কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ৩১ আগস্ট ২০২৪, ০৬:০৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

প্রধান উপদেষ্টাকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ১৩ প্রস্তাবনা

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের লোগো। কালবেলা গ্রাফিক্স
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের লোগো। কালবেলা গ্রাফিক্স

দেশের স্বার্থে প্রয়োজনীয় সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করতে অন্তর্রবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বরাবর কিছু প্রস্তাবনা দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।

শনিবার (৩১ আগস্ট) ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিমের বরাতে প্রেরিত এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়, বর্তমান অন্তর্রবর্তী সরকার যেহেতু একটি গণবিপ্লবের মধ্য দিয়ে জনগণের অভিপ্রায়ে গঠিত হয়েছে এবং এই সরকারের পক্ষে যেহেতু রাজনৈতিক ঐকমত্য রয়েছে। অতএব দেশকে এবং দেশের রাজনীতিকে সঠিক ধারায় নিয়ে আসার ব্যাপক সুযোগ তৈরি হয়েছে।

বার্তাটিতে আরও বলা হয়, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনে করে অন্তর্রবর্তী সরকার যদি প্রাপ্ত সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দেশের স্বার্থে প্রয়োজনীয় সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ না করে তাহলে হাজারো ছাত্র-জনতার রক্তদান ব্যর্থ হবে।

বার্তাটিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সম্মানিত উপদেষ্টামন্ডলী বরাবর কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরেছে । প্রস্তাবনাগুলো :

১) বিদ্যমান সংবিধান নিয়ে নানাবিধ বিতর্ক আছে। তাছাড়া বিগত দিনের ক্ষমতাসীনরা দলীয় স্বার্থে সংবিধানে নানারকম পরিবর্তন করেছে। এ জন্য বর্তমান সংবিধানকে বাতিল করে একটি সাংবিধানিক কমিশন গঠন করে নতুন সংবিধানের খসড়া তৈরি করা এবং গণভোটের মাধ্যমে তা অনুমোদন করা।

২) গ্রহণযোগ্য তদন্ত কমিশন ও স্বতন্ত্র ট্রাইব্যুনাল গঠন করে জুলাই গণহত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে। একই সঙ্গে গত ১৬ বছরে সংগঠিত সব রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক হত্যাযজ্ঞ, গণহত্যা, গুম ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার করতে হবে। এক্ষেত্রে যেসব ব্যক্তি বা সংগঠন দোষী সাব্যস্ত হবে, তাদের রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে নিষিদ্ধ করতে হবে।

৩) তদন্ত সাপেক্ষে বিগত বছরের সব দুর্নীতিবাজ ও বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের সব সম্পত্তি ক্রোক করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করতে হবে এবং বিদেশে পাচারকৃত টাকা ফেরত আনার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বিগত বছরে যারা ক্ষমতায় ছিলেন তাদের সম্পদের হিসাব নিতে হবে। সব দুর্নীতি ও টাকা পাচারের শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে।

৪) আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন, বিচার বিভাগসহ প্রজাতন্ত্রের যেসব কর্মচারী আইন, সংবিধান, শপথ লঙ্ঘন করে অপেশাদার আচরণ করেছেন তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।

৫) পতিত ফ্যাসিস্ট ও স্বৈরাচার আওয়ামী সরকার নির্বাচন কমিশন এবং প্রশাসনকে ব্যবহার করে ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি ৩টি ভুয়া জাতীয় নির্বাচন করেছে। এসব একতরফা, ভুয়া, পাতানো ও ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে তারা তাদের অবৈধ ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করেছে। যারা তাদের এসব অবৈধ ও প্রহসনের নির্বাচনে সহযোগিতা করে আওয়ামী লীগকে অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকার সুযোগ করে দিয়েছে তারাও সমান অপরাধী। অতএব, ৩টি অবৈধ ও প্রহসনের নির্বাচন পরিচালনাকারী ৩টি নির্বাচন কমিশন এবং প্রশাসনের যেসব কর্মকর্তা তাদের অবৈধ কাজের কুশিলব ছিল, তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে কেউ অবৈধ নির্বাচনের সাহস না করে।

৬) বর্তমান নির্বাচন কমিশন বাতিল করে নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করতে হবে এবং অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন (চজ) পদ্ধতি চালু করতে হবে।

৭) নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, বিচার বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গণমাধ্যম এই ৫টি ক্ষেত্রে আমূল এবং ব্যাপক সংস্কারের কথা বলেছেন মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা। আমরাও মনে করি এসব প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন। কারণ বিগত সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকতে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে ফেলেছে। অন্তর্বর্তী সরকার এসব প্রতিষ্ঠানগুলো কতদিনের মধ্যে সংস্কার সম্পন্ন করবে তা নির্ধারিত হওয়া প্রয়োজন।

অতএব, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রত্যাশা করে, অন্তর্বর্তী সরকার তাদের সংস্কার কার্যক্রমের ধরন ও প্রক্রিয়া কী হবে এবং কতদিনের মধ্যে সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করবে, তা অতিদ্রুত প্রকাশ করবে এবং জাতীয় নির্বাচনের একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করবে।

৮) আওয়ামী দুঃশাসনে বিগত ১৬ বছরে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এদেশের সাধারণ শিক্ষাখাতের মান ও নৈতিকতা। এই ক্ষতি দ্রুত সময়ের মধ্যে কাটিয়ে উঠার লক্ষ্যে দেশপ্রেমিক শিক্ষাবিদ ও উলামায়ে কেরামের সমন্বয়ে একটি জাতীয় শিক্ষাকমিশন গঠন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

৯) ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর ঢালাওভাবে রাতারাতি যে সব নিয়োগ, বদলি ও অব্যাহতি দেয়া হয়েছে এসব বিশ্লেষণের জন্য একটি কমিশন গঠন করতে হবে।

১০) ঢালাওভাবে হয়রানীমূলক এবং মিথ্যা মামলা করা যাবে না। ইতোমধ্যে যদি কোনো নিরপরাধ ব্যক্তির বিরুদ্ধে শুধু রাজনৈতিক কারণে মিথ্যা মামলা হয়ে থাকে তা প্রত্যাহার করতে হবে।

১১) দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর চিন্তা-চেতনা ও অনুভূতির বিরুদ্ধে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না।

১২) নতুন করে চাঁদাবাজি, দখলদারি ও হয়রানি কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।

১৩) নব্যচাঁদাবাজ, দখলবাজ, অবৈধ অস্ত্রধারী ও সন্ত্রাসীদের দমন করতে সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্রুত যৌথ অভিযান শুরু করতে হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প কর্মসূচি দিয়ে জবি ছাত্রীসংস্থার আত্মপ্রকাশ

২৮ আগস্ট : আজকের নামাজের সময়সূচি

২০৭ কোটি টাকার ঋণ খেলাপী / আসিফ এপারেলসের এমডিসহ ২ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

শহীদ আলভীর অসুস্থ পিতার পাশে আমিনুল হক

বুজতেছি না এ সরকার কি আমাদের, নাকি কাদের: ইব্রাহীম

কবি নজরুল ছিলেন মুসলিম জাগরণের অগ্রদূত : ডা. ইরান

শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু মঞ্চ ও পোশাক কর্মশালা

এবার চতুর্থ সারির ক্লাবের কাছে হেরে ম্যানইউর বিদায়

ড. মাসুদের প্রচেষ্টায় দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেলো ৩ ইউনিয়নের মানুষ

বিশ্বকাপ দলে সুযোগ না পেয়ে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমাচ্ছেন বাংলাদেশ স্পিনার

১০

রুমিন ফারহানার দুঃখ প্রকাশ

১১

বৃহস্পতিবার প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা

১২

ভারতে নিষিদ্ধ অনলাইন জুয়া, বড় ধাক্কায় আইপিএল ও ভারতীয় ক্রিকেট

১৩

পদক্ষেপ নিলে মনে হয় দেশেই থাকা হবে না : ডিসি মাসুদ

১৪

রাজনৈতিক দলের মতামত নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের সভা

১৫

ডিআরইউতে মঞ্চ ৭১–এর কর্মসূচি প্রত্যাহারের দাবি

১৬

জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব অপরিহার্য: উপদেষ্টা

১৭

কনভেনশন হলে গেরিলা বৈঠকে গ্রেপ্তার শিমুল ৪ দিনের রিমান্ডে

১৮

শাহবাগে এসে ডিএমপি কমিশনারের ‘দুঃখ প্রকাশ’

১৯

ইনকিলাব সম্পাদককে লিগ্যাল নোটিশ পাঠাল ছাত্রশিবির

২০
X