কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৫ জুলাই ২০২৩, ০৭:০৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ভূমি ও সম্পত্তিতে সমঅধিকার প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ আওয়াজ তুলতে হবে

সেমিনারে উপস্থিত অতিথিরা। ছবি : কালবেলা
সেমিনারে উপস্থিত অতিথিরা। ছবি : কালবেলা

‘সংবিধান, আইন, নীতিমালা ও আন্তর্জাতিক চুক্তির আলোকে ভূমি ও সম্পত্তিতে নারী এবং ট্রান্সজেন্ডারদের অধিকার’ শীর্ষক এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে আজ।

মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) সকালে এএলআরডি ও স্ট্যান্ড ফর হার ল্যান্ড ক্যাম্পেইনের উদ্যোগে সিরডাপ মিলনায়তনে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এএলআরডির উপ নির্বাহী পরিচালক এবং স্ট্যান্ড ফর হার ল্যান্ড ক্যাম্পেইনের কান্ট্রি কোঅর্ডিনেটর রওশন জাহান মনি। সেমিনারে বক্তারা নারীর ভূমিসহ সম্পদে সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং তাদের সামাজিক মর্যাদা ও নিরাপত্তার সুরক্ষায় একযোগে কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

এএলআরডির চেয়ারপারসন খুশী কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য শিরীন আখতার এম.পি। এতে পান্যাল আলোচনায় অংশ নেন-নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম, রাঙামাটি চাকমা সার্কেলের উপদেষ্টা রাণী য়েন য়েন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আইনুন নাহার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন ও অধ্যাপক ড. সীমা জামান এবং এএলআরডি’র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা। তাছাড়া বিভিন্ন জেলা থেকে আগত এনজিও প্রতিনিধি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত থেকে তাদের মতামত প্রদান করেন।

প্রবন্ধ উপস্থাপক তার উপস্থাপনায় নারীর ভূমি ও কৃষির অধিকার, খাসজমির অধিকার, ভূমি কেন্দ্রিক নারীর স্বাক্ষরতার অবস্থা, উইমেন পীচ এ্যান্ড সিকিউরিটি ইস্যুতে রাষষ্ট্রীয় অঙ্গিকারের বাস্তবায়ন, নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি রক্ষায় রাষ্ট্রের অবহেলা ইত্যাদি বিষয়গুলোর প্রতি সকলের দৃষ্টি আকর্ষন করেন এবং তার প্রতিকারের দাবি জানান। এছাড়াও তিনি সুনির্দিস্টভাবে ৩০টি সুপারিশ তুলে ধরেন।

মহিলা পরিষদের সভানেত্রী ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, আইন, বিবাহ-তালাক, সন্তানের অভিভাবকত্ব-এই তিনটি বিষয়ের ক্ষেত্রে আমরা অভিন্ন পারিবারিক আইনের কথা বলেছি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত এ বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়নি। তিনি আরো বলেন এই আইন হলে নারীর ভূমি অধিকার প্রতিষ্ঠায় আরো এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।

নাসিমুন আরা হক বলেন, নারী ও ট্রান্সজেন্ডারের ভূমি আন্দোলনের বিষয়টি শুধু আলোচনায় আনলে হবে না। এই আন্দোলনে সুধী সমাজ এবং সর্বস্তরের মানুষকে যুক্ত করতে হবে।

রাণী য়েন য়েন বলেন, আদিবাসী সমাজে পার্বত্য চট্টগ্রামে ১১ টি জাতি এবং সমতলে ৪৪ টি জাতি আছে। প্রত্যেকটি জাতির আলাদা আলাদা ভূমি বন্টনের নিয়ম আছে, বৈষম্যও আছে। আদিবাসী সমাজের ক্ষেত্রে অভিন্ন পারিবারিক আইন দরকার আছে। কিন্তু সেটি করতে গিয়ে আদিবাসীদের আত্ম নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা খর্ব হবে কিনা- এ বিষয়টিকে নিবিড়ভাবে চিন্তা করা দরকার।

ড. আইনুন নাহার বলেন, বিশ্বব্যাপী নারীর ভূমির অধিকারের ক্ষেত্র অসম। ভূমিতে নারীর সমঅধিকারের বিষয়টি যেমন বৈশ্বিক, তেমনি অনেক বেশি স্থানিক বিষয়। আমাদের রাষ্ট্র, সমাজ, গণমাধ্যম সবকিছুই কাঠামোবদ্ধ। সেজন্য আমরা বৈচিত্র্যতাকে ধরে রাখতে পারি না। এই কাঠামোগত জায়গায় পরিবর্তন আনতে হবে।

ড. সীমা জামান বলেন, বাংলাদেশ ২০১৩ সালে ট্রান্সজেন্ডারদের স্বীকৃতি দিয়েছে। ট্রান্সজেন্ডারদের সুরক্ষার জন্য আইন প্রণয়ণের প্রক্রিয়া চলমান। ট্রান্সজেন্ডারসহ নারীর উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে বৃহত্তর সামাজিক আন্দোলন দরকার। তৃণমূল থেকে জাতীয় পর্যায়ে যেমন কাজ করা দরকার, তেমনি সরকারের সাথেও কাজ করতে হবে।

শামসুল হুদা বলেন, আমরা ক্ষমতাবান নই। রাষ্ট্রের আইন প্রণয়নের ক্ষমতা আছে, প্রয়োগ করার ক্ষমতা আছে। রাষ্ট্র যেভাবে আইন প্রণয়ন করে, সে প্রক্রিয়াটি বৈষম্যমূলক, নারী বিদ্বেষী, পিতৃতান্ত্রিক, আদিবাসী ও প্রান্তিক মানুষের জন্য বঞ্চনামূলক। এই আইন প্রণয়নের প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছ ও অন্তর্ভূক্তিমূলক হতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিরীন আখতার বলেন, নারীর সমঅধিকার আদায়ের জন্য রাষ্ট্রের সাথে দর কষাকষির জায়গাটায় আমাদের অবস্থানটা প্রস্তুত করতে হবে। আদিবাসীদের আত্ম নিয়ন্ত্রণের অধিকার, নারীর সম-অধিকার, নারীর অধিকার সমস্ত বিষয়কে বিবেচনায় নিয়ে নারীদের সামগ্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে হবে। যত বেশি আমরা আমাদের অধিকারের বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ আওয়াজ তুলতে পারবো, কথা বলতে পারবো, ততবেশি আমরা আমাদের অধিকার আদায়ের পথে এগিয়ে যেতে পারবো। লড়াইয়ের জায়গাগুলো চিহ্নিত করতে হবে। সংগঠনসমূহকে শক্তিশালী করতে হবে, লড়াইকে সুনির্দিষ্ট করতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে খুশী কবির বলেন, উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে নারী ও ট্রান্সজেন্ডার জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ের জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, সংগঠিত হতে হবে। বৃহত্তর সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

মুক্ত আলোচনা পর্বে অংশ নেয় জয়া হিজড়া, জাহানারা বেগম, মুসকান হিজড়া, ড: ফরিদা পারভিন কেয়া, সারা মারান্ডি, সুধা সরকার, সুলেখা ম্রং প্রমুখ তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির খোঁজ নিলেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী

নায়িকা মাহির পছন্দ ভাতের সঙ্গে শুঁটকি

কুড়িগ্রামে স্বেচ্ছাসেবক দলের ২ নেতা বহিষ্কার

বাংলাদেশের কাছে হেরে ‘হাস্যকর’ যুক্তি দেখাল ভারত অধিনায়ক

দেশে কত দামে স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে আজ

ভেনেজুয়েলার আকাশসীমায় সতর্কতা জারি করল যুক্তরাষ্ট্র

আজও ১৪ ডিগ্রির ঘরে তেঁতুলিয়ার তাপমাত্রা 

ভারতকে হারানোর পর ফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ কারা জানা গেল

অলংকারে মুগ্ধ দর্শক

ডে কেয়ার সুবিধাসহ চাকরি দিচ্ছে ব্র্যাক

১০

টিভিতে আজকের যত খেলা

১১

কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প

১২

কবরস্থানের জমি নিয়ে বিরোধ, সংঘর্ষে আহত ১৩ 

১৩

প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে আলোচনায়

১৪

স্কুলে হামলা চালিয়ে ২২৭ শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে অপহরণ

১৫

আজ যেমন থাকবে ঢাকার আবহাওয়া

১৬

রাজধানীতে আজ কোথায় কী

১৭

ঢাকা পৌঁছেছেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী

১৮

শীতে ত্বকের যত্ন ও চর্মরোগ থেকে পরিত্রাণের উপায়

১৯

গাজায় যুদ্ধবিরতির পর ৬৭ ফিলিস্তিনি শিশু নিহত: জাতিসংঘ

২০
X