সেন্ট্রাল হসপিটালে আঁখি ও তার নবজাতকের মৃত্যুতে দুই চিকিৎসক ডা. শাহজাদী, ডা. মুনা ও ডা. মিলিকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে সোম ও মঙ্গলবার দুইদিন প্রাইভেট চেম্বার এবং অপারেশন বন্ধ রাখার চলমান আন্দেলন কর্মসূচিতে বিপাকে পড়েছে রোগীরা। দেশের ক্লিনিক্যাল চিকিৎসকদের ৩৬ টি সংগঠনের ডাকে ১৭ হাজার বেসরকারি হাসপাতাল,ক্লিনিক ও ডায়গনস্টিক সেন্টারে সব ধরনের চিকিৎসা,পরামর্শ ও অপারেশন বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে দুর্ভোগে পড়েছে রোগী ও তার স্বজনরা।
পশ্চিম ধানমন্ডির বাসিন্দা সোনিয়া। প্রচণ্ড জ্বর নিয়ে এসেছেন ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালের বহির্বিভাগে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায় চিকিৎসকদের আন্দোলনে চেম্বার বন্ধ। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে যান সঙ্গে থাকা তার ভাই রকিব। তিনি কালবেলাকে বলেন, রোগীদের জিম্মি করে চিকিৎসকদের কিসের আন্দোলন। এতে তো চিকিৎসকদের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা ওঠে যাবে।
শুধু ল্যাবএইড না, সরেজমিনে রাজধানীর চানখারপুর, মিটফোর্ড, ধানমন্ডি, মহাখালী, যাত্রাবাড়ী ও খিলগাও এলাকার বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ঘুরে দেখা গেছে একই চিত্র। অধিকাংশ হাসপাতাল এবং ক্লিনিকে প্রাইভেট চেম্বার ও অপারেশন বন্ধ রয়েছে।
এই কর্মসূচির সঙ্গে অবস্ট্রাকট্রিকাল অ্যান্ড গাইনোকলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি), বাংলাদেশ চক্ষু চিকিৎসক সমিতি, বাংলাদেশ কাডির্য়াক সোসাইটিসহ বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠন একাত্মতাও প্রকাশ করেছে। এদের মধ্যে আছে বাংলাদেশ সোসাইটি অব অ্যানেসথেসিওলজিস্টস ক্রিটিক্যাল কেয়ার অ্যান্ড চেইন ফিজিশিয়ানস; সোসাইটি ফের মেডিকেল ভাইরোলজিস্টস, বাংলাদেশ; সোসাইটি অব অটোল্যারিংগোলজিস্টস এন্ড হেড-নেক সার্জনস অব বাংলাদেশ; বাংলাদেশ একাডেমি অব প্যাথলজী; বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটি হেপাটোলজি এলামনাই এসোসিয়েশন; এসোসিয়েশন ফর দি স্টাটি অব লিভার ডিজিজেস বাংলাদেশ; মেডিকেল অনকোলজি সোসাইটি ইন বাংলাদেশ; সোসাইটি অব সার্জনস অব বাংলাদেশ। সারাদেশে প্রাইভেট চেম্বার ও অপারেশন বন্ধ রাখার ঘোষণার সঙ্গে একাত্মততা পোষণ করেছে বাংলাদেশ অটিজম এন্ড ডিজএবিলিটি ইন্সটিটিউট (বাডি)।
তবে এ কর্মসূচির সঙ্গে সমর্থন থাকলেও প্রাইভেট চেম্বার ও অপারেশন থিয়েটার বন্ধ রাখার সঙ্গে একমত নয় দেশের চিকিৎসকদের জাতীয় সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ।
গত রোববার বিএমএ মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক দুলাল বলেন, চিকিৎসকদের কর্মবিরতির ঘোষণায় একটি বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছে। আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, এসব কর্মসূচি বিএমএর নয়। কর্মসূচি গ্রহণের ক্ষেত্রে বিএমএর কিছু নিয়মনীতি রয়েছে, তা মেনে করতে হয়। আমাদের পুরো কর্যকরী কমিটি বসে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে কর্মসূচি নির্ধারণ করে। বিএমএ কখনো কোনো হঠকারী কর্মসূচি বা সিদ্ধান্ত নেয়নি, ভবিষ্যতেও নেবে না। যারা হঠকারী সিদ্ধান্ত নেবে তারা দায়িত্ব তারা পালন করবে। বিএমএ কার্যালয়ে বলে সিদ্ধান্ত জানানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অবস্ট্রেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনেকোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশের (ওজিএসবি), সোসাইটি অব মেডিসিনসহ অন্যান্য সোসাইটিগুলো আমাদের কার্যালয়ে বৈঠক করে তাদের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যেকোনো চিকিৎসক ও সোসাইটি আমাদের কার্যালয়ে আসতে পারে। তারা সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ যে কারো সাথে কথা বলতে পারে। ওইদিন আমাদের সাথে তাদের মতবিনিময় হয়েছে। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনে মতবিনিময়ের পর তারা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। তবে স্পষ্টভাবে বলছি- বিএমএ এমন সিদ্ধান্ত নেয়নি, ভবিষ্যতেও নেবে না। এটা সোসাইটিগুলোর কর্মসূচি।
মন্তব্য করুন