ব্যক্তিগত গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়ে ও রাষ্ট্রীয় প্রটোকল ব্যবহার করে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর অভিযোগে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে সতর্ক করেছে নির্বাচন কমিশন। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর আত্মপক্ষ সমর্থন ও প্রথমবার আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় তাকে সতর্ক করা হয়। পরে আচরণবিধি মেনে চলতে নির্দেশনাও প্রদান করা হয়।
বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির (নির্বাচনী এলাকা-১৭০) চেয়ারম্যান ও মানিকগঞ্জের সিনিয়র সহকারী জজ শর্মিষ্ঠা বিশ্বাস স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে সতর্ক করে নির্দেশনা প্রদান করেন।
এর আগে গত ২৫ ডিসেম্বর স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকা মানিকগঞ্জ-৩ আসনের সাটুরিয়া উপজেলার ফুকুরহাটি ইউনিয়নের মজিবের রহমান উচ্চ বিদ্যালয় মাঠসহ বেশ কয়েকটি জনসভায় তিনি ব্যক্তিগত গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়ে এবং রাষ্ট্রীয় প্রটোকল ব্যবহার করেন। নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির অনুসন্ধানে উঠে আসে স্বাস্থ্যমন্ত্রী তার কাজের মাধ্যমে নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা ২০০৮ এর ১৪ বিধি লঙ্ঘন করেছেন। এই কর্মকাণ্ড গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ৯১খ (২) বিধানমতে ভোটপূর্ব অনিয়ম হিসেবে গণ্য হবে। প্রথমবার আচরণ বিধি লঙ্ঘন করায় ও তিনি এ বিষয়ে জানতেন না বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আত্মপক্ষ সমর্থন করায় তাকে সতর্ক করেছে নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) মানিকগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক তার নির্বাচনী এলাকা সাটুরিয়া উপজেলার ফুকুরহাটি ইউনিয়নের মজিবর রহমান উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ ও ফুকুরহাটি ইউনিয়নের পৃথক কয়েকটি নির্বাচনী জনসভায় অংশগ্রহণ করেন। সেখানে তিনি ব্যক্তিগত গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়ে এবং রাষ্ট্রীয় প্রটোকল ব্যবহার করে নির্বাচনী প্রচারণা চালান। যা রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা ২০০৮ এর ১৪ বিধি পরিপন্থি। বিধিমালায় বলা হয়, সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি তাহার সরকারি কর্মসূচির সঙ্গে নির্বাচনী কর্মসূচি বা কর্মকাণ্ড যোগ করিতে পারিবেন না। সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি তাহার নিজের বা অন্যের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় সরকারি যানবাহন, সরকারি প্রচারযন্ত্রের ব্যবহার বা অন্যবিধ সরকারি সুবিধাভোগ করিতে পারিবেন না। এ ছাড়াও সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারী বা কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক বা কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ব্যবহার করিতে পারিবেন না। রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা ২০০৮ এর ১৪ বিধির পরিপন্থির কোনো কার্যক্রম করতে পারিবেন না। যদি তা করা হয় তাহলে গণ প্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ৯১খ (২) বিধানমতে ভোটপূর্ব অনিয়ম হিসেবে গণ্য হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী তার কাজের মাধ্যমে নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা ২০০৮ এর ১৪ বিধি লঙ্ঘন করেছেন মর্মে প্রতীয়মান হয়েছে। এরপর তাকে নোটিশ পাঠায় নির্বাচন কমিশন।
উল্লেখ্য, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক মানিকগঞ্জ-৩ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত পদপ্রার্থী।
এরপর স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক নোটিশের জবাবে নির্বাচন কমিশনকে জানান, তিনি তার নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচন সংক্রান্ত প্রচারণায় সরকারি গাড়ি, জ্বালানি ও ড্রাইভার ব্যবহার করেন না। তিনি ব্যক্তিগত গাড়ি, জ্বালানি ও ড্রাইভার ব্যবহার করেন। তিনি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী। নির্বাচনী প্রচারণায় মন্ত্রীর গাড়িতে রাষ্ট্রীয় পতাকা থাকবে কিনা এবং রাষ্ট্রীয় প্রটোকল ব্যবহার করতে পারব কিনা সে বিষয়ে তিনি সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যাখ্যা কিংবা দিক নির্দেশনা পাননি। এ ছাড়া নির্বাচনী আচরণ বিধিতে রাষ্ট্রীয় পতাকা এবং রাষ্ট্রীয় প্রটোকলের বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা না থাকায় উক্ত বিষয়টি তার অজানা ছিল।
তিনি নির্বাচন কমিশনকে আরও জানান, তিনি গত ২৬ ডিসেম্বর হতে তার নির্বাচনী কাজের ব্যবহৃত গাড়িতে রাষ্ট্রীয় পতাকা ব্যবহার বন্ধ করেছেন। সেইসাথে রাষ্ট্রীয় প্রটোকল নেওয়াও বন্ধ করেছেন। নোটিশের বিষয়ে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়ে থাকলে সেটা তার অজান্তে হয়েছে। এরপর তিনি যথাযথভাবে নির্বাচনী আচরণবিধি পালন করে নির্বাচনি প্রচারণা এবং গণসংযোগ করছেন বলেও লিখিত ব্যাখ্যা দাখিল করেন।
এমতাবস্থায় এরপর বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির (নির্বাচনী এলাকা-১৭০) চেয়ারম্যান ও মানিকগঞ্জের সিনিয়র সহকারী জজ শর্মিষ্ঠা বিশ্বাস সার্বিক পর্যালোচনা করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রথমবার আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন এই মর্মে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ৯১ক এর (৬) (ক) বিধানমতে নির্বাচন আচরণ বিধি মেনে চলার জন্য নির্দেশনা প্রদানসহ এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে সতর্ক করেন।
মন্তব্য করুন