

আগে পুরুষ মানে ছিল কঠোর, কর্তৃত্বপূর্ণ আর আবেগহীন মানুষ হওয়া। কিন্তু আজকের দিনে পুরুষরা সেই পুরোনো ধ্যানধারণাগুলোকে প্রশ্ন করছে। তারা এখন নিজেদের আরও বাস্তব, আবেগপ্রবণ এবং সহানুভূতিশীলভাবে প্রকাশ করছে।
নিচে এমন ১০টি পুরোনো পুরুষত্বের ধারণা দেওয়া হলো, যেগুলো আধুনিক পুরুষরা আর মানতে চান না।
পুরুষরা কাঁদে না
অনেক বছর ধরে পুরুষদের শেখানো হয়েছে যে কান্না বা দুঃখ প্রকাশ করা দুর্বলতার লক্ষণ বা মেয়েদের চরিত্র। কিন্তু অনুভূতি চেপে রাখা মানসিক চাপ, রাগ এবং একাকিত্ব বাড়ায়। এখন অনেক পুরুষই তা বোঝেন যে কান্না দুর্বলতা নয় বরং এটা মন হালকা করার এবং অন্যের সঙ্গে সত্যিকারের সংযোগ গড়ার একটি উপায়।
আসল পুরুষ মানে কঠিন আর শক্ত
আগে মনে করা হতো পুরুষদের সবসময় কঠোর, আক্রমণাত্মক এবং অটল হতে হবে। কিন্তু এই ধারণা মানুষকে আবেগ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয় এবং মানসিকভাবে ক্ষতি করে। এখন পুরুষরা জানেন সহানুভূতি, নমনীয়তা আর আবেগ বোঝার ক্ষমতাই আসল শক্তি।
পুরুষদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব থাকা উচিত নয়
আগে বলা হতো, পুরুষদের মধ্যে আবেগপূর্ণ বন্ধন থাকা মানায় না। এর ফলে আজ অনেক পুরুষের কাছের বন্ধু নেই, তারা একাকিত্বে ভোগেন। এখন এই ধারণা বদলাচ্ছে। পুরুষরা খোলামেলা ও আন্তরিক বন্ধুত্ব গড়ছেন, যা তাদের মানসিকভাবে আরও ভালো রাখছে।
পুরুষ মানেই সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী
আগে বলা হতো, সংসারের ভরসা শুধু পুরুষ। কিন্তু এখন পরিবার মানে পার্টনারশিপ। অর্থনৈতিক দায়িত্ব ভাগ করে নেওয়া, ঘরের কাজে অংশ নেওয়া এবং মানসিক সহায়তা দেওয়াই এখন শক্তি ও ভালোবাসার চিহ্ন।
পুরুষদের মানসিক সহায়তা লাগে না
এই ধারণা যে, সাহায্য চাওয়া দুর্বলতার নিদর্শন, বহু পুরুষকে নীরবে কষ্ট পেতে বাধ্য করেছে। এখন পুরুষরা বুঝছেন, বন্ধুর সঙ্গে কথা বলা, কাউন্সেলরের সাহায্য নেওয়া বা পরিবারের সঙ্গে মনের কথা ভাগ করা—এসবই সাহসিকতার কাজ এবং মানসিক সুস্থতার জন্য দরকারি।
পুরুষদের আয় সবসময় নারীদের চেয়ে বেশি হতে হবে
আগে পুরুষদের মান নির্ধারণ হতো তাদের বেতনের ওপর। কিন্তু এই ধারণা অপ্রয়োজনীয় চাপ তৈরি করেছে এবং লিঙ্গ সমতার পথে বাধা হয়েছে। এখন অনেক নারী সমান বা বেশি আয় করছেন, এবং অনেক দম্পতি সমানভাবে দায়িত্ব ভাগ করছেন। আজকের পুরুষত্ব মানে অর্থ নয়, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সমতা।
আলফা পুরুষ মানেই নেতা হতে হবে
আগে মনে করা হতো, পুরুষদের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কিন্তু এখন নেতৃত্ব মানে কর্তৃত্ব নয়, বরং সহযোগিতা, শ্রদ্ধা এবং অন্যদের উন্নতিতে সাহায্য করা। আধুনিক পুরুষরা বুঝেছেন, নেতৃত্ব মানে ক্ষমতা নয়, বিশ্বাস গড়া।
পুরুষরা নিজের যত্ন নেবে না
একসময় নিজের যত্ন নেওয়া মানে ছিল ‘মেয়েলি’ আচরণ। এখন সেই ধারণা বদলেছে। আজ পুরুষরা শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার যত্ন নিচ্ছেন—নিজের যত্ন নেওয়াকে দুর্বলতা নয়, বরং শক্তির অংশ হিসেবে দেখছেন।
পুরুষকে তার সঙ্গীর চেয়ে লম্বা বা বড় হতে হবে
আগে মনে করা হতো, পুরুষের উচ্চতা বা গঠনই তার পুরুষত্বের মাপকাঠি। কিন্তু আজকের দম্পতিরা জানেন, ভালোবাসা বা শ্রদ্ধা সেন্টিমিটারে মাপা যায় না। আত্মবিশ্বাসই আসল আকর্ষণ, উচ্চতা নয়।
সম্পর্কে প্রথম পদক্ষেপ নিতে হবে পুরুষকেই
আগে প্রেম বা সম্পর্ক শুরু করার দায়িত্ব সবসময় পুরুষদের ওপর চাপানো হতো। এতে অযথা চাপ তৈরি হতো এবং সম্পর্ককে একঘেয়ে নিয়মে বেঁধে ফেলত। এখন অনেক নারীও প্রথম পদক্ষেপ নিচ্ছেন আর সম্পর্ক গড়ছে পারস্পরিক আগ্রহ ও আন্তরিকতার ওপর।
পুরুষত্ব মানে কঠিন বা চুপচাপ থাকা নয়। এটি আসলে নিজের সত্যিকারের সত্তাকে গ্রহণ করা। সততা, ভারসাম্য এবং সহানুভূতির সঙ্গে জীবনযাপন করা। যারা আজকের দিনে পুরুষত্বকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করছেন, তারা শুধু নিজেদের নয়, সমাজকেও আরও সুস্থ ও মানবিক করে তুলছেন।
সূত্র : ব্রাইট সাইড
মন্তব্য করুন