রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. শাহ্ আজম বলেছেন, তাত্ত্বিক জ্ঞানকে বাস্তব জীবনে প্রয়োগের শিক্ষাদান করছে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থা কখনো কখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হচ্ছে এবং এ চিত্র বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশেও পরিলক্ষিত।
আজ ২৩ আগস্ট (বুধবার), ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা সম্মেলনে বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সদস্য হিসেবে উপস্থিত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
উপাচার্য বলেন, আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক শিক্ষার মধ্যে কোনটি বেশি কার্যকর তা বিচারসাপেক্ষ। আনুষ্ঠানিক শিক্ষাকে পরিবর্তমান বিশ্বের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হয়।
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আরও বলেন, বর্তমানের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় চলমান শিক্ষা ব্যবস্থা বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের যথেষ্ট যোগ্য এবং দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারছে না। বাংলাদেশে স্নাতকদের বেকারত্বের হার অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় বেশি। যা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার কিছুটা হতাশাগ্রস্ত চিত্র তুলে ধরে। কিন্তু এটি কেন ঘটছে? এর কারণ অনুসন্ধান জরুরি। এটি ঘটছে কারণ, আমরা আমাদের স্নাতকদের আধুনিক এবং ক্রমবর্ধমান শিল্পের চাহিদার সঙ্গে মেলাতে পারছি না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে শুরু থেকেই নির্দিষ্ট বিষয়ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচলিত। বাংলাদেশে বৈচিত্র্যময়, বহুমাত্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার অভাব রয়েছে। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষা ব্যবস্থাকে শিল্প চাহিদার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে বাংলাদেশ ন্যাশনাল কোয়ালিটি এডুকেশন ফ্রেমওয়ার্ক (BNQF) গঠন করেছে। এরই ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে বিশেষ দর্শনভিত্তিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই প্রবণতার অন্যতম প্রধান উদাহরণ হলো রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে আমরা এমন শিক্ষা পরিষেবা প্রদান করছি যাতে করে শিক্ষার্থীরা তাত্ত্বিক জ্ঞানকে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে পারে ।
উপাচার্য বলেন, এমন পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের জন্য আদর্শ শিক্ষাব্যবস্থা কি হতে পারে সেটি নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। শিক্ষা ব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করে তোলার জন্য বিভিন্ন দেশের সরকার আন্তঃমহাদেশীয় পদক্ষেপ নিতে পারে। যাতে আন্তঃসাংস্কৃতিক এবং বহুসাংস্কৃতিক শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে উঠতে পারে। তা না হলে শিক্ষার আধুনিকায়ন সম্ভব নয়।
উপাচার্য আরও বলেন, দেশের উন্নয়ন খাতগুলোকে উন্নত করতে এবং বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য আমাদের প্রয়োজন দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষা, বিশেষায়িত শিক্ষা। যা আমাদের সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা ও সৃজনশীতাকে উদ্দীপ্ত করবে, সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশগত সংবেদনশীলতা তৈরি করবে। শিক্ষাকে হতে হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং টেকসই। ব্লেন্ডেড শিক্ষার প্রয়োজনীয়তাও এড়িয়ে যাওয়া যায় না। পরিশেষে বলা যায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং নীতিনির্ধারকদের নমনীয় এবং পরিবর্তনশীল অবস্থার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারার মানসিকতা থাকাটাও জরুরি।
ওই আলোচনা অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর প্রফেসর ড. আতিউর রহমান, এশিয়ান মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর ফারহাত আনোয়ার, সিআরআই ফেলো প্রফেসর রশীদুল হাসান, কেমব্রিজ প্রেস ও এসেসমেন্টের দক্ষিণ এশীয় মহাপরিচালক অরুন রাজামনি ও ব্রিটিশ কাউন্সিলের ডেবিড নক্সসহ শিক্ষা ও গবেষণা সম্পৃক্ত ব্যক্তিবর্গ।
মন্তব্য করুন