শর্ত শিথিল করে পরবর্তী বর্ষে প্রমোশনের দাবি মেনে না নেওয়ার অভিযোগ তুলে ফের নীলক্ষেতে অবরোধ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে জড়ো হয়ে এসে নীলক্ষেত মোড়ে অবস্থান নেন তারা। এর আগে গত ১৬ আগস্ট সকাল ১০টা-দুপুর ১টা পর্যন্ত নীলক্ষেত মোড়ে অবস্থান ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন তারা। পরে রোববার (২০ আগস্ট) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আমরণ গণঅনশন পালন করেন।
সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে তাদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আন্দোলন করে আসছেন। তাদের দাবি হচ্ছে- নির্ধারিত জিপিএ বা সিজিপিএ শিথিল করে, তিন বিষয় পর্যন্ত মানোন্নয়ন পরীক্ষার মাধ্যমে পরবর্তী বর্ষে প্রমোশন দিতে হবে।
সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্রগুলো তুলে ধরেছেন; পাশাপাশি সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের দিয়েছেন পরামর্শ। কালবেলার পাঠকদের জন্যে অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুনের স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
‘আজকেও ৭ কলেজের শিক্ষার্থীরা নীলক্ষেতে অবস্থান নিয়েছে। এর মানে সারা ঢাকার ট্র্যাফিক জ্যাম লাগিয়ে দেওয়া। দুই দিন পরপর এইরকম ঘটনা ঘটে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার নিজের সমস্যারই সমাধান করতে পারে না। তার উপর ৭টি বড় বড় কলেজ যেগুলোর প্রত্যেকটি একেকটি বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার যোগ্যতা রাখে সেই রকম ৭টি কলেজের দায়িত্ব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হলো। আজকেও আমি ৭ কলেজের একটা পরীক্ষা কমিটির মিটিং করলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এমনিতেই আমাদের নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ফলাফল প্রকাশের দায়িত্ব নিতে হয় যা বিশ্বে নজিরবিহীন। ফলাফল তৈরির দায়িত্ব কন্ট্রোলার অফিসের। অথচ অধ্যাপকদের এই কেরানিগিরি করতে হয়। সারা পৃথিবীর বিশ্ববিদ্যালয় চেষ্টা করে অধ্যাপকদের প্রশাসনিক কাজ কমিয়ে দিতে যাতে তারা গবেষণায় মনোযোগ দিতে পারে।
অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ল্যাব ক্লাসগুলো পিএইচডি ছাত্রদের দিয়ে চালিয়ে দেয় যেন অধ্যাপকদের লোড কমে। আমাদের এখানে কাকে দিয়ে কি করালে সর্বোচ্চ লাভ হবে এইটা নিয়ে ভাবার কেউ নাই। যেই কাজ উচ্চ মাধ্যমিক পাশ কাউকে দিয়ে করানো সম্ভব সেটি একজন পিএইচডি ডিগ্রিধারী প্লাস পোস্ট-ডক করা কাউকে দিয়ে করাইতে কোন কার্পণ্য করে না।
প্রতিদিন দেখা যায়, আমাদের অনেক শিক্ষক কোনো না কোনো দায়িত্ব পালন করতে ৭ কলেজের কোনো না কোনো একটিতে চলে গেছে। সেই শিক্ষক তো নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের বঞ্চিত করল। সেই সময় শিক্ষক গবেষণা কাজে ব্যস্ত থাকতে পারত। ছাত্র সুপারভাইস করতে পারত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ন করতে পারত। ৭ কলেজের দায়িত্ব মানে বিশাল কর্মযজ্ঞ। এর মাধ্যমে প্রতিটি শিক্ষককে ব্যস্ত রাখা মানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বঞ্চিত করা। তারপরেও যদি সেই ৭ কলেজের নানা দাবির অজুহাতে আন্দোলন দেখতে হয়, সেটা কি ঠিক? আসলে ৭ কলেজের সমন্বয়ে এক বা একাধিক পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় করা হলে শিক্ষার্থীরাও মুক্তি পেত আর একই সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও রক্ষা পেত। আমরা আর পারছি না।’
মন্তব্য করুন