আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হঠাৎ একটা ব্রণ চোখে পড়ল। অনেকেই তখনই অস্থির হয়ে পড়েন, ‘চেপে ফাটিয়ে ফেলি!’ ভাবনাটা যতটা স্বাভাবিক মনে হয়, পরিণতি হতে পারে ততটাই ভয়াবহ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মুখের বিশেষ অংশে ব্রণ ফাটালে সেটি সরাসরি মস্তিষ্কে সংক্রমণ ছড়াতে পারে, এমনকি হতে পারে প্যারালাইসিসও!
আমেরিকান হলিস্টিক প্লাস্টিক সার্জন ড. অ্যান্থনি ইউন সতর্ক করে বলেছেন, ‘দুই ভ্রুর মাঝের ব্রণ কখনোই ফাটানো উচিত নয়। কারণ, এটি এমন এক জায়গা যেখানে দেহের গুরুত্বপূর্ণ স্নায়ু ও রক্তনালির সংযোগ রয়েছে, যা সরাসরি মস্তিষ্কের সঙ্গে যুক্ত।’
‘ডেঞ্জার জোন’ বা মৃত্যুর ত্রিভুজ
বিশেষজ্ঞদের মতে, মুখের উপরের ঠোঁট থেকে নাক পর্যন্ত যে ত্রিভুজাকার অংশ, সেটিই হলো ‘ডেঞ্জার জোন’। এই অঞ্চলের শিরাগুলো ক্যাভারনাস সাইনাস নামের একটি রক্তনালির মাধ্যমে সরাসরি মস্তিষ্কের সঙ্গে যুক্ত থাকে। ফলে এই অংশে থাকা ব্রণ বা ফুসকুড়ি হাত দিয়ে চেপে ফাটালে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে মস্তিষ্কে। এতে প্যারালাইসিস, খিঁচুনিও হতে পারে। এমনকি জীবনহানির ঝুঁকিও আছে।
একাধিক রোগীর ক্ষেত্রে দেখা গেছে, সময়মতো চিকিৎসা না পেলে সংক্রমণের প্রভাবে মস্তিষ্কের কিছু অংশ স্থায়ীভাবে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে গেছে।
কীভাবে এড়াবেন বিপদ?
চর্মরোগ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, ব্রণ ফাটানোর পরিবর্তে ঘরোয়া ও প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে তা শুকিয়ে ফেলাই সবচেয়ে নিরাপদ উপায়।
১. গরম সেঁক : একটি পরিষ্কার তোয়ালে হালকা গরম পানিতে ভিজিয়ে ব্রণের ওপর ১০ মিনিট রাখুন। এতে ভেতরের পুঁজ সহজে বের হয়ে আসবে এবং ব্রণ নিজে থেকেই শুকিয়ে যাবে।
২. টি ট্রি অয়েল : ১ চা চামচ নারিকেল বা জলপাই তেলে ২ ফোঁটা টি ট্রি অয়েল মিশিয়ে ব্রণের ওপর লাগান। এটি ব্রণের সংক্রমণ কমায়।
৩. মধু ও অ্যালোভেরা : খাঁটি মধু বা অ্যালোভেরা জেল সরাসরি ব্রণের ওপর ২০ মিনিট রাখলে প্রদাহ কমে এবং ত্বক দ্রুত সেরে ওঠে।
৪. চিকিৎসকের পরামর্শ : যদি ব্রণ বড় আকারের হয় বা বারবার ফিরে আসে, তাহলে অবশ্যই চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
ব্রণ কোনো সৌন্দর্যজনিত সমস্যা নয়, এটি দেহের অভ্যন্তরীণ হরমোন, খাদ্যাভ্যাস ও ত্বক পরিচর্যার সঙ্গে জড়িত। তাই হাত দিয়ে খুঁটাখুঁটি না করে ধৈর্য ধরে চিকিৎসা নিতে হবে। ‘মুখের ব্রণ ফাটানো মানে ঝুঁকি ডেকে আনা। বিশেষ করে দুই ভ্রুর মাঝে বা নাকের চারপাশে ব্রণ খোঁটানো একেবারেই নয়,’ যোগ করেন ড. অ্যান্থনি ইউন।
সূত্র : এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া, হেলথ লাইন
মন্তব্য করুন