কয়েকদিনের মধ্যে ছয় দফায় স্বর্ণের দাম বেড়েছে। এতে এর মধ্যে চলতি মাসেই পাঁচবার স্বর্ণের দাম বেড়েছে। সবশেষে গত ২৭ সেপ্টেম্বর স্বর্ণের দাম কমেছে। এরপর থেকে বেড়েই চলেছে স্বর্ণের দাম। এ নিয়ে কয়েক দিনের মধ্যে স্বর্ণের দাম ২০ হাজার ৭৫০ টাকা বেড়েছে।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
তথ্য বলছে, গত মাসের ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে স্বর্ণের দাম বেড়েই চলেছে। এরপর থেকে ছয়বার স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়েছে। আজ থেকে নতুন দামে বিক্রি হচ্ছে স্বর্ণ। সবশেষ গতকাল সোমবার চার হাজার ৬১১ টাকা বাড়িয়ে সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে দুই লাখ ১৩ হাজার ৭১৯ টাকা, যা ২৯ সেপ্টেম্বরে প্রতি ভরি ছিল ১ লাখ ৯২ হাজার ৯৬৯ টাকা।
বাজুস জানিয়েছে, আজ থেকে সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণ ২ লাখ ১৩ হাজার ৭১৯ টাকায় বিক্রি হবে। ২১ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণে ৪ হাজার ৪০৯ টাকা বাড়িয়ে ২ লাখ ৪ হাজার ৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ ছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণে ৩ হাজার ৬৭৬ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম ১ লাখ ৭৪ হাজার ৮৫৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণে ৩ হাজার ২১৯ টাকা বাড়িয়ে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৫২০ টাকা।
দেশে স্বর্ণের দর মূলত নির্ধারণ করে দেয় বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। সংগঠনটি বিশ্ববাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম ঠিক করে থাকে। তেজাবি (খাঁটি) স্বর্ণের দামের সঙ্গে মুনাফা যোগ করে জুয়েলারির (অলংকার তৈরি সংশ্লিষ্ট) স্বর্ণের দর নির্ধারণ করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে এই পদ্ধতিতে স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করছে বাজুস। এতে দেখা যায়, বিশ্ববাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে গিয়ে কয়েকদিন পরপরই স্বর্ণের নতুন দামের তথ্য দিয়ে থাকে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের এই সংগঠনটি।
বাজুসের ভাষ্য, স্বর্ণের দাম নির্ধারণ হয় বিশ্ববাজারের দামের ভিত্তিতে এবং দেশের তাঁতীবাজার বুলিয়ান মার্কেটের নির্ধারিত দামে। বাজুস শুধু তার ভিত্তিতে বিক্রয় মূল্য নির্ধারণ করে থাকে। বিক্রয় মূল্যের সঙ্গে আবশ্যিকভাবে সরকার আরোপিত ৫ শতাংশ ভ্যাট ও বাজুস নির্ধারিত ৬ শতাংশ মজুরি যোগ করার পর চূড়ান্ত দর নির্ধারণ হয়। আর এতে করে বিশ্ববাজারের সঙ্গে দামের তারতম্য হয়।
বিশ্ববাজারের তুলনায় দেশে দাম বেশি: বিশ্বের অন্যান্য দেশের স্বর্ণের বাজারগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, শুধু বাংলাদেশের বাজারেই স্বর্ণের দাম সবচেয়ে বেশি। গতকাল দেশের বাজারে ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) দাম বেড়ে ২ লাখ ৯ হাজার ১০০ টাকায় ওঠে। রাতে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত দেখা গেছে, স্পট মার্কেটে ২৪ ক্যারেটের প্রতি আউন্স (৩১.১০৩৪৭৬৮ গ্রাম) স্বর্ণের দাম ৪ হাজার ৪৫ ডলারের মধ্যে ওঠানামা করছে। এদিন যুক্তরাষ্ট্রে ২২ ক্যারেট প্রতি ভরির দাম বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ লাখ ৬৫ হাজার ৩৯০ টাকা ছিল। আর স্পট মার্কেটে প্রতি আউন্স সোনার দাম ৩ হাজার ৬৪২ ডলারের মধ্যে ওঠানামা করেছে।
পাশের দেশ ভারতে ২২ ক্যারেট প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ছিল ১ লাখ ৬৩ হাজার টাকা। এ ছাড়া পাকিস্তানে প্রতি ভরির দাম ১ লাখ ৪৫ হাজার ৫০০ টাকা, কাতারে প্রতি ভরি ১ লাখ ৬৬ হাজার ৫০ টাকা, মালয়েশিয়ায় তা ১ লাখ ৬৬ হাজার ৩৬০ টাকা, শ্রীলঙ্কায় ১ লাখ ৬৫ হাজার ৬০০ টাকা, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৭০০ এবং সৌদি আরবে প্রতি ভরি ১ লাখ ৬৫ হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
দেশে এক বছরে দাম বেড়েছে ৮৫ শতাংশ: দেশে গত বছরের ২৭ এপ্রিল ২২ ক্যারেট প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ছিল প্রায় ১ লাখ ১৩ হাজার টাকা। গত এক বছরে বেশ কয়েকবার উত্থান-পতন হয়েছে দামের। তবে যতবার দাম কমেছে, অর্থাৎ যে পরিমাণ কমেছে, তার চেয়ে বেশি বেড়েছে। দেখা গেছে, দুই দফায় ৫ হাজার টাকা বাড়ার পর কমেছে এক বা দেড় হাজার টাকা। এভাবে গত এক বছরে দাম বেড়ে এখন ২ লাখ ৯ হাজার ১০০ টাকায় উঠেছে। এ হিসাবে, এক বছরে প্রতি ভরিতে ৯৬ হাজার ১০০ টাকা বা ৮৫ শতাংশ দাম বেড়েছে।
মন্তব্য করুন