চলন্ত ট্রেনে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়া রোগীর জীবন শঙ্কামুক্ত করলেন ডা. আহসান হাবিব উজির। সোমবার (৪ মার্চ) দিনাজপুর থেকে ঢাকাগামী ডাউন দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেনে এ ঘটনা ঘটে। রোগী আবু সাদ চৌধুরীর (৪০) গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার গোপালপুরে, যিনি হৃদরোগ আক্রান্ত ছিলেন।
জানা যায়, সোমবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অফথ্যালমোলজির ফেজ-এ রেসিডেন্টের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আহসান হাবিব উজির সিরাজগঞ্জ সিভিল সার্জন অফিস থেকে ট্রেনিং শেষে বিকেল ৫টায় ডাউন দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেনে ঢাকা যাচ্ছিলেন। ট্রেন টাঙ্গাইল আসার সঙ্গে সঙ্গেই ট্রেনের মাইকে ঘোষণা এলো ‘গ’ বগিতে একজন যাত্রী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ট্রেনে কোনো ডাক্তার থাকলে মানবিক সহায়তায় এগিয়ে আসতে।
ঘোষণা শোনার সঙ্গে সঙ্গে নিজ দায়িত্বে ‘ড’ বগীর ১০৫ নম্বর সিট থেকে উঠে অতিদ্রুত ‘গ’ বগিতে গিয়ে চলে যান ৪০তম বিসিএসের ডা. আহসান। সেখানে গিয়ে দেখেন রোগী প্রায় সেন্সলেস। প্রচুর শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। এমনকি পালসও পাওয়া যাচ্ছিল না। রোগীর পুরো শরীর ঠান্ডা আর ঘেমে যাচ্ছে। সঙ্গে থাকা রোগীর স্ত্রীর কাছে হিস্ট্রি নিয়ে জানতে পারেন, উনি প্রেশারের রোগী। তবে ওষুধ কন্টিনিউ করেন না।
তখন ডা. আহসান উপস্থিত ট্রেনের গার্ডকে জিজ্ঞেস করেন, কোনো ডায়াবেটিস মাপার মেশিন বা প্রেশার মাপার মেশিন আছে কি না। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ট্রেনে তা ছিল না। এরপর ইমারজেন্সি মেডিকেল বক্স চাইলেও দিতে পারেননি ট্রেনের গার্ড। এদিকে রোগীর শরীর আরও ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিল। হৃদরোগীকে বাঁচাতে অতি জরুরি সিপিআর দেওয়ার মানসিক প্রস্তুতি নেন ডা. আহসান। এমন সময় একজন যাত্রী সঙ্গে থাকা লাইফ সেভিং নাইট্রোগ্লিসারিন স্প্রে, নিডোকার্ড আর ক্লপিডোগ্রেল, এস্পিরিন দিয়ে সহায়তা করেন। তখন চারটা ট্যাবলেট একসাথে লোডিং ডোজে দিয়ে আর নাইট্রোগ্লিসারিন স্প্রে দেওয়ার কিছুক্ষণ পরই রোগীর সিম্পটম উন্নতি হতে থাকে।
ডা. আহসান আরও জানান, এরপর গার্ড সাহেবকে বললাম, ট্রেন সামনের স্টেশন মির্জাপুরে ব্রেক দিতে। যাতে রোগীকে কুমুদিনী মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া যায়। কারণ খুবই ইমারজেন্সি পেশেন্ট। যদিও ট্রেনের নির্ধারিত বিরতি মির্জাপুর ছিল না তবুও তিনি তৎক্ষনাৎ তা ম্যানেজ করে ফেললেন। ট্রেন মির্জাপুর আসার পর রিকশা করে রোগীকে কুমুদিনী হাসপাতালে নেওয়ার পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা যায় রোগীর হাই ট্রপোনিন আই। অর্থাৎ রোগী তখন হার্ট অ্যাটাক করেছিলেন।
ডা. আহসান বলেন, রোগী মৃত্যুপথযাত্রী ছিলেন। আল্লাহর ইচ্ছায় বেঁচে গিয়েছেন। মৃত্যু না হলেও আরও অনেক শঙ্কা ছিল। যেমন- ভেন্ট্রিকুলার ট্যাকিকার্ডিয়া, এরিদমিয়া ইত্যাদি। এ কারণে আন্তঃনগর ট্রেনগুলোতে ইমারজেন্সি মেডিকেল বক্স ও প্রয়োজনীয় ওষুধ ট্রেনে রাখার পরামর্শ তার। এ ছাড়া ট্রেনে এমবিবিএস চিকিৎসকের নেতৃত্বে মেডিকেল টিম এবং খাবার ঘরের মতো মেডিকেল কক্ষ থাকা জরুরি বলে মনে করেন ডা. আহসান হাবিব উজির।
মন্তব্য করুন