‘স্ট্রোক’ শব্দটা শুনলে অনেকেই ভাবেন মস্তিষ্কের সমস্যা বা ব্রেন স্ট্রোকের কথা। আবার কেউ কেউ হিটস্ট্রোক কথাটার সঙ্গে পরিচিত। যা গরমের কারণে হতে পারে। কিন্তু জানেন কি, চোখেও স্ট্রোক হতে পারে?
এই চোখের স্ট্রোক খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। সঠিক সময় চিকিৎসা না পেলে দৃষ্টিশক্তি হারানোর মতো বিপদ হতে পারে। তাই চলুন, সহজ ভাষায় জেনে নিই চোখের স্ট্রোক আসলে কী, কেন হয় আর কী করবেন।
চোখের স্ট্রোক কী?
চোখের ভেতরে একটি অংশ আছে – রেটিনা, যা আমাদের দেখা সম্ভব করে তোলে। এই রেটিনায় রক্ত সরবরাহ করে কিছু ধমনী (blood vessels)। যদি কোনো কারণে এই ধমনীগুলোতে বাধা পড়ে বা ব্লক হয়ে যায়, তখনই চোখে স্ট্রোক হতে পারে। একে বলা হয় ‘রেটিনাল আর্টারি অক্লুশন’।
এতে হঠাৎ করে এক চোখে আংশিক বা সম্পূর্ণ দৃষ্টিশক্তি চলে যেতে পারে, আর সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো – বেশিরভাগ সময় এতে কোনো ব্যথা হয় না।
চোখের স্ট্রোকের ধরন
রেটিনার কোন ধমনীতে ব্লক হচ্ছে, তার ওপর নির্ভর করে চোখের স্ট্রোকের ধরন বদলায়:
- সেন্ট্রাল রেটিনাল আর্টারি অক্লুশন : প্রধান ধমনীতে ব্লক হলে পুরো চোখে প্রভাব পড়ে।
- ব্রাঞ্চ রেটিনাল আর্টারি অক্লুশন : ছোট কোনো ধমনীতে ব্লক হয়, তখন চোখের কিছু অংশে সমস্যা হয়।
- টুইগ রেটিনাল আর্টারি অক্লুশন : আরও ছোট ধমনীতে ব্লক, তখন রেটিনার ছোট্ট একটি অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
লক্ষণগুলো কী কী?
- হঠাৎ করে এক চোখে দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে যাওয়া বা চলে যাওয়া
- চোখে ভাসা বা দৃষ্টি ঘোলা মনে হওয়া
- আলো কম দেখা বা হঠাৎ অন্ধকার লাগা
- এক চোখে দেখতে সমস্যা, যা সময়ের সঙ্গে আরও খারাপ হয়
লক্ষ্য রাখবেন, এই সমস্যাগুলোর সঙ্গে সাধারণত কোনো ব্যথা থাকে না, তাই অনেকে বিষয়টা বুঝতে দেরি করে ফেলেন।
কেন চোখের স্ট্রোক হয়?
চোখের রেটিনায় রক্ত পৌঁছাতে না পারার কারণে এই সমস্যা হয়। এর পেছনে বেশ কিছু কারণ থাকতে পারে:
- রক্ত জমাট বাঁধা (যাকে বলে থ্রম্বোসিস)
- প্লাক বা চর্বি জমা (যাকে বলে এমবোলিজম), যা রক্তনালির মধ্যে আটকে যায়
- চোখে চাপ বেড়ে যাওয়া, যা গ্লুকোমার মতো রোগে হয়
- রক্তনালীর রোগ, হার্টের সমস্যা ইত্যাদি
কারা ঝুঁকিতে থাকেন?
চোখের স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে যদি:
- বয়স ৬০ বা তার বেশি হয়
- উচ্চ কোলেস্টেরল বা রক্তচাপ থাকে
- ডায়াবেটিস থাকে
- হার্টের সমস্যা থাকে
- ধূমপান করেন
কী পরীক্ষা করতে হয়?
চোখের দৃষ্টিশক্তি হঠাৎ কমে গেলে দেরি না করে চোখের বিশেষজ্ঞের কাছে যান। তিনি কিছু বিশেষ টেস্ট করতে পারেন:
- ফান্ডোস্কোপি – চোখের ভেতরের অংশ দেখা
- ফ্লুরোসিন অ্যাঞ্জিওগ্রাফি – চোখে রক্ত চলাচল কেমন, সেটা দেখা
- ফান্ডাস ফটোগ্রাফি – রেটিনার ছবি তোলা
- OCT (অপটিক্যাল কোহেরেন্স টোমোগ্রাফি) – চোখের গভীর অংশ বিশ্লেষণ
করণীয় কী?
চোখের স্ট্রোক প্রতিরোধে এবং চোখ ভালো রাখতে কিছু অভ্যাস গড়ে তুলুন:
- স্বাস্থ্যকর খাবার খান
- নিয়মিত হাঁটাহাঁটি বা ব্যায়াম করুন
- ডায়াবেটিস থাকলে নিয়ন্ত্রণে রাখুন
- রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল ঠিক রাখুন
- ধূমপান বন্ধ করুন
- চোখে কোনো পরিবর্তন হলে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যান
চোখের স্ট্রোক মানে দৃষ্টিশক্তির জন্য একটি সিরিয়াস সতর্ক সংকেত। এটি ব্যথাহীন হলেও ভয়াবহ হতে পারে। তাই লক্ষণ বুঝলে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যান। সময়মতো ব্যবস্থা নিলে চোখ রক্ষা করা সম্ভব।
মন্তব্য করুন