জাতিসংঘের নির্দেশনায় প্রতি বছর ১৯ আগস্ট সারা বিশ্বে উদ্যাপন হয় - বিশ্ব মানবতা দিবস। যারা চরম আত্মত্যাগ করে, মানবসেবায় ব্রতী হয়েছেন, যারা মানবকল্যাণে, মানবের উন্নতি সাধনে নিজেদের জীবন উত্সর্গ করেছেন জাতিসংঘের ঘোষণা অনুসারে তাদের উদ্দেশ্যে বিশ্বজুড়ে অত্যন্ত শ্রদ্ধায় পালিত হয় দিনটি।
সেরগিও ভিয়েরা দ মেলো ব্রাজিলের জাতিসংঘের কূটনীতিক এবং ৩৪ বৎসরেরও বেশি সময় ধরে মানবিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন। ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে রাষ্ট্রপুঞ্জের পক্ষ থেকে তিনি আরও একুশ জন সহকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইরাকে বাগদাদে গিয়েছিলেন। সেখানে বিরূপ পরিস্থিতিতে বোমা হামলায় মৃত্যু হয় তাদের। কিন্তু তার এই চরমতম পরিস্থিতির আগে প্রায় তিরিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে যারা যুদ্ধে সব হারিয়েছেন, সেই সব সর্বহারা মানুষের পাশে নিঃস্বার্থভাবে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন তিনি। কোনও কিছুই তাকে তার ব্রত থেকে টলাতে পারেনি।
তার সেই মহান ব্রত যাতে থমকে না যায়, সে জন্য গঠিত হয়েছে সেরগিও ভিয়েরা দ মেলো ফাউন্ডেশন। তাদের উদ্যোগে এবং ফ্রান্স, সুইত্জারল্যান্ড, জাপান এবং ব্রাজিলের মতো সদস্য দেশের সহায়তায় সেরগিও ভিয়েরা দ মেলো ও তার সহকর্মীদের প্রয়াণ দিবসটিকে জাতিসংঘ ২০০৮ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসের A/63/L.49 নম্বর সিদ্ধান্ত অনুসারে "বিশ্ব মানবতা দিবস" হিসেবে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে এবং ২০০৯ খ্রিস্টাব্দের ১৯ আগস্ট প্রথম বিশ্ব মানবতা দিবস পালিত হয়। সে অনুযায়ী প্রতি বছর বিভিন্ন ভাবনায় তথা প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে সারা বিশ্বে সদস্যদেশগুলো বিশ্ব মানবতা দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় উদ্যাপন করে আসছে।
সারা বিশ্বে কমবেশি তেরো কোটি মানুষ কেবল মানবিক সহায়তার ওপর ভর করে বেঁচে আছে। এদের যদি এক সঙ্গে দলবদ্ধ করে পৃথিবীর কোনো স্থানে আশ্রয় দেওয়া হয়, তাহলে সেটি পৃথিবীর দশম জনবহুল দেশ হিসেবে পরিগণিত হবে। যুদ্ধ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং তীব্র অরক্ষিত অবস্থার মধ্যে বসবাসকারী এমন অসহায় মানুষের জীবনে প্রয়োজন সেরগিও ভিয়েরা দ মেলো এর মতো মানুষের একটু সাহায্যের হাতের পরশ। প্রতি বছর ভিন্ন ভিন্ন ভাবনায় প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে উদ্যাপিত হলেও আসল লক্ষ্য কিন্তু স্থির। তাই বাঙালি কবি কামিনী রায়ের কথায় আসুক সে শাশ্বত অনুভূতি -
“আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে
আসে নাই কেহ অবনী পরে,
সকলের তরে সকলে আমরা
প্রত্যেকে মোরা পরের তরে”।
মন্তব্য করুন