বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়ে আসছে। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে শুরুতে ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে ভোট আয়োজনের কথা বলা হলেও, সেই অবস্থানে এসেছে পরিবর্তন।
সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসসহ দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা এখন আর ডিসেম্বরের নির্দিষ্ট সময়সীমা উল্লেখ করছেন না। বরং তারা এখন বলছেন, আগামী বছর জুনের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
জাতীয় নির্বাচন কবে হবে- এই প্রশ্ন ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে যেমন আলোচনার ঝড়, তেমনি ভেতরে ভেতরে চলছে কৌশলগত হিসাব-নিকাশ। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাথায় রেখেই আগামী বছর জুনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা করছে সরকার।
তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, রমজান মাস, মাধ্যমিক (এসএসসি) এবং উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষার মতো তিনটি জনগুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম রয়েছে ওই সময়ের মধ্যে। এসব ইভেন্ট নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে হলে, ভোট আয়োজন করতে হবে রমজানের আগে কিংবা ঠিক পরেই।
এদিকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা মনে করছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের লক্ষ্য ছিল- রাষ্ট্রব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় সংস্কার, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া শুরু এবং জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি একইসঙ্গে এগিয়ে নেওয়া। কিন্তু দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ১০ মাসে এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রেই উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি।
তাদের অভিযোগ, সময় চলে গেলেও কাঙ্ক্ষিত কার্যক্রম দৃশ্যমান নয়। এ অবস্থায় তারা নির্বাচন আরও পিছিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন এবং তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
বিরাজমান পরিস্থিতিতে দলের ভাবনা সম্পর্কে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, রোডম্যাপ ঘোষণা না করে সরকার যে টালবাহানা করছে, এ বিষয়টাকে আমরা ভালোভাবে দেখছি না। জনগণও ভালোভাবে নিচ্ছে না।
জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এখনো কোনো সমঝোতা না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করছেন বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে, আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানে রাজনৈতিক সংস্কৃতির অভাবের দিকটি সামনে আনছেন তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের কোনো উল্লেখযোগ্য রেকর্ড নেই বললেই চলে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে মনে হচ্ছে, হয়তো এবারও সেই ঐতিহ্য বজায় থাকবে। আলোচনার মাধ্যমে কোনো সমাধানে পৌঁছানো যাবে না।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ ধরনের অচলাবস্থা চলতে থাকলে নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বাড়তে পারে, যা দেশের সামগ্রিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ।
মন্তব্য করুন