ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের দুস্থ ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে হাফেজ্জী চ্যারিটেবল সোসাইটি অব বাংলাদেশ। প্রতি বছরের মতো এবারও সংস্থাটি ব্যাপক পরিসরে কোরবানির আয়োজন করে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। তবে এবারের আয়োজনে ছিল এক ব্যতিক্রমী মানবিক বিস্তার—শুধু বাংলাদেশ নয়, যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার মাটিতেও পৌঁছেছে কোরবানির বার্তা।
এ বছর সংস্থাটি ঈদের কোরবানির নিয়মে তিন দিনে মোট ১০১টি পশু কোরবানি করে। এর মধ্যে ১০টি কোরবানি সম্পন্ন হয় ফিলিস্তিনের মধ্য গাজায় এবং ৭টি পশু মিসরের রাফাহ সীমান্ত হয়ে আগত ফিলিস্তিনি শরণার্থী পরিবারদের মাঝে বিতরণ করা হয়।
বাংলাদেশে কোরবানিগুলো সম্পন্ন হয় সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, ময়মনসিংহ, পটুয়াখালী, কুড়িগ্রাম, বান্দরবান, নীলফামারীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মাঝে। এছাড়াও এবার বিশেষ উদ্যোগ হিসেবে কোরবানির গোশত বিতরণ করা হয়েছে দেশের হিজড়া জনগোষ্ঠী এবং জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারগুলোর মধ্যেও।
শহীদ পরিবারের সদস্যদের জন্য শুধু গোশতই নয়, ঈদের খুশি ভাগ করে নিতে বিশেষ ঈদসামগ্রীও প্রদান করেছে সংস্থাটি, যাতে ছিল নতুন পোশাক, খাদ্যসামগ্রী ও শিশুদের জন্য উপহার। এই উদ্যোগ শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান এবং মানবতার প্রতি দায়বদ্ধতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিটি কোরবানির স্থানে দায়িত্বরত ব্যক্তিদের নাম, দায়িত্ব ও মোবাইল নম্বর আগেই অনলাইনে প্রকাশ করে সংস্থাটি, যেন দাতারা সরাসরি তথ্য নিতে পারেন ও স্বচ্ছতার নিশ্চয়তা পান। কোরবানির পূর্বেই সংস্থার অফিসিয়াল প্ল্যাটফর্মে পশুর তালিকা, স্থান, সময় এবং দায়িত্বপ্রাপ্তদের তথ্য প্রকাশ করা হয়।
এছাড়া, প্রত্যেক দাতা সদস্যকে তাদের কোরবানির অংশ ভিডিও বা ছবিসহ বুঝিয়ে দেওয়া হয়, যেন তারা নিশ্চিত হতে পারেন যে তাদের আমানত যথাযথভাবে কাজে লাগানো হয়েছে। এই প্রক্রিয়াটি দাতাদের মধ্যে এক ধরনের আস্থা ও স্বচ্ছতার সংস্কৃতি তৈরি করেছে।
হাফেজ্জী চ্যারিটেবল সোসাইটির সকল কার্যক্রম পরিচালিত হয় দেশের শীর্ষস্থানীয় ও বিশ্বস্ত আলেম-উলামাদের দিকনির্দেশনায়। এদের মধ্যে রয়েছেন বেফাক মহাসচিব মুফতি মাহফুজুল হক, চরমোনাই পীর মুফতি রেজাউল করিম, ঢালকা নগর পীর মুফতি জাফর আহমেদ, ড. মাওলানা মুফতি এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী প্রমুখ।
বাংলাদেশে সংস্থাটি দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাসেবা, স্বাবলম্বীকরণ উদ্যোগ, শীতবস্ত্র বিতরণ, নবমুসলিমদের সহায়তা এবং দুর্যোগকালে ত্রাণ বিতরণের মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছে। সরকার নিবন্ধিত এই সংস্থাটির বার্ষিক অডিট ডিভিসি কোড দ্বারা যাচাইকৃত হয়ে থাকে, যা তাদের আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে।
দেশ ও বিদেশের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে হাফেজ্জী চ্যারিটেবল সোসাইটি অব বাংলাদেশ একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে—একটি সত্যিকার অর্থে মানবিক সেবাপরায়ণ প্রতিষ্ঠান।
মন্তব্য করুন