে এসব গেমে আসক্ত হচ্ছে। এসব বিদেশি গেম থেকে ছেলেমেয়েকে ফিরিয়ে আনতে না পারলে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে বলেও তারা মনে করেন।’
কমলগঞ্জ সরকারি মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রনেন্দ্র কুমার দেব বলেন, অনলাইন ক্লাসের অজুহাতে অসচ্ছল পরিবারের সন্তানরাও অনেক দামি ফোন কিনছে। ছেলেমেয়ের শিক্ষার বিষয়টি বিবেচনা করে অভিভাবকরাও ধারদেনা করে ফোন কেনার টাকা জোগান দিচ্ছেন। অথচ অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা পরিবারের মোটা অঙ্কের অর্থ খরচ করে গেমসের জন্য ‘ডায়মন্ড ও ইউসি’ কিনছে। শিশুরা যেখানে টাকা জমিয়ে ক্রিকেট বল, ফুটবল কেনার কথা, সেখানে তারা টাকা জমিয়ে রাখছে ইউসি অথবা ডায়মন্ড কেনার জন্য।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সপ্তম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী জানান, ‘ফ্রি ফায়ার গেমস প্রথমে তাদের কাছে ভালো লাগত না। কিছুদিন বন্ধুদের দেখাদেখি খেলতে গিয়ে এখন তারা আসক্ত হয়ে গেছে। এখন গেমস না খেলাকে তাদের অস্বস্তিকর মনে হয়।’
কমলগঞ্জ সরকারি গণমহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ কামরুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘অনলাইন ক্লাসের অজুহাতে অভিভাবকদের কাছ থেকে অ্যানড্রয়েড ফোন শিক্ষার্থীদের হাতে যাওয়া এবং অভিভাবকদের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় এমন পরিস্থিতি এমন হয়েছে।’
সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ থেকে সদ্য অবসরপ্রাপ্ত শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার অধ্যাপক যোগীন্দ্র সিংহ বলেন, নিঃসন্দেহে ডিজিটাল প্রযুক্তি তথা মোবাইল ফোন, ট্যাব, ল্যাপটপ এসব ডিভাইস সৃজনশীল এবং সুবিধাজনক। কিন্তু শিশুদের জন্য এটি বেশ বিপজ্জনক। এর মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার অর্থাৎ অত্যধিক স্ক্রিন টাইম শৈশবের সামাজিক এবং মানসিক বিকাশের ওপর ভীষণ রকম ক্রমবর্ধমান বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও প্রভাব ফেলে। বাস্তব জীবনে, যেসব শিশু তাদের পর্দায় আসক্ত, তারা বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ক্রিয়াকলাপ যেমন- খেলাধুলা, দৌড়ানো বা সাইকেল চালানো মিস করে, ফলে তাদের দক্ষতা বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়।
তিনি আরও বলেন, তা ছাড়া মনোনিবেশ করার এবং বাস্তবজীবনে কার্যকরভাবে যোগাযোগ করার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। তাই শিশুর স্ক্রিন টাইম নিয়ন্ত্রণ করতে এবং তাদের চোখের বিশ্রামের জন্য স্ক্রিন থেকে পর্যাপ্ত সময় বিরতি নিতে উপদেশ দিতে হবে। টিভি, মোবাইল গেম বা যে কোনো ধরনের ভার্চুয়াল এন্টারটেইনমেন্ট দেখার সময়ে আমাদের মস্তিষ্কের কোষ থেকে ডোপামিন নিউরোট্রান্সমিটার নিঃসরণ হয়। এ ডোপামিন আমাদের মনে এক ভালোলাগার অনুভূতি সঞ্চার করে। তার ফলে অতিসহজেই আমরা এ ধরনের এন্টারটেইনমেন্ট মিডিয়ামগুলোতে আসক্ত হয়ে পড়ি।
সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মনোরোগ বিভাগের প্রধান ডাক্তার আর কে এস রয়েল বলেন, মোবাইল ফোনে শিশুদের মস্তিষ্কের বড় ক্ষতি করে। এ বিষয়ে মনোরোগ বিভাগের মাধ্যমে অভিভাবকদের মাঝে সচেতনতামূলক আলোচনা করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
মন্তব্য করুন