অপরাধ তদন্তে ডাক্তারি পরীক্ষা ও নথিপত্রের গুরুত্ব গভীরভাবে জানা ও বোঝার লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের উদ্যোগে ‘ইমপর্টেন্স ইন মেডিকেল এক্সামিনেশন অ্যান্ড ডকুমেন্টেশন ইন ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন’ শীর্ষক একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) ঢাবির সামাজিকবিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ক্রিমিনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান শাহারিয়া আফরিনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় মূল বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারতের মুম্বাইয়ের টাটা ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্সেসের ইমেরিটাস এবং ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি, অ্যাসোসিয়েশন অব হসপিটালস, ইন্ডিয়ার ইমেরিটাস ডক্টর পি এম ভুজংকে। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের ডিআইজি এ কে এম নাহিদুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সামাজিকবিজ্ঞান অনুষদের ডিন এবং ক্রিমিনোলজি বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান। ড. জিয়া রহমান বর্তমানে ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অব ক্রিমিনোলজির পরিচালনা পর্ষদের একজন সম্মানিত সদস্য হিসেবেও কাজ করছেন।
এ ছাড়াও সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ক্রিমিনোলজি বিভাগের সম্মানিত শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং বিভিন্ন বর্ষের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
আলোচনা সভায় অপরাধ তদন্তের বিভিন্ন দিক অনুসন্ধান করা, তদন্ত প্রক্রিয়ায় চিকিৎসাবিষয়ক পরীক্ষা এবং নথিপত্রের তাৎপর্যের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়।
মূল বক্তব্যে ড. পি এম ভুজং অপরাধ অনুসন্ধানে মেডিকেল পরীক্ষা এবং ডকুমেন্টেশনের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেন।
তিনি বলেন, বাস্তব প্রমাণের অভাবে অসংখ্য বিচারাধীন মামলার ন্যায়পূর্ণ নিষ্পত্তি সম্ভব হয় না। বাংলাদেশ, ভারতের আইন ও বিচার ব্যবস্থার বিভিন্ন সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য এবং তাদের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে সবাইকে অবহিত করেন। সুস্পষ্ট ও বাস্তবিক অনুসন্ধানের জন্য পুলিশ, তদন্ত কর্মকর্তা, ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্ট সবার দায়িত্ব-কর্তব্যের ব্যাপারে সবাইকে সচেতন করেন তিনি।
আলোচকের বক্তব্যে ডিআইজি কে এম নাহিদুল ইসলাম বাংলাদেশে অপরাধ তদন্তের ইতিহাস হতে বর্তমান পর্যন্ত দীর্ঘ প্রক্রিয়াশীল যাত্রা সম্পর্কে সবাইকে অবহিত করেন। বাংলাদেশে অপরাধ অনুসন্ধানের ক্রমবর্ধমান অগ্রগতি সত্ত্বেও যেসব সীমাবদ্ধতা ও বাধা রয়েছে, সেগুলো কতটুকু দূরীভূত হয়েছে এ বিষয়ে জানান। অপরাধ তদন্ত সংস্থা সিআইডির বিভিন্ন গবেষণা ও পরীক্ষাগারের বর্ণনা দেন তিনি। বাংলাদেশের অপরাধ অনুসন্ধানে প্রযুক্তিগত আধুনিকায়নের ফলে বর্তমানে যে কোনো অপরাধ তদন্তে সব ধরনের প্রমাণাদি প্রক্রিয়া করার সক্ষমতা অর্জনের কথাও তিনি জানান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান অপরাধ তদন্তে ডাক্তারি পরীক্ষার পরিসরটি কতটা বৃহৎ সে সম্পর্কে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের অবগত করেন এবং অপরাধের তদন্ত ও বিচারিক কার্যক্রমে ডাক্তারি পরীক্ষা ও নথিপত্রের গুরুত্ব উপলব্ধি করান।
বাংলাদেশের আইনানুগ কার্যক্রমে বিভিন্ন অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের উদাসীনতা ও একে অপরকে দোষারোপ করার সংস্কৃতি সম্পর্কেও উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, আজকের শিক্ষার্থীরাই আগামীতে অপরাধবিজ্ঞানের নানা অঙ্গনে বিচরণ করবে। তাই শিক্ষার্থীদের অপরাধবিজ্ঞানের এমন অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি শাখা, ফরেনসিক ও মেডিকেল পরীক্ষা সম্পর্কে সুস্পষ্ট জ্ঞান থাকা জরুরি। তবেই ভবিষ্যতে তারা এসব অঙ্গনে দৃঢ়তার সাথে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হবে।
আলোচনা শেষে প্রশ্নোত্তর পর্বের আয়োজন করা হয় যেখানে আগত অতিথিবৃন্দ উপস্থিত শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন কৌতূহলোদ্দীপক প্রশ্নের জবাব দেন এবং ওই বিষয়গুলোর প্রতি তাদের আগ্রহে সাড়া দেন।
মন্তব্য করুন