স্বৈরাচারের আমলে দেশের ব্যাংক ও পুঁজিবাজারেও লুটপাট হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
রোববার (২৫ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, লুটপাট ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করা ব্যাংকিং খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য ইতোমধ্যে ব্যাংকিং কমিশন গঠন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এ খাতে দক্ষ জনবল নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা স্থাপন, ব্যবসায় সহায়ক পরিবেশ তৈরি এবং জনগণের জীবনযাপন সহজ করতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার উদ্যোগ সচল করেছে।
তিনি জানান, আর্থিক খাতের সার্বিক পরিস্থিতি ও সংস্কারের জন্য একটি রূপকল্প তৈরি করা হবে, যা দ্রুত জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে। পুঁজিবাজার ও পরিবহন খাতসহ যেসব ক্ষেত্রে চরম বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে তা নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বিচার বিভাগকে দুর্নীতি ও দলীয় প্রভাবমুক্ত রাখতে কাজ শুরু হয়েছে। একটি সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও জবাদিহিতা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বর্তমান সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান গ্রহণ করেছে। আমাদের সব উপদেষ্টা দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের সম্পদের বিবরণ প্রকাশ করবেন। পর্যায়ক্রমে এটি সব সরকারি কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রেও নিয়মিত এবং বাধ্যতামূলক করা হবে।
তিনি বলেন, দুর্নীতি ও সম্পদ পাচারের বিচার করা হবে। তথ্যের অবাধ প্রবাহ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে। ফ্যাসিবাদি সরকার গণমাধ্যমের উপরও দলীয় বোঝা চাপিয়েছিল, জনগণের তথ্যের অধিকার নিশ্চিত করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মতপ্রকাশে বাধাগ্রস্ত করে এমন সব আইনের নিপীড়নমূলক ধারা সংশোধন করা হবে। ইতোমধ্যে এ ধরনের আইন চিহ্নিত করে কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
তিনি আরও জানান, শুধু জিডিপি একটি দেশের উন্নয়নের মাপকাঠি হতে পারে না। জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করতে এবং আগামী প্রজন্মের জন্য সুস্থ একটি পৃথিবী রেখে যেতে কার্বন নিঃস্বরণ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার বিকল্প নেই। আমাদের সরকার পরিবেশ ও জলবায়ু রক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবে। এই কার্যক্রমে তরুণ প্রজন্মকে যুক্ত করা হবে।
বিদেশি সাংবাদিকদের এ দেশে আসার যে অলিখিত নিশেধাজ্ঞা ছিল, তা আমরা ইতোমধ্যে তুলে নিয়েছি। তাদের দ্রুত ভিসা দিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও ভাষণে উল্লেখ করেন মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, কৃষকের স্বার্থ যেন সুরক্ষিত থাকে। কৃষক যেন তার উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য পায় তা নিশ্চিত করা হবে। প্রবাসী শ্রমিকরা যেভাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে সমর্থন দিয়েছে মুক্তিকামী জনগণ তা কৃতজ্ঞচিত্রে স্মরণ করে। তাদের জন্য সব পর্যায়ে সম্মানজনক আচরণ নিশ্চিত করা হবে।
মন্তব্য করুন