

হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে রসুন শুধু রান্নার স্বাদ বাড়াতে নয়; বরং ওষুধ হিসেবে মানুষ ব্যবহার করে আসছে। জীবাণুনাশক ও ভাইরাস প্রতিরোধী গুণের জন্য রসুন এখনো পৃথিবীর প্রায় সব রান্নাঘরে অপরিহার্য উপাদান।
রসুন ছাড়া যেন রান্নাই অসম্পূর্ণ। এমনটাই মনে করেন ফরাসি শেফ পল এরিক জেনসেন। তিনি বলেন, ‘ফরাসি খাবারে স্যুপ থেকে মাংস—সব জায়গাতেই রসুন লাগে। রসুন ছাড়া রান্না কল্পনাই করা যায় না।’
তবে সবসময় এমনটা ছিল না। ১৯৭০-এর দশকে ডেনমার্কে রসুন ছিল প্রায় অপরিচিত ও অপছন্দের একটি উপাদান। এর তীব্র গন্ধের জন্য মানুষ একে এড়িয়ে চলত। পরে তুর্কি শ্রমিকদের আগমনে রসুন জনপ্রিয় হতে শুরু করে।
জেনসেন এখন রসুনকে শীতের ওষুধ হিসেবে দেখেন। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন সকালে আমি আর আমার সঙ্গী এক কাপ স্যুপে এক কোয়া করে রসুন দিই। তাতে সর্দি-কাশি দূরে থাকে।’
দাসদের পাতে থেকে রাজাদের থালায়
রসুনের ইতিহাস যেমন প্রাচীন, তেমনি রোমাঞ্চকর। প্রাচীন গ্রিকরা দেবী হেকাটির উদ্দেশ্যে চৌরাস্তায় রসুন রেখে যেতেন, মিশরের ফেরাউনদের সমাধিতেও রসুন পাওয়া গেছে। বিশ্বাস ছিল এটি তাদের পরকালে রক্ষা করবে।
চীনা ও ফিলিপিনো গল্পে রসুনকে ভ্যাম্পায়ার তাড়ানোর উপায় হিসেবেও দেখা যায়।
‘গার্লিক: অ্যান এডিবল বায়োগ্রাফি’ বইয়ের লেখক রবিন চেরি জানাচ্ছেন, ৩,৫০০ বছর আগের মেসোপটেমীয় এক স্ট্যুর রেসিপিতেও রসুন ছিল! এমনকি প্রাচীন চিকিৎসাবিদ হিপোক্রেটাসও রোগ নিরাময়ে রসুন ব্যবহার করতেন।
তখন রসুন ছিল দরিদ্রদের খাবার। পিরামিড তৈরির শ্রমিক ও রোমান নাবিকদের শক্তি জোগাতে এটি খাওয়ানো হতো। সস্তা এবং পচা খাবারের গন্ধ ঢাকতে পারত বলে একে ‘গরিবদের খাবার’ বলা হতো।
রেনেসাঁ যুগে এসে রসুনের ভাবমূর্তি বদলায়। ফ্রান্সের রাজা হেনরি চতুর্থ রসুন ভালোবাসতেন বলে এটি রাজকীয় খাবারে জায়গা পায়। পরে ইউরোপজুড়ে এবং অভিবাসীদের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রেও রসুনের জনপ্রিয়তা বাড়ে।
রসুনের ঔষধি গুণ
বিশ্বে এখন ৬০০-রও বেশি প্রজাতির রসুন আছে। এটি শুধু রান্নার স্বাদ বাড়ায় না, শরীরেরও উপকার করে।
রসুনে আছে সালফারযুক্ত যৌগ ‘অ্যালিসিন’, যা জীবাণু ধ্বংসে সহায়তা করে। এতে থাকা প্রিবায়োটিক ফাইবার অন্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়া বাড়ায়, হজমে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়।
গবেষণায় দেখা গেছে, রসুন রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল কিছুটা কমাতে পারে, যদিও সব গবেষণায় একই ফল মেলেনি।
পুষ্টিবিদ বাহি ভ্যান ডি বোর বলেন, ‘রসুনে পটাসিয়াম, ফসফরাস, জিঙ্ক, সালফারসহ নানা খনিজ থাকে। এটি সত্যিই এক বিস্ময়কর খাবার।’
প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য দিনে এক থেকে দুই কোয়া কাঁচা রসুন খাওয়া নিরাপদ। তবে অতিরিক্ত খেলে গ্যাস, পেট ফাঁপা বা হজমে সমস্যা হতে পারে।
রসুন একসময় ছিল গরিবদের খাবার, আর এখন তা রাজাদের রান্নায়ও অপরিহার্য। স্বাদ ও গন্ধে যেমন অনন্য, তেমনি শরীরের জন্যও উপকারী। তবে সব কিছুর মতো, রসুনও খেতে হবে পরিমিত পরিমাণে।
সূত্র : বিবিসি বাংলা
মন্তব্য করুন