বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫, ১৮ আষাঢ় ১৪৩২
কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০২৪, ০২:৫৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ব্যবসায়ীদের ধরে নিয়ে টাকা আদায় করতেন ডিবি হারুন

ডিএমপির সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ। ছবি : সংগৃহীত
ডিএমপির সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ। ছবি : সংগৃহীত

বহুল আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ। বাংলাদেশ পুলিশের ডিআইজি পদমর্যাদার এই কর্মকর্তা সর্বশেষ ছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি)। সরকারি স্কেল অনুযায়ী তৃতীয় গ্রেডের চাকরিজীবী হিসেবে সর্বসাকুল্যে বেতন ৮০ হাজার টাকারও কম। অথচ সীমাহীন দুর্নীতির মাধ্যমে নামে-বেনামে গড়ে তুলেছেন কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদ। হারুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তিনি ব্যবসায়ীদের ধরে নিয়ে গিয়ে সাজানো মামলায় গ্রেপ্তার দেখাতেন এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা আদায় করতেন ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হারুন যখন যেখানে চাকরি করেছেন, সেখানেই জড়িয়েছেন নানা অপকর্মে। গাজীপুরের এসপি থাকাকালে ২০১৫ সালের ১৯ নভেম্বর গভীর রাতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক সংলগ্ন এমসি বাজারের পাশে তাহের অ্যান্ড সন্স ফিলিং স্টেশনের ৭ কোটি টাকার ১ বিঘা জমি একটি গ্রুপকে দখল করে দেন হারুন। এ ছাড়া গাজীপুরে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা রাকিব সরকারকে সাড়ে ১৭ শতক জমি দখল নিতে পুলিশি সহায়তা দেন হারুন। ২০১৬ সালের ৯ নভেম্বর গাজীপুর মহানগরের মাধবপুর এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা কফিল উদ্দিনের দুই বিঘা জমি একই কায়দায় দখলে নেওয়া হয়। গাজীপুরের ১০০ কোটি টাকা মূল্যের একখণ্ড জমি আমমোক্তারনামা জোর করে রেজিস্ট্রি করে দিতে সহযোগিতা করার অভিযোগে হারুনসহ আরও কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়। গাজীপুরের দায়িত্বে থাকাকালে হারুনের বিরুদ্ধে সব মিলিয়ে তিন শতাধিক মানুষকে হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রায় সবার কাছ থেকেই তিনি ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন। যারা টাকা দেননি তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছেন।

হারুনের নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে অনেকেই সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের কাছে অভিযোগ করেন। তিনি কোনো প্রতিকার করতে পারেননি। পরে তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করেন।

গাজীপুর থেকে নারায়ণগঞ্জে বদলি করা হলে সেখানে নানা অপকর্মে জড়ান হারুন। ওই সময় ১৪ লাখ করে টাকা নিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে ১৮ জন পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগের প্রমাণ পায় পুলিশ সদর দপ্তর। পরে ওই কনস্টেবলরা চাকরি হারালেও হারুনের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

ওই সময় বেশ কয়েকজন শিল্পপতিকে তুলে নিয়ে সাজানো মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা আদায়ের অভিযোগ ছিল হারুনের বিরুদ্ধে। দাবি অনুযায়ী চাঁদা না পেয়ে পারটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ হাসেমের ছেলে, আম্বার গ্রুপের চেয়ারম্যান শওকত আজিজের স্ত্রী-পুত্রকে তুলে নিয়ে যান হারুন। ওই ঘটনায় তাকে নারায়ণগঞ্জ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।

পাওনা ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা চাইতে গিয়ে হারুনের রোষানলে পড়েন উত্তরার জাতীয় পার্টি নেতা আলমগীর কবির। জাহাঙ্গীরের (হারুনের কথিত মামা) মাধ্যমে হারুনের দখল করা তিনটি প্লটে মাটি ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করেন আলমগীর কবির। এ কাজের জন্য ৪০ লাখ টাকা পরিশোধ করলেও ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা বাকি রয়ে যায়। সেই টাকা চাইতে যাওয়ায় ডিবি দিয়ে আলমগীর কবিরসহ তার তিন সহযোগীকে তুলে নিয়ে যান হারুন। পাঁচ দিন ডিবি অফিসে আটকে রেখে চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন। এরপর কোনো টাকা পাবে না মর্মে লিখিত দেওয়ার পর আলমগীর কবির ও তার সহযোগীদের চাঁদাবাজির মামলায় আদালতে পাঠানো হয়।

যোগাযোগ করা হলে হারুনের দখল প্রক্রিয়ার বর্ণনা দিয়ে আলমগীর কবির কালবেলাকে বলেন, ‘৩ নম্বর সেক্টরের ৯ নম্বর রোডের ১৪ নম্বর বাসায় দীর্ঘদিন সস্ত্রীক বসবাস করতেন ৭৫ বছর বয়সী এনায়েত উল্লাহ খোরাসানি। এক দিন সকালে হারুন নিজে গাড়ি নিয়ে এসে ওই প্লটটি দখল করেন। ওই সময় আমরা সঙ্গে ছিলাম। বয়স্ক স্বামী-স্ত্রীকে মালপত্রসহ কাভার্ডভ্যানে তুলে সদরঘাট নিয়ে ফেলে আসা হয়।’

জানতে চাইলে ৩ নম্বর সেক্টরের ৯ নম্বর রোডের ১৪ নম্বর প্লটের প্রকৃত মালিক এনায়েত উল্লাহ খোরাসানির ছেলে মোহাম্মদ ইব্রাহিম কালবেলাকে বলেন, ‘১৯৭৮ সালে ওই প্লটটা আমার বাবা ক্রয় করেন। ওখানেই আমরা ছিলাম। পরে আমি ব্যবসায়িক কারণে পল্টনে থাকতে শুরু করি। তখন ওরা বিভিন্ন সময়ে বাসার মধ্যে ইট মারত, বিভিন্নভাবে হ্যারেজ করত। একপর্যায়ে বাবা মারা গেলে মা ওখানে একাই থাকত। একদিন রাতে স্থানীয় নাইম কমিশনার আর হারুন উপস্থিত থেকে আমার মাকে বের করে দেয়। জোর করে ওই রাতে আমার মায়ের কাছ থেকে স্টাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে প্লট লিখে নিয়ে কাভার্ডভ্যানে করে মালপত্রসহ সব রাতের মধ্যে ফেলে দেয়।’

আব্দুল আলিম নামে উত্তরার আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘উত্তরার অধিকাংশ প্লট হারুনের দখল করা। যেই প্লটটি তার পছন্দ হতো, তার মালিককে ডিবি অফিসে তুলে নিয়ে যেতেন। এরপর বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে জমি দখল করতেন।’

ডিজে সানি নামে থাইল্যান্ড প্রবাসী এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমাকে ডিবি অফিসে ডেকে নিয়ে হারুন ২০ লাখ টাকা চায়। পরে আমি মামলার ভয়ে ১০ লাখ টাকা দিই। আমার কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা নিয়েও আমার বিরুদ্ধে এক নারীকে দিয়ে মিথ্যা মামলা দেওয়ায়। সেই মামলায় আমি ২১ দিন জেল খেটেছি।’

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে পুলিশ কর্মকর্তা হারুন অর রশীদের ব্যক্তিগত নম্বরে টানা কয়েক দিন বারবার ফোন করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মধ্যরাতে বরখাস্ত চট্রগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার

‘একসঙ্গে সমুদ্রে নেমে তো গোসল করতে পারব না’

জুলাই যোদ্ধার তালিকায় এক ব্যক্তির নাম ২ জায়গায়

বিএনপির অনুষ্ঠানে অপ্রীতিকর ঘটনায় মির্জা ফখরুলের প্রতিবাদ

রাজধানীতে শ্রমজীবী মানুষের মাঝে লায়ন্স ক্লাবের খাবার বিতরণ

জামায়াত-গণঅধিকার পরিষদের মতবিনিময় / নির্বাচনী জোট গঠনে একমত

উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎ, মাদ্রাসার সুপার কারাগারে

তারেক রহমান নেতৃত্ব না দিলে জুলাই আন্দোলন সফল হতো না : মুরাদ

চট্টগ্রাম নগরীতে ইউপিডিএফ সদস্য গ্রেপ্তার

‘প্রেমে ব্যর্থ হলে বাথরুম পরিষ্কার করি’

১০

মেয়ের জন্য চিপস আনতে গিয়ে প্রাণ হারান মোবারক

১১

১৯৭৩ সালের পর সবচেয়ে বড় সংকটে মার্কিন ডলার

১২

তারেক রহমান জুলাই বিপ্লবের মূল নেতৃত্বে ছিলেন : অধ্যাপক মোর্শেদ

১৩

তারা ভেবেছে, নারীঘটিত বিষয় নিয়ে প্রচারে আমার ভোট কমে যাবে : আমির হামজা

১৪

পিআর পদ্ধতি নিয়ে বিএনপিকে চরমোনাই পীরের কড়া বার্তা

১৫

নির্বাচন নিয়ে মানুষের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে : মান্না

১৬

ইরানের পরমাণু বিজ্ঞানীদের যুগান্তকারী আবিষ্কার

১৭

৪ মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করল পূর্বাচল আর্মি ক্যাম্পের সেনারা

১৮

চুক্তি নবায়নের পর মোনাকোয় ধারে গেলেন বার্সা তারকা ফাতি

১৯

উড্ডয়নের ৭ মিনিটেই মাটিতে আছড়ে পড়ল বিমান, সব আরোহী নিহত

২০
X