দেশের আট বিভাগের ১৫০ উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩১ লাখেরও বেশি শিশু শিক্ষার্থীর চলতি সেপ্টেম্বর থেকেই ‘মিড ডে মিল’ বা দুপুরের খাবার হাতে পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এ নিয়ে দরপত্র চালু করতে পারেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে মিড ডে মিল প্রকল্পের জন্য লাইভ দরপত্রপ্রক্রিয়া চলছে, প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে দেরি হওয়ায় সেপ্টেম্বরে এই প্রকল্প চালু হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দরপত্র কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর দ্রুতই এ কর্মসূচি চালু করা হবে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিনের এই খাদ্যতালিকা শিক্ষার্থীদের পুষ্টি নিশ্চিত করবে এবং ক্ষুধার তাড়না থেকে মুক্তি দিয়ে শ্রেণিকক্ষে মনোযোগ বাড়াতে সহায়তা করবে। এ ছাড়া প্রাথমিক শিক্ষায় ঝরে পড়ার হার কমবে এবং বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ। প্রকল্পে মোট বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৫ হাজার ৪৫২ কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে ৯৭ শতাংশ ব্যয়ই বরাদ্দ রাখা হয়েছে খাদ্য সরবরাহের জন্য।
২০২৫-২৬ অর্থবছরে প্রকল্পটির জন্য বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার ১৬৪ কোটি টাকার বেশি।
এদিকে গত জানুয়ারিতে শুরু হওয়া ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ফিডিং কর্মসূচি’ বা মিড ডে মিল প্রকল্পটির আওতায় স্কুল চলাকালীন শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে পাঁচ দিন সরবরাহ করা হবে পুষ্টিকর খাবার। এর মধ্যে রয়েছে বনরুটি, সিদ্ধ ডিম, ইউএইচটি দুধ, ফরটিফাইড বিস্কুট এবং মৌসুমি ফল বা কলা। সপ্তাহের রবি, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীদের পরিবেশন করা হবে বনরুটি ও সিদ্ধ ডিম।
সোমবার বনরুটি ও দুধ এবং বুধবার মিলবে ফরটিফাইড বিস্কুট ও মৌসুমি ফল বা কলা। প্রতিটি বনরুটির ওজন নির্ধারণ করা হয়েছে ১২০ গ্রাম, প্রতিটি ডিম ৬০ গ্রাম, দুধ ২০০ গ্রাম, বিস্কুট ৭৫ গ্রাম ও ফল ১০০ গ্রাম।
এ ছাড়া উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে স্কুল ফিডিং মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে রয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা, নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শকসহ প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা। প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রশিক্ষণও গুরুত্ব পাচ্ছে।
জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তাদের জন্য আয়োজন করা হবে ১৯২টি ব্যাচে ওরিয়েন্টেশন ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচি। অংশ নেবেন প্রায় ১৯ হাজার ৭১৯ শিক্ষক ও কর্মকর্তা।
প্রকল্পটির পরিচালক (পিডি) ও যুগ্ম সচিব হারুন অর রশীদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রকল্পটির অনেক কাজ বাকি ছিল। আমি দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক মাসেই অনেক কাজ এগিয়েছে। আশা করছি, খুব শিগগরি চালু হবে।’
প্রসঙ্গত, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। প্রকল্পটি চলবে ২০২৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রাথমিকভাবে দেশের ৮ বিভাগের ৬২ জেলার ১৫০ উপজেলার ১৯ হজার ৪১৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩১ লাখ ৩০ হাজার শিক্ষার্থী এ প্রকল্পের সুবিধাভোগী হবে। প্রকল্পটি সফল হলে সারা দেশের স্কুলগুলোয় মিড ডে মিল চালু করা হবে।
মন্তব্য করুন