

মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯৯২ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর ১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস পালিত হয়ে আসছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হলো—‘দুর্যোগ ও সংকটকালীন সময়ে মানসিক স্বাস্থ্য সেবার সহজলভ্যতা’।
বাংলাদেশের প্রায় ১ কোটি মানুষ মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত কিন্তু ৯২ শতাংশ রোগীই চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত। এর প্রধান দুটি কারণ হলো—স্টিগমা ও মানসিক স্বাস্থ্য সেবার অপ্রতুলতা, যা দূর করার লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগ ও বাংলাদেশ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি সোসাইটি (বিসিপিএস) ১৯৯৭ সাল থেকে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে এবং প্রতিবছর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে নানা কর্মসূচি আয়োজন করে আসছে।
এরই ধারাবাহিকতায় এ বছরও দিবসটি উদযাপন এবং দেশের সর্বস্তরের মানুষের মাঝে মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মাসব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) দিনব্যাপী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ৫টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে (কার্জন হল, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র, ডাকসু, বিজয় একাত্তর হল এবং বিভাগের নাসিরুল্লাহ ফাউন্ডেশন কনফারেন্স হল) মানসিক স্বাস্থ্য মেলার আয়োজন করা হয়। ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের এম.এস, এম.ফিল ও পিএইচ.ডি গবেষকগণ বিভাগীয় শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে ফ্রি মেন্টাল হেলথ অ্যাসেসমেন্ট ও কাউন্সেলিং সেবা প্রদান করেন।
মানসিক স্বাস্থ্য মেলা এক ভিন্নধর্মী আয়োজন যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের বাইরেও বিভিন্ন মানুষ সেবা নিতে আসেন। মেলায় আসা ছাত্র-ছাত্রীরা বিনামূল্যে মানসিক স্বাস্থ্য সেবার এই আয়োজনে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধিতে এবং স্টিগমা দূর করতে এ ধরনের আয়োজন আরও বেশি করে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে হওয়া দরকার বলে মনে করেন তারা।
সেবা গ্রহীতা ছাত্র- ছাত্রীদের মধ্যে অনেকেই উল্লেখ করেন যে, আমরা অনেক সময় বুঝি না আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যে সমস্যা আছে। মেলায় এসে বুঝলাম আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য সেবা নেওয়া দরকার এবং নিজের অনুভূতি ও চাপ নিয়ে খোলাখুলি কথা বলা দরকার। কাউন্সিলিং নেওয়া কোনো দুর্বলতা নয়—বরং নিজের প্রতি যত্ন নেওয়ার এক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মো. শাহানূর হোসেন এই আয়োজন প্রসঙ্গে বলেন, আমাদের ছাত্র- ছাত্রীরা মেলায় খুবই আন্তরিকতা এবং পেশাগত মানদণ্ড বজায় রেখে আজকের মানসিক স্বাস্থ্য মেলায় প্রায় ৫০০ জন মানুষকে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করেছে। বহু মানুষের এই সেবা দরকার, কিন্তু প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবলের অভাবে সবাইকে এই সেবার আওতায় আনা যাচ্ছে না। তবে আমরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছি, প্রতিবছর আরও বেশি গ্রাজুয়েট তৈরি করতে, যাতে তারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজির এই সেবা পৌঁছে দিতে পারে।
এ বিষয়ে সমাজের বিত্তবানদের আরও সহযোগিতা দরকার এবং নীতি নির্ধারকদের উচিত দেশের সব সরকারি হাসপাতালগুলোতে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট নিয়োগ দেওয়া, যার ফলে মানুষ আরও বেশি মানসিক স্বাস্থ্য সেবা নিতে উৎসাহিত হবে এবং মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে স্টিগমা ও কুসংস্কার দূর হয়ে বাংলাদেশ আরও আলোকিত ও সমৃদ্ধশালী হবে।
মন্তব্য করুন