ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এক ছাত্রলীগ নেতার ওপর তার নিজ বাড়ি চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার জামালপুর গ্রামে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ছত্রলীগ নেতার অভিযোগ, তার উপজেলার বারইয়ারহাট পৌরসভার মেয়র এবং তার অনুসারীরাই এই হামলা করেছে আর তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন। পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম খোকন হামলার অভিযোগ স্বীকারও করলেও প্রাণনাশের হুমকির বিষয়টি অস্বীকার করেন।
সোমবার (২৫ মার্চ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তার সঙ্গে হওয়া ঘটনার বর্ণনা দিয়ে এই ঘটনার বিচার দাবি করেন। বিচার না পেলে তিনি আমরণ অনশন করারও ঘোষণা দেন।
ভুক্তোভোগী এ ছাত্রলীগ নেতার নাম আরিফুল ইসলাম। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক।
সংবাদ সম্মেলনে এক লিখিত বক্তব্যে ভুক্তভোগী জানান, গত ২০ই মার্চ এই হামলার ঘটনা ঘটে। আর ঘটনার সূত্রপাত গত ১২ই মার্চ।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের পুরাতন বাড়িতে আমার জেঠা (বড় চাচা) সামশুল হকসহ সেখানে ৭ পরিবারের বসবাস। অনেক আগে থেকে আমার জেঠা চাচ্ছে বাড়ির উঠানের মাঝখানে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার জন্য। কিন্তু বাকি ৫ পরিবার এটির বিরোধীতা করে। কারণ এতে বাড়ির সৌন্দর্য নষ্ট হয়। আর সেখানে আমাদের জায়গাও থাকার কারণে আমরাও সেই পাঁচ পরিবারের দাবিকে সমর্থন দেই। কিন্তু সেদিন আমার জেঠা বাহির থেকে ২০-৩০ জন বহিরাগত নিয়ে এসে জোর পূর্বক একটি কাঁটাতারের বেড়া লাগিয়ে দেয়। এই ঘটনায় পাঁচ পরিবারের সবাই ক্ষুব্ধ হয়ে এদিন বিকেলেই নিজেদের সামনের জায়গায় যেখান দিয়ে সবাই চলাচল করে এমনকি তারাও চলাচল করে সেই রাস্তায় নতুন করে একটি কাঁটাতারের বেড়া লাগিয়ে দেয়। আর এ সময় তারা শর্ত দেয়, জেঠার লাগানো কাঁটাতারের বেড়া তুলে না ফেলা পর্যন্ত তারাও এই বেড়া তুলবে না। এই বেড়ার কারণে আমার জেঠার যেরকম হাঁটাচলার সমস্য হচ্ছে তেমনই সমস্যা হচ্ছে বাকি পরিবারগুলোরও। তারপরও দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের জন্য ক্ষণস্থায়ী এই সমস্যা তারা সয়ে নিতে রাজি ছিলো।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন,
এই ঘটনার সমাধানের জন্য আমাদের দুই পক্ষকে ২১ই মার্চ জোরারগঞ্জ থানায় ডাকা হয়েছিলো। কিন্তু এর আগের দিন ২০ই মার্চ আমাদের জেঠার পক্ষ হয়ে পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম খোকন এবং তার সাথে প্রায় ৪০-৫০ জন বহিরাগত লোক আমাদের বাড়িতে আসে। এ সময় তারা আমাদের বলে, পাঁচ পরিবারের দেওয়া কাঁটাতারের দেওয়া বেড়া এবং আমার জেঠার দেওয়া বেড়াও তিনি তুলে ফেলবেন। কিন্তু পাঁচ পরিবারের দেওয়া বেড়া তোলার পর যখনই জেঠার লাগানো কাটাতারের বেড়া তুলে ফেলতে বলা হয় তখন তারা সুর পাল্টে ফেলে এবং তার অনুসারীরা আমাদের গালাগাল করে। এটির প্রতিবাদ এবং কেন আমার জেঠার লাগানো কাটাতারের বেড়া তুলে ফেলা হচ্ছে না জানতে চাইলে মেয়র আমাকে ধাক্কা দিয়ে মারধর শুরু করে। আর এতে আমার পরিবারের সবাই ক্ষুব্ধ হয়ে ওনার কাছে কৈফিয়ত জানতে চাইলে তিনি এবং তার অনুসারীরা আমাদের পরিবারের সবাইকেও এলোপাথাড়ি মারধর শুরু করে।
আরিফুল ইসলাম জানান, এটি দেখে সেই পাঁচ পরিবারের সদস্যরা মেয়রকে বলেন, ‘বেড়া দিয়েছি আমরা। আপনি উনাদের গায়ে কেন হাত তুলছেন?’ এরপর তাদেরও যে যেভাবে পারছে সেভাবে মারধর শুরু করে। মারধরের একপর্যায়ে আমি নিজেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং ছাত্রলীগের পদধারী হিসেবে পরিচয় দিলে তিনি আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ছাত্রলীগ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে কটুক্তি করে আর আমাকে গ্রামে আর না ঢুকতে বলে। ঢাকা থেকে আমাকে আর কোনদিন এলাকায় দেখলে টুকরো টুকরো করে মেরে ফেলারও হুমকি দেয় মেয়র রেজাউল।
আরিফ আরও বলেন, এরপর থেকে মেয়রের ভয়ে আমি আমার নিজ এলাকায় যেতে পারছিনা। আমার আশঙ্কা এই সংবাদ সম্মেলনের খবর পাওয়ার পর মেয়র আমার পরিবারের উপরও হামলা করতে পারে। আমি এটির সুষ্ঠু বিচার চাই।
অভিযোগ করে আরিফ বলেন, এই ঘটনায় মামলা করতে গেলে আমার পরিবারে পক্ষ থেকে কোন মামলা জোরারগঞ্জ থানা গ্রহণ করেনি। আমি চাই, এই ঘটনায় মামলা গ্রহণ করে সুষ্ঠু তদন্ত করে আসামীদের গ্রেপ্তার করা হোক।
অভিযোগের বিষয়ে পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম খোকন বলেন, আরিফের বাবা মূলত সেখানে থাকা ছয় পরিবারকে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন। আমি গিয়ে তাদেরকে উদ্ধার করেছি। এ সময় তারা দুই পক্ষকে কয়েকটা চড় থাপ্পড় দিয়ে থামিয়ে দিয়েছি। কাউকে হত্যার হুমকি দেইনি।
জোরারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল হারুন বলেন, থানার পক্ষ থেকে এই ঘটনা সমাধান করার জন্য মেয়রকে পাঠানো হয়নি।
মামলা না নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঘটনাটি মামলা নেওয়ার মতো নয়। তাই আমরা শুধু জিডি নিয়েছি। আর যেটুকু ঘটনা ঘটেছে সেটা নিয়ে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।
মন্তব্য করুন