

চলতি বছর সারা দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর অর্ধশতাধিক হত্যাসহ অর্ধ-সহস্রাধিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। চলতি ডিসেম্বরের প্রথম তিন সপ্তাহেই পাঁচজন সংখ্যালঘুকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে।
এসব সহিংস ঘটনার প্রতিবাদে সংখ্যালঘু ঐক্যমোর্চার উদ্যোগে সোমবার (২২ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে বের হওয়া বিক্ষোভ মিছিল আশপাশের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে জানানো হয়, গত ২ ডিসেম্বর নরসিংদীর রায়পুরায় স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রাণতোষ কর্মকার, ৫ ডিসেম্বর ফরিদপুরের সালফায় মৎস্য ব্যবসায়ী উৎপল সরকার, ৬ ডিসেম্বর রংপুরের তারাগঞ্জে বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রধান শিক্ষক যোগেশ চন্দ্র রায় ও তার স্ত্রী সুবর্ণা রায় এবং ১৮ ডিসেম্বর ধর্ম অবমাননার অজুহাতে ময়মনসিংহের ভালুকায় গার্মেন্টস শ্রমিক দিপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে অর্ধমৃত করে গাছে ঝুলিয়ে আগুনে পুড়িয়ে বর্বরোচিতভাবে হত্যা করা হয়। এ ছাড়া গত ১৯ ডিসেম্বর ঝিনাইদহে গোপাল বিশ্বাস নামের এক রিকশাচালককে স্থানীয় পৌরসভা গেটের সামনে একদল উচ্ছৃঙ্খল জনতা ‘র’-এর এজেন্ট ট্যাগ দিয়ে আটক করে গণধোলাই দিয়ে স্থানীয় পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে।
বাংলাদেশ খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিওর সভাপতিত্বে এবং বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের (একাংশ) নির্বাহী মহাসচিব পলাশ কান্তি দে-এর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি অধ্যাপক ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক, প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাড. সুব্রত চৌধুরী, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও সংখ্যালঘু ঐক্যমোর্চার যুগ্ম সমন্বয়ক মনীন্দ্র কুমার নাথ, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সহসভাপতি ডি এন চ্যাটার্জী, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব, বাংলাদেশ ঋষি পঞ্চায়েত ফোরামের সভাপতি রামানন্দ দাস, বাংলাদেশ সনাতন পার্টির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. সুমন কুমার রায়, সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের নেতা সুস্মিতা কর, ওয়ার্ল্ড হিন্দু ফেডারেশন বাংলাদেশের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ দাস, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের (আরেক অংশ) সাধারণ সম্পাদক ডা. এম কে রায়, বাংলাদেশ হিন্দু মহাসংঘের সভাপতি পিযুস দাস, বাংলাদেশ হিন্দু ঐক্য ফোরামের সভাপতি কে সি মজুমদার খোকন, বাংলাদেশ আইনজীবী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. অনুপ কুমার সাহা, বাংলাদেশ যুব ঐক্য পরিষদের সভাপতি শিমুল সাহা, বাংলাদেশ জাতীয় যুব হিন্দু মহাজোটের সভাপতি প্রদীপ কান্তি দে ও বাংলাদেশ ছাত্র ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সজীব সরকার প্রমুখ।
সংখ্যালঘু নেতারা সমাবেশে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘এমন রোমহর্ষক ঘটনা অব্যাহত রেখে স্বার্থান্বেষী অশুভ মহল চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতিকে অধিকতর অস্থিতিশীল করতে তৎপর। এর মধ্য দিয়ে তারা আগামী সংসদ নির্বাচনে নির্ভয়ে-নির্বিঘ্নে-অবাধে ভোটদানের ক্ষেত্রে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে আতঙ্কিত ও নিরুৎসাহিত করে চলেছে। গণতন্ত্রে উত্তরণে এমন বাধা অপসারিত না হলে তা প্রকারান্তরে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতাকে আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলতে পারে।’
তারা অনতিবিলম্বে সহিংসতা বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানানোর পাশাপাশি সহিংসতাকারীদের গ্রেপ্তার এবং তাদের শাস্তি নিশ্চিতেরও জোর দাবি জানান।
সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে হাইকোর্টের সামনে দিয়ে পল্টন মোড় ঘুরে পুনরায় প্রেস ক্লাবের সামনে এসে শেষ হয়। এ ছাড়া সারা দেশে একই দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে নেতারা জানিয়েছেন।
মন্তব্য করুন